লেখক: মোঃ জাবেদুল ইসলাম
রমনীগঞ্জ, বড়খাতা, হাতীবান্ধা
লালমনিরহাট, বাংলাদেশ।
বাবা ওসমান হায়দার, বয়স ৫৫ কাছাকাছি চলে। মা চেম্বার অফ কমার্স এর সভাপতি, দুইজনেই very important person (VIP) All time is besy.
তার দ্বিতীয় কন্যা তানিয়া ওসমান, এ বছর অনার্স বাংলা বিভাগ হতে First class first পেয়েছে। He is a very brilliant girl and looks beautiful face.
মুসলিম পরিবারের সন্তান বলে সব সময় পর্দার সহিত চলাফেরা করে। এবং মোটামুটি চরিত্রবানও বটে। তিন ভাই বোন ওরা। দুই বোন আর এক ভাই। নাম তার অঞ্জন ওসমান, বড় মেয়ে তানিয়া ওসমান, আর ছোট মেয়ে সোনিয়া ওসমান। খুব ভালো পরিবার। প্রতিদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে। যে যার মতো করে কাজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। সকাল বেলার Breakfast টা তারা সবাই এক সাথে সম্পন্ন করে। তানিয়া ওসমান literature subject এ Previous Admission হয়েছে। আজ একটা Important Class আছে। তানিয়া ওসমান মেয়ে হিসাবে অপূর্ব সুন্দরী এবং smart. তার University যাওয়া জরুরি। তাই সে তারাহুরো করে ডাইরি কলম Veneti bag টা কাঁধে ঝুলিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়লো। রাস্তায় এসে টেক্সির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। কিন্তু
অনেক সময় ধরে weit করছে। একটা টেক্সির দেখা মিললো না। তানিয়া ওসমান vision tension করতে লাগলো। কিছু ক্ষনের মধ্যে Class শুরু হবে।
Let হয়ে গেলে Sir Class এ ঢুকতে দেবে না। হঠাৎ একটা অটো বাইক সামন দিয়ে যাচ্ছিলো। বেশ smart and Hansom. গায়ের রং বেজায় ভালো। তানিয়া ওসমান তরিঘরি করে অটো বাইক টিকে ডেকে বললো, University সে যাবে কি না। বাইক ম্যান জবাব দেয় যে উপযুক্ত ভাড়া পেলে যাবে। আচ্ছা ভাড়া দেয়া হবে। No problem. Ok go ahead. তানিয়া অটোবাইকে চড়ে বসলো। বাইক ছেড়ে দিলো। এর মধ্যে তানিয়া আর বাইক চালোকের মধ্যে বেশ ভালো পরিচয় হয়ে গেল। দেখতে দেখতে তারা গন্তব্য স্থানে পৌঁছে গেলো। ভাড়া বের করে দিলো। বাইক চালকের কাছে একহাজার টাকার নোট ভাঙতি টাকা নাই। কি মুসকিল। এদিকে ক্লাস বসছে। দ্রুত ক্লাসে যেতে হবে। তার কাছেও ভাঙতি টাকা নাই। বাইক চালকও ভাঙতি টাকা দিতে পারছে না। কোন উপায় বাইক চালক ভাড়া নিবে না বলে জানান দেয়, আবার সকাল বেলার এটাই প্রথম ভাড়া। ও বেচারাও বিপাকে পড়েছে। তানিয়া ওসমান তরিঘরি করে ১০০০টাকার নোট খানা বাইক চালকের হাতে গুঁজে দিয়ে দৌড়ে ক্লাসের দিয়ে যায়। ক্লাস শুরু হবে। স্যার এখনো ক্লাসে আসে নাই। বিশাল ক্লাস রুম। বাংলা ক্লাস আজ শামসুদ্দিন আবুল কালাম রচিত ছোট গল্প পথ জানা নেই আজকের ক্লাসে পড়ানো হবে। তানিয়া ওসমান ডাইরি কলম নিয়ে সামনের ব্রেঞ্চে বসে পড়লো, অমনি স্যারও সঙ্গে সঙ্গে ক্লাসে প্রবেশ করে সবাই কে Good morning শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলো, Students রাও সঙ্গে সঙ্গে Good morning sir বলে সম্মোধন করলো। এবার sir সবাই কে seat Down Please বলে সবাই কে বসতে বল্লেন। Students রাও স্যারের কথা মতো বসে পড়লো। ক্লাস শুরু হলো। এমন সময় বাইক চালক ছেলেটা ক্লাস রুমের দরজার কাছে এসে May I come in sir please. স্যার আহলাদের সাথে বলে উঠলো Oh! Seure of course you come in. তানিয়া ওসমান বাইক চালককে দিকে তাকিয়ে দেখলো, আরে এতো সেই বাইক চালক ছেলেটা। এ আবার বাইক চালকের পাশাপাশি পড়াশোনাও করে নাকি। বা বেশ Good Idea, স্যার পথ জানা নেই গল্পটি পড়ানো শুরু করে দিলো। বেশ ভালো লাগছিল খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো সবাই ক্লাসের সকল ছাত্র ছাত্রীরা। সত্যি মনোমুগ্ধকর স্যারের বাচনভঙ্গি। তানিয়া ওসমান মাঝেমধ্যে বাইক চালকের দৃষ্টি কাড়ার চেষ্টা করছিল। মাঝে মধ্যে দুই জনে একদৃষ্টিতে পড়ে যায়। বাইক চালক তরিঘরি করে অন্য মনস্ক হ’য়ে পরে। আবার তারা একে অপরের দৃষ্টি কাঁড়ার চেষ্টা করে আবার সফলও হয়, লজ্জাও বোধ করে। আবার অন্য মনস্ক হয়ে। স্যারের ক্লাস শেষ করতে মন চাচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল যেন সারাদিন স্যারের ক্লাস করি। কিন্তু করার কিছু নাই। ৪৫ মিনিট পর্যন্ত স্যার ক্লাস নিতে পারেন। এর বাহিরে এক মিনিটও না। সবাই ক্লাস ত্যাগ করতে লাগলো। বাইক চালক তানিয়া ওসমান ভাড়ার বাকি টাকা ফেরত দিতে অপেক্ষা করতে লাগলো। ভীড়ের কারণে তার বেড় হতে সময় লাগছে। কিছুক্ষণ পর বাইক চালক তানিয়া ওসমান কে ডাক দিয়ে বলছে, এই যে sister আপনার বাকি টাকা ফেরত নিন। তানিয়া ওসমান অবাক, আরে তুমি আমার ক্লাস ফ্রেন্ড। তুমি আমার ক্লাসে পড়াশোনা করো আবার বাইক চালাও, you are very brilliant students and very gentle boy. দেখুন মেডাম, আমি গরিব ঘরের সন্তান। আমার বাবা একজন দিন মজুর ছিলেন। তিণি দিন আনতেন দিন খাইতেন। আমাদের অভাবের সংসার। বাবার স্বল্প আয়ে আমাদের সংসার চলতো। তার স্বল্প আয়ের মধ্যে দিয়ে আমরা দুই ভাই বোন পড়ালেখা করে এতদুর পর্যন্ত এসেছি। আমার ছোট বোন ইডেন কলেজে পড়েন ইংলিশ সাবজেক্ট নিয়ে পড়াশোনা করে। ও এবার অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী।
আমার বাবা মায়ের ভীষণ ইচ্ছে আমরা যেন পড়াশোনা করে অনেক বড় মাপের অফিসার হতে পারি। আমার বাবা মায়ের ইচ্ছে পুরন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। হঠাৎ বাবা অসুস্থ হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। মা আমি আর আমার ছোট বোন ইনা জীবন সংসার চালাতে আমার লেখা পড়ার পাশাপাশি এই বাইক চালিয়ে যাহা উপার্জন করি। তাই দিয়ে আমাদের দুই ভাই বোনের লেখা পড়ার খরচ এবং সংসারের খরচ চলে। আমি এখন বাড়ি যাবো। আপনি কি অন্য কোথাও যাবেন নাকি? ও! হ্যা হ্যা আমাকেও আমার বাসায় পৌঁছে দিয়ে আপনি চলে যাবেন।please না বলবেন না. আচ্ছা ওকে Don’ t thinks. বাস যেই কথা, সেই কাজ। তানিয়া ওসমান বাইকে উঠে বসলো ডাইরী কলম ব্যাগটা কাধে ঝুলিয়ে নিয়ে ভালোভাবে বসে পড়লো। এবার বাইক চালক বাইক ছেড়ে দিলো। পথে যেতে যেতে অনেক কথা ওদের দুইজনে মধ্যে। দুইজন দুইজনের চোখাচোখি হতেই তারা আবার লজ্জা পায়। আবার আনমনা হয়ে যায়, আবার কথা শুরু করে। দুইজনের পরিবারের কথা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা কেমন লাগে, সংসার জীবন কেমন হবে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলে পরা দুইজন, না জানি কতো বছরের পরিচয় ওদের মধ্যে। মাঝ পথে বাইক থামিয়ে কিছু খাবার কিনে খায়, চা পান করে। কিছু ক্ষণ বিশ্রাম নেয়। তারপর আবার রওনা দেয় ওরা। তানিয়া ওসমানের বাড়ির সামনে এসে পড়ে বাইক চালক। বিশাল বড় বাড়ি। মনে হয় এদের পূর্বপুরুষরা রাজা জমিদার ছিলেন। তানিয়া বাইক হতে নামলেন। বাইক চালকের পকেটে আবার সেই টাকাগুলো ফেরত দিলো। বাইক চালক পিড়াপীড়ি করছে তার ভাড়া দেয়া লাগবে না। তানিয়া মানছে না। তানিয়া এবার বল্লো এই টাকা দিয়ে খালা আম্মার জন্য কিছু ফলমুল কিনে নিয়ে বাড়ি যাবে, কেমন। এরপর থেকে তানিয়া রাস্তায় এসে বাইক চালকের জন্য অপেক্ষা করে। কারণ বাইক চালক নিয়মিত ক্লাস করে। সে brilliant student.পড়াশোনায় 100% পারসেন্ট ভালো। আবার পড়াশোনার পাশাপাশি মা’কে দেখাশোনা করা সংসারের অভাব অনটন দূর করা ইত্যাদি তাকে সামাল দিতে হয়। তাই সে সব কিছু কঠোর পরিশ্রম করে এগুলোর সামাল দিয়ে যায়। তানিয়া ওসমান বাইক চালক কে পছন্দ করে মনে মনে। বাইক চালক তা বুঝতে পারে না। বাইক চালক গরিব মানুষের সন্তান। দিন আনে দিন খায়, রাত হলে ভাঙ্গা ঘরে খালি চকিতে পরে সুখের ঘুম ঘুমায়। পরের দিন আবার হালকা পাতলা খাবার, যাহা জুটে কপালে তাই খেয়ে আবার কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পরে। ওসব প্রেম ভালোবাসা এই সহজ সরল গরিব ঘরের সন্তানদের মাথায় ঘুরপাক খায় না। বাইক চালক ছেলেটা ক্লাস নিয়মিত করে যায় বাইক চালিয়ে সংসার চালানোর মতো কিছু টাকা করে খরচ পাতি করে সন্ধ্যার পর পরে বাড়ি ফিরে আসে। হাতমুখ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে মা ও ভাই বোনের খবর নিয়ে নিজ মনে পড়তে বসে। গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করে। বাইক চালক এর স্মৃতি শক্তিও প্রখর। কোন কিছু একবার শুনলেই তার সারাজীবন মনে গাঁথা হয়ে থাকে। বুঝেও ভালো।
বেশ ভালো চলছে বাইক চালক এর শিক্ষা জীবন ও অভাব অনটন সংসার জীবন। বাইক চালক ও তানিয়া ওসমান ক্লাসের Top Student, ক্লাসের কেউই তাদের দুজনকে কাটাতে পারে না। ক্লাসের স্যার তাদেরকে অন্তরের অন্তস্তল থেকে ভালোবাসে এবং প্রাণ খুলে দোয়া করেন। বাইক চালক ছেলেটার জন্য তানিয়া ওসমান এর খুব মায়া হয়। তানিয়া ভাবে আমি কতো বড়লোকের সন্তান।
খাবার দাবার কাপড় চোপর এবং টাকা পয়সার কোনো অভাব নাই। আর বাইক চালক এর এমন অবস্থা, ঘরে অসুস্থ মা, একটা ছোট বোন, ভাঙ্গা ঘরে খালি চকিতে ঘুমায়। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। হাফ ছাড়িয়ে তানিয়া ওসমান বলে, এসবই তারই খেলা। সহজ সরল Brilliant student. শুধু সে Brilliant student না একজন gentle boy বটে। গ্রাম বাংলার সহজ সরল স্বভাবের ছেলে। সত্যি এই ছেলেকে নিয়ে সুখের ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখা যায়। দেখতে দেখতে তাদের ফাইনাল পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে আসে। তারা হাড্ডা হাড্ডি লড়াই চালিয়ে যেতে থাকে। চরম লড়াই। কেউ কারোর কাছ হার মানতে রাজি নয়। কিন্তু ভালো রেজাল্ট করার জন্য প্রয়োজন প্রচুর পড়াশোনা করা্ আবার তার জন্য প্রচুর বই পড়া, দামি মোটা মোটা বই পড়া, ভালো ভালো লেখকের বই পড়া ভালো স্যাটের নোট পড়া। এবার বাইক চালক কঠিন সিদ্ধান্ত মিলো। যে করেই হোক. আমাকে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতেই হবে। তাই তো সে কোনো অযথা সময় নষ্ট করে না। মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করে এবং স্যারদের কাছে নোট চেয়ে নেয় স্যার রা তার পড়াশোনার আগ্রহ দেখে অর্থনৈতকভাব সাহায্য করে আর নিয়মিত লাইব্রেরিতে বালো ভালো রাইটারে বই পড়ার পরামর্শ দেয়। তাঁকে লাইব্রেরিতে নিয়মিত পড়াশোনা করার পারমিশনের ব্যবস্থা করে দেন।
তানিয়া ওসমান বাইক চালক এর লেখা পড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য টাকা পয়সা দিতে থাকে। পাশাপাশি বাইক চালক পরিবারের সাংসারিক খরচও চালাতে থাকে। তার বাবার টাকার হিসাব নাই। কোম্পানির বিনিয়োগ এর টাকা। অত গায়ে লাগে না। তানিয়া ওসমান বাইক চালক এর গভীর প্রেমে পড়ে গেছে। বাইক চালককে না দেখলে যেন এক মুহুর্ত ভালো লাগে না। আর ওদিকে বাইক চালক ও সব প্রেম প্রীতি তোয়াক্কা করে না। সে জানে আমি গরীব ঘরের সন্তান। আমাকে ওখানে একদম মানায় না। বড়লোকেরা গরীব মানুষ গুলো কে ভালো চোখে দেখেন না। তাই বড়লোকদের সাথে গরীব মানুষের আত্মীয়ের সম্পর্ক করা মাথার মগজ থেকে নামিয়ে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু তানিয়া তা মানতে চান না। ধন দৌলত টাকা পয়সা জমি জিরাত সভই আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় বিলি বন্টন হয়ে থাকে। তিনি যাকে খুশি, তাঁকে দিয়ে থাকে যাকে ইচ্ছে করেন না,তাকে দেন না। এতে মানুষের কোন হাত নেই। যাই হোক দেখতে দেখতে পরীক্ষার দিন ঘনিয়ে আসলো, জানুয়ারির ১তারিখ থেকে পরীক্ষা সকাল ১১ঘটিকা হতে দুপুর ২ ঘটিকা পর্যন্ত পরীক্ষা চলবে। তানিয়াও ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। সেও হার মানার নয়। প্রেমে পড়েও তার পড়াশোনার কোনো কমতি নেই। সেও গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে লাগলো। অবশেষে পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল। দুইজনে পরীক্ষা দিচ্ছে বেশ। ভালোই চলছে পরীক্ষা। আগামী সপ্তাহে পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে। তানিয়া ওসমান বাইক চালক কে প্রশ্ন করে বসে, পরীক্ষার অবসর দিনগুলোতে সে কি করবে। বাইক চালক হাসি মুখে জবাব দেয়, কি আর করবো বাইক চালাবো রীতিমত। আমার তো খাবার ব্যবস্থা করা লাগবো। বাইক না চালালে পেটে তো আর ভাত যাবে না। তানিম তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। বাইক চালক মনে মনে প্লান করে রেখেছে সে L L B কমপ্লিট করবে। সে সত্য প্রমান করে অনেক গরীব অসহায় মানুষ কে মিথ্যা চক্রান্তের হাত থেকে রক্ষা করে আনবে। কিন্তু তানিয়া কে সে কথা বলে না। তানিয়া আনার মনে মনে প্ল্যান করে রেখেছে সে, বিচারক হবে। তাই সে পাবলিক সার্ভিস সাবজেক্ট নিয়ে আবার পড়াশোনা করে যাবে। তারপর B C S পরীক্ষা দিবে। কিন্তু তানিয়া ওসমান তাঁর সব প্ল্যান বাইক চালক কে ব’লে। বাইক চালক বিশ্বাস করে এবং সম্মতি দেয়। তাঁর কারণ ওরা বড়লোক, টাকা পয়সার কমতি নাই। যখন যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারে। এতে না পাড়ার কিছু নাই। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ক্লাস বন্ধ। আর ভার্সিটি যাওয়ার প্রয়োজন নাই। বাইক চালক এর সাথে দেখা হয় না। মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকে। বাইক চালক, সব সময় মোবাইল চালু রাখার প্রয়োজন বোধ করে না। তাঁর ধান্দা যাত্রী সেবা দেবা দেয়া বিনিময়ে দুই পয়সা কামাই করা। ওসব প্রেম প্রীতি ভালোবাসার স্বপ্ন মনের ভিতর বাসা বাঁধে না। কিছু দিন পরে রেজাল্ট পাবলিশ করা হলো। বাইক চালক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা রেজাল্ট করেছে সাথে তানিয়া ওসমানও তবে বাইক চালক ১নম্বরে আছে। চারিদিকে মিষ্টি খাওয়াড় ধুম পরে গেল। সব ভীড়ের মধ্যে তানিয়া ওসমান বাইক চালক কে খুঁজে বেড়াচ্ছে। আজকে রেজাল্ট বাইক চালক এর গর্বের বিষয়। কিন্তু বাইক চালক আজ এখানে উপস্থিত নাই। কারণ আজ সকালে সূর্য উঠার পূর্বে তার অসুস্থ মা মারা গেছে। ছেলের ভালো রেজাল্ট করার সুসংবাদ টুকু শুনে যেতে পারলেন না। সব নিয়তির খেলা। সংসার ছোট বোন থাকলো। সে ইডেন কলেজে পড়ে। তারও পড়াশোনা শেষ প্রান্তে আগামী বছর বের হবে। এরই মধ্যে তানিয়া বাইক চালক এর সঙ্গে দেখা করতে আসে তার নিজ বাড়িতে। সব ঘটনা খুলে বলে। বাইক চালক কে জীবন সঙ্গী করতে চায়। বাইক চালক রাজি হয় না। কারণ বড়লোক রা গরীব মানুষদেরকে মূল্যায়ণ করে না। তাদের চাহিদা পুরণ করা অসম্ভব। তাদের পোশাক পরিচ্ছদ রীতিনীতি কৃষ্টি কালচার গরীব বাইক চালক এর সাথে Adjust হবে না। কিন্তু তানিয়া ওসমান তা মানতে রাজি নয়। সে জেদ ধরে বসে, তুমি যদি আমার কথায় রাজি না হও, তাহলে আমি আর বাড়ি ফিরে যাবো না। আমার জীবন আমি নিজে নিজে শেষ করে দেব। বাইক চালক এবার ভয় পেয়ে গেলো। কারণ বাইক চালক তানিয়া ওসমান কে ভালোভাবে চেনে সে যা ব’লে, তাই করে ছাড়ে। দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সংকল্পবদ্ধ মেয়ে।
