অথই নূরুল আমিন
বাংলাদেশ স্বাধীনতার ইতিহাসের সাথে এই জামায়াতে ইসলামীর নামটি গত তেপ্পান্ন বছর ধরে একটি গুষ্ঠি নিন্দিত ভাবে প্রকাশ করে আসছিল। জামায়াতে ইসলামীর সাথে যারা জড়িত তারা নাকি বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী। এই বলে রাত দিন এর প্রচার প্রচারণা চালিয়ে আসছিল অবিরাম । এই প্রচার একটি গুষ্ঠি এমনভাবে প্রচার করে আসছিল যে, তারা সমগ্র জাতিকে তথা বিশ্ববাসীকে বুঝাবার চেষ্টা করে আসছিল। বিশেষ করে যারা জামায়াতের সাথে জড়িত আছে, তারা কেউ লোক ভালো নয়।
এর সাথে পাল্লা দিয়ে দেশের কিছু মিডিয়া কর্মী বা কলাম লেখকেরাও নথিপত্র সহ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন পর্যন্ত করেছে। এখানে তাদের সাথে রাজাকার আল বদর থেকে শুরু করে এহেন মন্দ শব্দ নেই যে, তারা ব্যবহার করেনি। এখানে আরো কিছু মুক্তমনা মিডিয়া বা কলামিস্টগণ তারা লিখেছে। জামায়াত যদি কোনদিন ক্ষমতায় আসে তাহলে দেশের নারীদের জন্য সবচেয়ে বেশি মন্দ হবে। জামাতিরা নারীদেরকে ঘর থেকে বেরুতে দেবে না। বেরুলে সকলের বোরকা পরতে হবে। ইত্যাদি ইত্যাদি বয়ান শুনে আসছি বিগত চার যুগেরও বেশি ধরে।
এই সব মন্দ প্রচার শুনে কলেজ ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করা উচ্চ শিক্ষিত অনেক নারী পুরুষেরাও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিরোধী হয়ে উঠে। যার ফলে জামায়াতে ইসলামী দলটি প্রায়সময় কোণঠাসা হয়ে থাকতে হতো। এদিকে যারা দিন রাত জামায়াতের মন্দ বলত। তারা মন্দ বলত এই বলে যে। জামায়াত হলো রাজাকার বা রাজাকারের দল। তারা স্বাধীনতা বিরোধী ছিল। এসব বলতে বলতে সেই গুষ্ঠি এমন অবস্থ হলো। অবশেষে জুলাই মাসে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারী সেই পঁচিশ বছরের ছেলে মেয়েরকে পর্যন্ত রাজাকার বলা শুরু করল। তখন দেশের এক শ্রেণির লোকদের জ্ঞান চক্ষু খুলে গেল। তাদের মনে প্রশ্ন জাগলো। কিরে পঁচিশ বছরের ছেলে মেয়েরা কোটা বিরোধী আন্দোলন করতে এদেরকেও রাজাকার বলে গালি দিচ্ছে এর মানে কি? তা খুঁজতে গিয়ে সরকারের পতন হলো…।
এদিকে শতরকম শত প্রতিবন্ধকতার মাঝে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম ঠিকে রয়েছে। এ যেন আল্লাহ্ তায়ালার পরম রহমত সরুপ। হাজারো বদনামের পরও এই দলটি রয়েছে অত্যন্ত সু সংগঠিত ভাবে। এখানে রয়েছে আমাদের সমাজের সুশিক্ষিত ব্যক্তিগন। যেমন ইসলামের ইতিহাসে লেখাপড়া জানা বিভিন্ন আল্লামা, মুফতি, যুক্তিবাদী, মাওলানা, কোরআনের হাফেজ, মাষ্টার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে সমাজের সকল ক্ষেত্রের সুশিক্ষিত এক বিশাল বহর যা আজকে দিনের আলোর মত পরিস্কার।
কথা থাকে যে, মোটামুটি ১৯৭১ এর পর থেকে ৪ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কোণঠাসা হয়েই ছিল। সমাজের বিভিন্ন জায়গায় অনেক সময় প্রকাশ্যে তেমন কোনো মিটিং মিছিল করতে পারত না। এছাড়া গোপনে কোথাও মিটিং করলেও, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ। জঙ্গি নাটক সাজিয়ে তাদের কে গ্রেফতারসহ নানাভাবে হয়রানি করা হতো।
অথচ ৫ আগষ্ট ২০২৪ থেকে আজ পর্যন্ত আর কোনো জঙ্গি নাটক নেই। গত এক বছরের মধ্যে দেশের মানুষ দেখল, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি সুন্দর আদর্শিক একটি ইসলামী রাজনৈতিক দল। গত এক বছরে দেশের জনগণ বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সুন্দর কার্যক্রম দেখে রীতিমতো অবাক! আজকে বাংলাদেশের প্রতিটি পাড়া মহল্লায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতা কর্মী ও সমর্থক রয়েছে মর্মে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ হচ্ছে।
রাত পোহালেই ঐতিহাসিক শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে যে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সমাবেশ এটাই হতে যাচ্ছে আমার মনে হয়। আমরাও চাই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শুধুমাত্র মহাসমাবেশ নয়। আগামীতে তাদের নেতৃত্ব হোক জাতি গঠনে। সুন্দর সমাজ গঠনে। তাদের প্রতিটা নেতৃত্ব হোক শোষণ মুক্ত সমাজ গঠনে। আমরা আশা করি আগামী প্রজন্মের কাছে তারা হয়ে উঠুক বিশ্বাসী হয়ে। দেশপ্রেমিক এবং সমাজ তথা রাষ্ট্রের সেবক হিসেবে। আগামী প্রজন্মের কাছে ভেঙ্গে যাক অতিতে তাদের নামে করা সেই বদনাম গুলো। এই কামনা রইল।
অথই নূরুল আমিন
কবি কলামিস্ট ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানী।