স্টাফ রিপোর্টার, সুনামগঞ্জ
রামসার সাইট টাংগুয়ার হাওরে নৌকা চালকদের ব্যবসায়ী সাজিয়ে ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে অর্থ খরচ করে হাওরেই ভাসমান বাজার উদ্বোধন করা হয়েছে। বাজারটি উদ্বোধনের পরেই এর অস্তিত্ব নেই বলে জানাগেছে শনিবার(১৯ জুলাই)।
এছাড়াও যাদেরকে ব্যবসায়ী সাজানো হয়েছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন,কারন তারা মুলত ছোট ছোট নৌকা চালক,তারা নৌকা দিয়ে পর্যটকদের ঘুরে বেড়িয়ে আয় করে সংসার চালায়। এছাড়াও এই বাজার নিয়ে রয়েছে নানান অনিয়মের অভিযোগ।
সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ গত শুক্রবার(১৮ জুলাই)দুপুরে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা ও মধ্যনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত টাঙ্গুয়ার হাওরে এসে ভাসমান বাজার উদ্বোধন করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সমর কুমার পাল,তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হাসেম প্রমুখ।
তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে,বর্ষা মৌসুমে টাঙ্গুয়ার হাওরকে বিকশিত করতে একেই সাথে হাওর পাড়ের সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে হাওরে ভাসমান বাজার উদ্বোধনের করা হয়েছে।
এরপর থেকে সচেতন মহল ও পরিবেশ, প্রতিবেশ,জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা সংগঠনের নেতা কর্মী ও হাওর বাসির মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
অভিযোগ উঠছে,একদিনের জন্য ভাসমান বাজারে স্থানীয় বাদাঘাট বাজার থেকে ১০ হাজার টাকার পণ্য কিনে ৮টি ছোট নৌকায় সাজিয়ে রেখে ফটোসেশন করা হয়। উদ্বোধন শেষে আবার তাদের থেকে উপজেলা প্রশাসনের লোকজন পণ্য গুলো নিয়ে নেয়া হয়। আর বাজারটিও ও শেষ হয়ে যায়।
একটি ব্যানার ও ৮টি নৌকায় মালামাল দিয়ে বাজার হয় না,হাওরে লোক দেখানো ভাসমান বাজার উদ্বোধন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাওর পাড়ে বাসিন্দাগন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নৌকা চালক(ভাসমান ব্যবসায়ী)গন বলেন,ভাসমান বাজার উদ্বোধন করার কথা বলে ইউএনও সাবের লোকজন আমাদের নৌকা বৃহস্পতিবার আশপাশের লোকজনকে দিয়ে রং করেন আর শুক্রবার আমাদের ৮টি নৌকায় ১০ হাজার টাকার পণ্য দিয়ে ব্যবসায়ী সাজিয়ে ভাসমান বাজার উদ্বোধন করে। পরে উদ্বোধন শেষে পণ্যগুলো আবার তারা নিয়ে গেছে। এ কারনে এই দুদিন আমাদের কোন আয় হয় নি। অথছ আমরা ছোট নৌকায় হাওরের ভেতর পর্যটকদের ঘুরিয়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা আয় করি।
এদিকে পরিবেশবান্ধব ভাসমান বাজার পর্যটকদের আকর্ষিত করবে অনেকের ধারণা। আবার পরিবেশ কর্মীদের ধারণা এই বাজার
হাওরে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের আরও ক্ষতি হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন অনেকে।
জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা আহমদ কবির তার ফেইসবুক আইডিতে লিখেছেন টাঙ্গুয়ার হাওরে ভাসমান উদ্বোধনের নামে এ কেমন অমানবিক সিদ্ধান্ত, বাজার উদ্বোধন ও ফটোসেশান করেই মালামাল নিয়া নেয় দায়িত্বশীল ব্যাক্তিরা, এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জন্ম নেয়। তার ঐ পোস্ট অনেকেই কমেন্টস করেছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা হাওর ও নদী রক্ষা আন্দোলনের নেতা ওবায়দুল হক মিলন বলেন,পর্যটকরা পণ্য কিনেই নৌকায় উঠেন,সে কারনে ভাসমান বাজার থেকে কেউ কিছুই কিনবে না। আর প্লাস্টিক ও চিপসের প্যাকেট আরও বেশি পানিতে ফেলে পরিবেশের আরও ক্ষতি করবে।
স্থানীয় জনগণের বিকল্প আয়ের উৎস তৈরির একটি ‘নিউ কনসেপ্টথ ভাসমান বাজার বলে জানিয়েছেন ফেইসবুকে uno Tahirpur আইডিতে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হাসেম। তিনি আরও লিখেছেন,এ বাজারে বিক্রি হবে ফলমূল,সবজি, পিঠার মত পরিবেশবান্ধব পণ্য। গোলাবাড়ি ও জয়পুর এলাকার বাসিন্দারা প্লাস্টিক মোড়কে পণ্য বিক্রি করলেও এখন চিপস বা প্লাস্টিক মোড়কে খাবার বিক্রির সুযোগ নেই। এখন তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে প্লাস্টিকবিহীন খাবার বিক্রির দিকে। এ উদ্যোগে প্রশাসন কেবল দিকনির্দেশনা দিচ্ছে,পণ্য সংগ্রহ ও বিক্রির কাজ করবেন স্থানীয়রাই।
ইউএনও আবুল হাসেম সাংবাদিকদের বলেন,এটি মূলত হাওর পাড়ের মানুষের মনে আগ্রহ তৈরির উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। পণ্যগুলো প্রশাসনের ফান্ড থেকে খরচ করে করা হয়েছে।