সে আজ আমাকে বিয়ে করতে চায়। তার কথায় রাজি না হলে সত্যি সত্যি সে আত্মহত্যা করবে। আমিও আর কোনো দিন তাকে দেখতে পারবো না। তাকে বাঁচাতে হবে। তা-ই সে তানিয়া ওসমান কে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়। বিয়ে করে তাঁরা তানিয়ার বাবার বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়। বাবা মা ছেলের পরিচয় জানতে পেরে তাদেরকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে নিজের মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে তার বাড়ি হতে বের করে দেয়। সাথ সাথে বাইক চালক তাঁর পূর্বের কথাগুলো শুনিয়ে চাক্ষুষ প্রমাণ করে দিলো। দেখেছো তানিয়া, আমি এই কথাগুলো তোমাকে বার বার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিলাম। আজকে তাঁর প্রমাণ পেলে? এখনও সময় আছে তোমার সাথে আমার কোনো দৈহিক সম্পর্ক হয় নাই। তুমি তোমার সংসারে ফিরে যাও। ক্ষমা চাও তোমার বাবা মায়ের কাছে, নিশ্চয়ই তারা তোমাকে ক্ষমা করে দিয়ে ঘরে তুলে নিবেন। তানিয়া এবার ক্ষেপে যায়, চুপ করো। এখন তুমি আমার সব। বাবা ঐ টাকা পয়সা ধন দৌলত আর আবিজাত্যের অহংকার কে আমি ঘৃণা করি। তানিয়া বাইক চালক এর হাত ধরে চলে আসে তার ভাঙা ঘরে ভাঙ্গা চকিতে সুখে থাকার প্রত্যয় নেয়। রাতের বেলা তানিয়ার মা আসলো তানিয়া কে নিয়ে যেতে। অনেক পীড়াপীড়ি করলো। তানিয়া আর গেল না। তানিয়া মনে মনে সংকল্প সঞ্চারিত করে। আমি বাবার ভুল শুধরিয়ে দেব। তানিয়া B C S পরীক্ষা দেয়। ভালো রেজাল্ট করে। সৌভাগ্য ক্রমে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেট হিসেবে নিয়োগ পেয়ে ঢাকা জেলা দায়রাজজ আদালতে দায়িত্ব পান। বাইক চালক এর নাম সাদিক হোসেন। সাদিক L L B complete করে ফেলে। তানিয়া তা জানে না। রেজাল্ট নিয়ে বাড়ি ফিরে তানিয়া কে surprise দিলো। তানিয়া রেজাল্ট রেজাল্ট দেখে অবাক চোখে সাদিকের দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগল। তানিয়া সাদিককে কোর্টে প্রাকটিস করার পরামর্শ দেয়।
সাদিক রাজি হয়ে যায়। বার কাউন্সিলের সভাপতির সঙ্গে তানিয়া সাদিকের পরিচয় করে দিয়ে তাঁকে প্রাকটিস করার জন্য ব’লে। চলছে তাদের দুই জনের কর্ম জীবন। বছর খানিকের মধ্যে সাদিক পুরো ওকালতি শিখে গেল। এরপর বার কাউন্সিলের পরীক্ষা হয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন সাদিক কৃতিত্বের সাথে। এখন সে Advocate Sadik Hossain. সবাই তাঁকে Advocate Sadik নামে ডাকে। তানিয়া ওসমান চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেয়ে জয়েন্ট করে। বেশ ভালো চলছে তাঁরা স্বামী স্ত্রী দুইজন একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সেখানে সাদিকের ছোট বোন, তানিয়া এবং সাদিক ভালোভাবে থাকতে লাগলো। ওদিক তানিয়ার বাবা মা কোম্পানির কর্মকর্তা কর্মচারীদেরদের চক্রান্তের স্বীকার হয়ে কোম্পানির টাকা চুরির