সাইফ উল্লাহ, স্টাফ রিপোর্টার:
সুনামগঞ্জের একমাত্র শিল্পনগরী ছাতক উপজেলা ও ভারতের সীমান্তবর্তী দোয়ারাবাজার উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদীয় সুনামগঞ্জ-৫ আসন। গেল ২০২৩ সালের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী এই আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৮ হাজার ১শত জন। স্বাধীনতার পর এই আসন আসন থেকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপি থেকে কলিম উদ্দিন মিলন ৩ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের আমলে বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদেরকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এসময় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের কারাবরণ না হয় ঘরছাড়া হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়েছে। কিন্তু ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এবার বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগ বিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদেরকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে দেখা গেছে। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সুনামগঞ্জ-৫ আসনে গণসংযোগ করে ভোটারদের নজর কাড়ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এরমধ্যে ব্যাপক আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির দুই হেভিওয়েট প্রার্থী।
এদের একজন হলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন, অপরজন হলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী। উভয়েই ছাতকের বাসিন্দা বটে। কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন ইতোপূর্বে তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আর মিজানুর রহমান চৌধুরী ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছিলেন। এরআগে তিনি একবার ছাতক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বর্তমানে ছাতক ও দোয়ারাবাজারে সাংগঠনিকভাবে বিএনপি এক দেখা গেলেও এই দুই নেতাকে কেন্দ্রকে করে তাদের অনুসারীদের শক্তিশালী দুইটি বলয় রয়েছে। এই আসনে আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে মিলন ও মিজান বলয়ের মধ্যে চলছে তুমুল প্রতিযোগিতা। মনোনয়ন পেতে উভয়ে বলয়ের নেতাকর্মীরাই তাদের নেতার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। এদিকে ৫ আগস্টের পর থেকে ব্যাপক সাংগঠনিক কর্মসূচি জোরদার করতে দেখা গেছে বাংলাদেশ জামায়াতকে। দলটি ইতোমধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠনসহ সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছে। জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন মাওলানা আব্দুস সালাম আল মাদানী। তিনিও ছাতকের বাসিন্দা।
বিএনপি, জামায়াত ছাড়াও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের (মামুনুল হক) সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ করছেন বাংলাদেশ খেলাফত শ্রমিক মজলিসের উচ্চতর পরিষদের সদস্য মাওলানা সাদিক সালিম। তিনি দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা। ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ করছেন দলটির সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সংখ্যালঘু বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা হাবিবুল্লাহ আশরাফী। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন ছাতক জাবা মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। তিনি দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা। বিএনপি, জামায়াত, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, ইসলামি আন্দোলনকে মাঠে দেখা গেলেও ভিপি নূরের গণঅধিকার পরিষদ এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি’র (এনসিপি) কোনো প্রার্থীকে মাঠে দেখা যায়নি। এমনকি তাদের কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রমও এখন পর্যন্ত ভোটারদের চোখে পড়েনি।
দোয়ারাবাজার উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলতাফুর রহমান খসরু বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংগঠনিকভাবে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছি। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটিগুলোকে পুনর্গঠন করে চাঙা করা হচ্ছে। দলীয় মনোনয়ন পেতে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত দল যাকে মনোনয়ন দেবে আমরা তাকে নিয়েই ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করব।
উপজেলা জামায়াতের আমির ডা. হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা ৮১ টি ওয়ার্ড কমিটি গঠন করেছি। নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের কেন্দ্র ঘোষিত প্রার্থীকে নিয়ে আমরা গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছি। ভোটারদের কাছ থেকেও ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আপাতত এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।