ডেস্ক রিপোর্ট:
রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের পাশে সোহাগ নামে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। গত বুধবার (৯ জুলাই)। মৃত্যুর পরও হত্যাকারীরা তার দেহের ওপর অমানবিক আচরণ করে- যা সিসিটিভি ফুটেজেও ধরা পড়ে। ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬টা, মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে মানুষের জটলা। তখন দেখা যায়, এক রক্তাক্ত দেহকে টেনে বের করছে দুই তরুণ। এক তরুণ তার গালে আঘাত করছে, আরেকজন বুকের ওপর লাফাচ্ছে। এরপর আরও দুজন একই আচরণ করে। একপর্যায়ে একজন এসে মাথায় আঘাত করে। শত মানুষের সামনে এমন নির্মম দৃশ্য— অথচ কেউ এগিয়ে আসেনি।
পরিবারের ভাষ্য:
পরিবারের দাবি, পূর্বপরিচিত কয়েকজন তরুণ সোহাগকে ডেকে নেয় এবং পরে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। তিনি একজন ভাঙারি ব্যবসায়ী ছিলেন এবং পূর্বে যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে। তার স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছেন।
স্ত্রী লাকী বেগম বলেন, স্থানীয় মহিনসহ কয়েকজন মিলে তাকে হত্যা করেছে। আশপাশে লোকজন থাকলেও কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি।
ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও হুমকি:
নিহতের আত্মীয়রা জানান, সোহাগ নিজের ব্যবসা গড়ে তুলেছিলেন। কয়েক বছর ধরে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেন। স্থানীয় মহিন নামের একজন, যিনি নিজেকে যুবদল নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন, সম্প্রতি তার ব্যবসার ভাগ দাবি করতে থাকেন। রাজি না হওয়ায় হুমকি দেওয়া হয়, এমনকি হত্যার আগের দিন গুলিও ছোড়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা:
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোহাগকে টেনে-হিঁচড়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে তাকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। জীবিত অবস্থায় সাহায্যের চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে মাথায় ইট ও শক্ত বস্তু দিয়ে মারলে তিনি প্রাণ হারান।
১৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা:
ঘটনার পর দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের একজনের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। গ্রেপ্তারসহ ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়েছে।
পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিক্রিয়া:
ডিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, “এ রকম অমানবিকতা আগে দেখা যায়নি। সমাজে শৃঙ্খলা না থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।”
সূত্র: বিবিসি নিউজ