অপবাদে তাকে চাকুরীচ্যুত করা হয়। কোম্পানির ৫০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। কোম্পানির টাকা দিতে না পারায় তাদের বাড়ি ও অন্যান্য সহায় সম্বল সব কিছু নিলাম হয়ে যায়। এবং তানিয়ার বাবা মা নামে মামলা হয়। তার মামলাও তানিয়ার কাছেই আসে। আজ প্রথম এজলাস। তানিয়া পূর্বের ন্যায় পর্দার আবরণে বোরখা পরে এজলাসে উঠে। উপস্থিত সবাই কে শুভেচ্ছা জানিয়ে বসতে বল্লেন। তার আদালতের কার্যক্রম চালনা করার পরামর্শ দিলেন। নথি খুলে দেখে তাঁর বাবা-মা নামে কোম্পানির টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ এবং ৫০কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। তানিয়া ওসমান পরিচয় গোপন রাখলেন এবং ঘটনার বিবরণ শুনলেন। কোন প্রমাণ ছাড়া এই মামলাশ আসামি করা হয়েছে ওসমান হায়দার কে। মামলার বাদিকে কাঠগড়ায় উঠতে বল্লেন। বদির মুখে ঘটনার বিবরণ শুনলেন। মামলার চার্জশিটের বিবরণের সাথে বাদির অভিযোগ সত্য নয়। তানিয়া বুঝতে পারে বাবা উপর তাঁর কোম্পানির কর্মকর্তা কর্মচারীদের টাকা আত্মাসাৎ করার সংক্রান্ত চলছে, যে করে হোক আমার পরিচয় গোপন রাখতে হবে। আজকের আদলত এখানেই মুলতবি ঘোষণা করে তানিয়া চলে গেলেন তাঁর কামারায়। কামারায় গিয়ে তাঁর স্বামী সাদিক কে তাঁর নিকট ডাকলেন। মন খারাপ বাসায় যাবো। তুমি কখন আসতে পারবে। কেন শরীর খারাপ লাগছে? তুমি চাইলে এখনই যেতে পারি। তাহলে চলো। আর হ্যাঁ আমরা দুইজন যে, স্বামী স্ত্রী সেটা যেন কেউ বুঝতে না পারে। পরে জানে জানুক। আজ প্রথম এজলাসে আমার জীবনে প্রথম পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতেই হবে। তানিয়া বাসায় চলে গেলো। সাদিক কিছুক্ষণ পরে গেলো। বাসায় গিয়ে তার বাবা মা র দুরাবস্থা দেখে আর ঠিক থাকতে পারছে না। সাদিক বাসায় গেল। তানিয়া কে চিন্তিত দেখে ঘাবড়ে গেলো সাদিক। তানিয়া কে জিজ্ঞেস করে, কি হয়েছে আজ তানিয়া? তোমাকে এতো চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন? তার বাবার মার দুরাবস্থার ঘটনা খুলে বল্লো। সাদিক বল্লো আমরা কি তাদেরকে সাহায্য করতে পারি? আর তুমি যে বিচারের আসনে বসেছো, বাবা মা তোমাকে চিনতে পারে নাই? তানিয়া বাবা মা আন্দাজ করেছিল। আমি যে বিচারক হয়েছি সেটা তাঁরা জানে না। আমার সারা শরীর মুখ মন্ডল পর্দার আবরণ দিয়ে ঢাকা, কিভাবে আমাকে চিনবে। আমি বাবা
র এই দুরাবস্থার কারণ তদন্ত করে বাবা মা কে মুক্ত করে আনাবো। আমি ঐ কোম্পানির সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের সকল ষড়যন্ত্র তদন্ত করে বের করবো আসল ঘটনা। পরের তারিখে তানিয়া ওসমান কোর্টে বসলেন। কোম্পানি কে চিঠি পাঠানো হলো। তথ্য প্রদান করার জন্য। এদিকে সাদিক হোসেন এবং তানিয়া তাদের জন্য নিজস্ব লোক দ্বারা এর সঠিক রহস্য উদঘাটন করার টিম গঠন করে মাঠে নামিয়ে দিয়েছে এবং দ্রুত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য তাগিদ দিলেন। আর