লেখকঃ ইঞ্জিঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম
বিচারপতি খায়রুল হক কে রাত আটটায় যখন সিএমএম আদালতে পিছে হাত কড়া অবস্হায় এজলাসে তোলা হয়, পথে শত খানেক জাতীয়তাবাদী আইনজীবী শ্লোগান দিচ্ছিলেন “গনতন্ত্র হত্যাকারী বলে!” এজলাসে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী তাকে গনতন্ত্র হত্যাকারী এবং হাসিনা কে স্বৈরাচারী তৈরির কারিগর বলে উল্লেখ করতে ছিলেন, যদিও তাকে যাত্রা বাড়ী খুনের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে! জাতীয়তাবাদী আইনজীবী এজলাসে ই বলেন, আমাদের “উপরের নেতৃত্ব নিষেধ করেছেন শারীরিক assault না করতে!” এ-সময় এককালের প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক আদালতে বিচারকের কুরসি তে বসা ম্যাজিট্রেটের দিকে তাকাচ্ছিলেন নিরাশার চোখে! কি ভয়াবহ কথা, আদালত সব চেয়ে নিরাপদ জায়গা, সেখানে শারীরিক নির্যাতনের রেওয়াজ তো কোন স্বৈরশাসক আমলেও ছিলো না! “নিষেধ আছে তাই কিছু বলা হলো না!”
রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী তার জামিন না দিতে অনুরোধ করেন কারন তিনি ভয়াবহ প্রভাশালী, ব্যক্তি মামলা তদন্তে বিঘ্ন ঘটাতে পারেন! সৌভাগ্য জাতির, খায়রুল হককে জামিন দিলে আরো খুন-গুম ধর্ষন হতে পারে সে কথা দয়া করে আইনজীবী বিচারকের দৃষ্টিতে আনেন নাই!
প্রিয় পাঠক, “Respect according to the standard” বলে একটা কথা আছে! কারাদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামি ও জেলে ক্লাস পায়! ছাত্র জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে বর্বর পাকিস্তান শাসন আমলে, তবু ও একটা Manner, Politeness, Courtesy, Amenity ছিলো! ছাত্র যখন ছিলাম, একটা দামী চামড়ার নোট ফাইল ব্যবহার করতাম যা তৈরি হতো করাচি, সে ফাইল হাতে নিয়ে খুলনা থেকে ট্রেনে উঠতাম, যশোর হয়ে যেথা ইচ্ছে ভ্রমন করেছি কখনও ট্রেন ভাড়া লাগে নাই! টিকিট চেকার টিকিট চান নাই ছাত্র বুঝে! তখন ছাত্রদের সন্মানের চোখে দেখা হতো! কোনো এক দাবিতে শুরুর বাংলাদেশ আমলে গ্রেফতার হলাম ১৮ জন, হাত কড়া লাগায় নাই! কোন কারন বশত দু-একবার জমির দলিল এজলাসে গেছি, সাবরেজিস্টার প্লাটফর্মে চেয়ার আনায় বসতে দিছেন, হয়তো এখন আর তা পাবো না! একজন ক্ষুদ্র মানুষের নিজ দেখা জীবন বললাম, বিগত বিচারপতি খায়রুল হক কে হাতকড়া না পরালে কি অনেক অপরাধ হতো, চেয়ার পেতে বৃদ্ধ লোকটাকে আইনজীবী ভদ্রতার নিবেদন করলে ম্যাজিট্রেট সাব কি খুব অখুশি হতেন! বিচারে তার ফাঁসি হোক, যতক্ষণ the accused is not proved as GUILTY, he can’t dishonor !
প্রিয় পাঠক, গনতন্ত্র হত্যাকারী নিয়ে একটু আলোচনা করবো! কোন দিক থেকে শুরু করবো তাই ভাবছি!
২০০৩ সালে ২/৩ জন সিনিয়র বিচারপতি যাদের প্রমোশন ডিউ থাকতে ও তাদের ডিঙিয়ে “কেএম হাসান ” কে অবৈধ ভাবে, কে প্রধান বিচারপতি করলেন, বেগম খালেদা, নাকি হাসিনা? উদ্দেশ্য “কেএম হাসান” ‘মুজিব’ খুনির আত্মীয় তাই অবশ্যই তিনি Election manipulate করে বেগম খালেদা জিয়াকে ক্ষমতায় আনবেন! এই Election engineering কি গনতন্ত্র ধ্বংস নয়? ২০০১ সালের নির্বাচনে বিচারপতি লতিফুর রহমান তো অটোমেটিক normal process এ জ্যাষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি এবং তত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হয়েছিলেন! স্বৈরাচারী হাসিনা তো বীর দর্পে ক্ষমতা হস্তান্তর করে লতিফুর রহমানের কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন! কোন গড়িমসি বা election engineering চেষ্টা করেন নাই!
কে এম হাসান কে নিয়ম ভেঙে ২০০৩ সালের ২৩শে জুনে প্রধান বিচারপতি করার কারন তিনি ২০০৪ সালের ২৯ শে জানুয়ারি অবসরে যাবেন এবং সবশেষ বিচারপতি হিসাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হবেন এবং শত ভাগ নিশ্চিত হয়ে বেগম জিয়া ক্ষমতা ছাড়বেন! হিটলারের ব্রেইন ব্যর্থ এমন Brain storming এর কাছে!
বিধি বাম, হাসান সাহেব ভদ্রলোক ছিলেন, তিনি আওয়ামীগের সাথে এই সূক্ষ্ম কারচুপির শরীক হতে চান নাই! তারপর প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন ছাড়া আর পছন্দ নয়, তিনিই স্কুল সেক্রেটারি তিনিই হেড মাস্টার, কেল্লা ফতে। কিন্তু হলো না, আওয়ামী হরতালে মতিয়া চৌধুরীর মাজা ভাঙ্গলেও শেষ রক্ষা হলো না। স্বরাষ্ট্র সচিব কে দিয়ে চিঠি দিয়ে সেনাপ্রধান মঈনউদ্দীন কে ডাকলেন। তিনি “ফখরুদ্দিন মঈনুদ্দিন মঈনুল হোসেন” মিলে “কোকো” “তারেকের” মাজা ভাঙলেন এবং খালেদা হাসিনা কে গৃহবন্দী করলেন! আজ-ও ভাবলে কষ্ট পাই chronic illness এ ভোগা “আরাফাত রহমান কোকা”, সেই নির্যাতনে আয়ু হারিয়ে অকাল মৃত্যুতে পতিত হন!
পাঠক, সেনাসমর্থিত সরকারের নিরপেক্ষ নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় এলেন, তখন তিনি ও বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ রা মনে করলেন, অনির্বাচিত সরকার নিজেরা তৈরি করে নিজেদের মাজা কেন ভাঙ্গবো, অতএব, বন্ধ করো তত্বাবধায়ক পদ্ধতি! তখন তো জাতীয়তাবাদী নেতাদের মৌন সমর্থন ছিলো, কারন গাড়ী বাড়ী টাকা ব্যবসার যত অবৈধ আয় ছিলো সবাই হয়রানির শিকার হয়েছেন!
জনাব খায়রুল হক কেন, যিনি তখন ঐ চেয়ারে থাকতেন তিন রাজনীতিবিদ দের পক্ষে কাজ করতেন! এবং বাতিল রায়ই আসতো —
খালেদা জিয়া ই তো বলেছিলেন, ” কেউ নিরপেক্ষ নয়, পাগল আর শিশু ছাড়া!” অসমাপ্ত —
২ য় পর্ব আগামী কাল।