প্রফেসর ড. মো. মতিউর রহমান
দাবি শুধু ভূমি, নদী, পাহাড়—দখলের লালসা গিলে ফেলে দেশ,
ছিন্নভিন্ন মানবতা কাঁদে—চোখের জলে রাঙায় যুদ্ধের নিঃশেষ।
রাতের আকাশ কাঁপে—বোমার শব্দে শিশুর কান্না বাজে,
শান্তি সব দূরে পালায়—বারুদের ছায়ায় রক্তের গল্প সাজে।
নারী হারায় স্বামী, শিশু খোঁজে বাবা, মাটি গিলে নেয় ঘর,
কোন ধর্ম বলেছে জ্বলাও শহর, করো প্রাণহীন পরিবার?
জীবন নয়, শুধু লাশ—ধ্বংসস্তূপে খেলে যুদ্ধের ঘৃণা বারবার , কোথায় মানবতা মানবাধিকার? সে এখন কেবল চুক্তির পেছনে ছায়া-ভীণা অন্ধত্ব দুঃস্বপ্ন। এ কেমন নগ্নতা?
ইরান-ইজরায়েল, ফিলিস্তিন—সবই হিমায়িত ইতিহাসের অভিশপ্ত নদী,
কান্না আর রক্তে লেখা সংবাদ—সত্য হারায় প্রতিদিন সদ্য সর্বদা।
শিশু চায় কলম, নয় রাইফেল; নারী চায় আলো, নয় ক্ষরণ, কোথায় সুশোভিত আলোকিত ভোর?
মানুষ চায় নিঃশ্বাস, দখল নয়; চাই এক মুক্তির প্রশমন।
নেতারা বসে বোর্ডরুমে—শান্তি ভুলে যুদ্ধ আঁকে ছকে, ধোকা দেয় ক্ষুধার্ত গরীব অসহায়দের
শরীর পোড়ে আগুনে, তারা মাপে সবকিছু গ্যাসের দাম গোপনে।
তারা বলে “রক্ষা চাই,” কিন্তু ট্যাংকের নিচে পিষে সভ্যতা,
তাদের বুলি, গুলি, ফন্দি—সবই বর্ণময় হত্যার কবিতা।
রক্তে লেখা বাজেট আসে, নিষেধাজ্ঞা ভেঙে আসে আগুন, শুধু
ভাষণ হয়, তবু চোখে খেলে বারুদের কাচচূর্ণ ধূলিকণা।
প্রতিবাদ শোনে না কেউ, পতাকা উড়ে বিষাদে,
যে জীবনে যুদ্ধ বাঁধে, সে জীবনে শান্তি আর কাঁদে।
শিশুর স্কুলব্যাগ পুড়ে যায়, পেন্সিল ভেঙে রাইফেল হয়,
স্বপ্নের বদলে আসে ধ্বংসাবশেষ, কফিনের মিছিল বয়ে।
শিশির ভেজা সকালে লাশ খোঁজে মা—দিগ্বিদিক দৃষ্টি ভরা,
কারণ একটাই: রাষ্ট্রপুষ্ট ঘৃণার বিস্তার, বন্দুকধরা।
তারা বানায় যুদ্ধের ব্র্যান্ড, মুনাফার ফেরিওয়ালা, ঘুরে বেড়ায় নীরেট নিভৃত অবলীলায় প্রত্যন্ত মানুষেরা।
বারুদে বুনে অর্থনীতি, প্রতিযোগিতায় মানবতা জ্বালা।
অস্ত্রচুক্তিতে স্বাক্ষর করে, কামানের নিচে পিষে শিশু,
আর বলে—“শান্তি রক্ষা করছি আমরা”—হায়, এ কেমন পিছুপিছু?
আকাশে ড্রোন, নিচে হাড়—কোথায় মানবিক আর্তনাদ?
কেন ঘুমোয় জাতিসংঘ, কোথায় ন্যায়বিচারের দৃষ্টিপাত?
বিশ্বব্যবস্থার নিস্তব্ধ গহ্বরে মরে যায় বিবেকের সুর,
শুধু বেঁচে থাকে যুদ্ধপন্থী পুঁজির বিজয়-বিষাদ-ব্যথা বেদনা বিধুর।
সংবাদে শুধু মৃতের সংখ্যা—নামহীন একক পরিসংখ্যান,
কিন্তু কে শুনেছে মায়ের আহ্বান? কে গুনছে জীবনের মান?
মুক্তি চায় আত্মা, চায় পরম অহিংসার সম্ভাব্য পাণ্ডুলিপি,
তবুও রাজনীতি রাখে লাশের সারি, ইতিহাস রাখে নিরব প্রতিকৃতি।
আমরা কি পারি না গড়তে এক স্বপ্নের নব জগত?
যেখানে থাকবে না বিভেদ, শুধু ভালোবাসার নিঃশব্দ আয়োজিত উৎসব।
যেখানে শিশুর হাতে থাকবে বই, নয় কামান ও টিয়ারশেল,
যেখানে মানুষ মানুষকে জিজ্ঞাসা করে—“তোমার দিন কেমন গেল?”
চাই এমন ভূমি—যেখানে কেউ কাউকে করে না নির্বাসিত,
যেখানে মানুষ কাঁদে না জাতের নাম শুনে বিষাক্ত।
চাই না বোমা, চাই বর্ণিল স্বপ্ন—সব জাতির, সকল ধর্মের,
একটি ঘুমহীন পৃথিবী নয়—চাই শান্তিময় মানবোন্মুখ রাত্রি ও প্রহর।
চাই এক পৃথিবী—যেখানে যুদ্ধ থাকবে শুধু বইয়ের গল্পে,
আর বাস্তবে থাকবে বন্ধন, ভালোবাসা—শান্তির পরম সোপানে।
যেখানে কবিতায় শোনা যাবে পাখির ডাক, শিশুর হাসি,
আর নেতারা বসবে নয় অস্ত্র গোনার, বরং মানবিক আশ্বাসের আশি।