নিজের পরিচয় গোপন রাখার পরামর্শ দিলেন। তদন্ত চলছে জোরে সোরে। তানিয়ার বাবা-মা চিনে ফেলে, এই বিচারক তাদের বড় মেয়ে তানিয়া ওসমান। বাবা মা আপ্রাণ চেষ্টা করে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য। তানিয়া ওসমান সে সুযোগ দেয় না। তানিয়া ওসমান এই উপযুক্ত প্রমাণ করে বাবা-মা কে নির্দোষ প্রমাণ করে তারপর তানিয়া বাবা-মার সাথে দেখা করবে। এর আগে নয়। তার জন্য কোটের সমস্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের বলে দেয়া আছে। সে জন্য বাবা মা অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন এবং ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ফেরত এসেছেন। এই সমস্ত তথ্য প্রমাণ হাতে এসে গেছে। তানিয়া খুশি হয়। এরপর কোর্ট বসে। সবাই আসলেন। সাদকে হাতেই সকল তথ্য প্রমাণ। কোর্ট শুরু হলো একে একে জবানবন্দি নেয়া হলো। বাদি পক্ষের আইনজীবী জেরা শেষ। এবার সাদিক জেরা করতে শুরু করেন। সাদিক জেরা করতেই বাদি সবাই থতমত খেয়ে গেলেন, সাদিক বুঝতে পারে বাদি দুর্বল হয়ে যাবে। সে সুকৌশলে একের পর এক প্রশ্ন করতে করতে বাদিকে নাজেহাল করে ফেল্লো। একসময় বাদি রেগে গিয়ে নিজেই স্বীকার করে যে, সে এই কাজ করছে ওসমান হায়দার কে ফাসানোর জন্য। শেষে প্রমাণ হয়ে গেল ওসমান হায়দার ও স্ত্রী সন্তান সম্পূর্ণ নির্দোষ। তানিয়ার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। এবার তানিয়া এজলাসে বসে তার ঘোমটা খুলে চোখের পানি মুছতে লাগলো। সাদিক কোর্ট থেকে বিদায় নিয়ে তাঁর চেম্বারে গিয়ে বসলেন। তানিয়ার বাবা মা তানিয়া কে দেখে আচমকা খেয়ে উঠে, আরে এই বিচারক তো আমাদের তানিয়া। বলে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। তানিয়া উঠে যাবে, বাবা-মা ডাকছে তাঁকে তানিয়া আমরা তোর বাবা-মা। তুই আমাদের সঙ্গে কথা বলবি না? তানিয়া কোন কথা বলে না। সে গাম্ভীর্যের সঙ্গে চলে যায় তার চেম্বারে। তারপর তার পিয়নকে দিয়ে তাদেরকে ডেকে পাঠালেন। আপ্যায়ণ করাতে বল্লেন তার লোকজন কে দিয়ে। ভালোমত আপ্যায়ন করালো তারা। তারপর ডাকলেন তার কক্ষে। এবার বাবা মা তানিয়ার কাছে ভুল স্বীকার করলেন। তানিয়া বল্লো আজকের তোমাদের নির্দোষ প্রমাণের পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে আমার স্বামী সাদিক। তোমার জামাই নয়। আমার স্বামী। সে ঘটনার সমস্ত তথ্য খুটি নাটি পূঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে তথ্য সংগ্রহ করে আজকের বিচারকের কাঠগড়ায় তোমাদের মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। এখন তোমরা তোমাদের বাড়ি চলে যাও। না মা তোকে ও জামাই বাবাজী কে না নিয়ে আমরা এখান থেকে যাবো না। একদিন এই বোরখা পরা মেয়ে কে আর বাইক চালক সাদিক কে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বেড় করে দিয়েছিলো তারই জন্মদাতা বাবা-মা। আজকে তাঁরাই তাদেরকে বুকে টেনে নিতে চাইছে।