স্টাফ রিপোর্টার
গাজীপুরের এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম ডিবি হারুনের ভাগিনা খ্যাত কামরুজ্জামান ওরফে মাউচ্ছা । হত্যা, সন্ত্রাস, গুম, খুন, ধর্ষণ, জমি দখল যার নিত্যদিনের কাজ। সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি আব্দুল মমিন মন্ডলের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে কামরুল পুরো গাজীপুর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। আব্দুল মমিন মন্ডলের নামে পুরো গাজীপুরে পাঁচ হাজার মামলা আছে। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে কামরুল মাছ ব্যবসায়ী থেকে বনে যান হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। হয়ে যান বিশাল বৈভবের মালিক, গড়ে তোলেন এক অট্রালিকা।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, কামরুল ডিবি হারুনের সেল্টারে বিগত সরকারের আমলে হয়ে উঠেন বেপরোয়া। করেন সরকারি ও সাধারণ মানুষের জমি দখল। যার কারণে কামরুলকে পুলিশ প্রশাসন থেকে রাজনীতিবিদ,
শিল্পপতি সহ সবাই সমিহ করতে থাকে। তথ্য সূত্র আরো জানা যায়, সরকারি ৪ শত একর খাস
জমি ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ৫১ বিঘা জমি কামরুল দখল করে ৪ হাজার কোটি টাকা বিক্রি করে দেন। এ বিষয় নিয়ে সরকার তার বিরুদ্ধে মামলা
করলে কামরুল উচ্চ আদালতে সরকারের বিরুদ্ধে রিট করে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বীর দর্পে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তার বিরুদ্ধে বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে ২৪ টি মামলা হলেও এখন পর্যন্ত ধরাছোঁয়ার বাহিরে। অনুসন্ধানে জানা যায়, টঙ্গীর গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা শহীদুল ইসলামের হত্যা মামলার মুল আসামি হচ্ছে কামরুল কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলা থেকে কামরুলকে অব্যাহতি প্রদান করেন মোটা অংকের ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে। পরবর্তীতে মামলার বাদী শহিদুলের স্ত্রী রেহানাকে তার বাড়ি থেকে উঠিয়ে এনে রাতভর গণধর্ষণ করে অচেতন করে নদীর পাড়ে ফেলে রেখে চলে যায় কামরুলের পোষা গুন্ডারা। কামরুলের নজরে যার জমি পরবে সেটাই কামরুল তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে দখল করে নেয়। পেশি শক্তি ও প্রশাসনকে অপব্যবহার করে কামরুল এখন গাজীপুরের ডন। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়,
হত্যা, সন্ত্রাস, গুম, খুন, ধর্ষণ, জমি
গাজীপুর জেলায় টঙ্গী থানাধীন সাতাইশ মৌজায় মোহাম্মদ নাঈম হাসানের ১একর ৮১ শতাংশ জমিতে প্রস্তাবিত অক্সিজেন বাংলা গ্যাস লিমিটেড কোম্পানি নামের একটি প্রকল্প শুরু করলে কামরুল তা দখল করে নেয়। নাঈম হাসানকে জমি তার নামে দলিল দিয়ে দেওয়ার জন্য সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে বিভিন্ন সময় হত্যার হুমকি দেয় । নাঈম হাসানকে ২০২৪ সালের নভেম্বরে প্রথম দিকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। নাঈম সেখান থেকে কৌশলে প্রাণে বেঁচে পালিয়ে আসে। পরবর্তীতে নাঈম গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কামরুলকে প্রধান আসামি করে কয়েক জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন যার নং সি, আর ৮৯৩/২৪। মামলা করার কিছু দিন পর বিগত ১৮/১১/২৪ কামরুল ও তার সহযোগীরা নাঈমকে হত্যার উদ্দেশ্যে আবারো অপহরণ করে নেওয়ার সময় জনতা তাদের হাত থেকে নাঈমকে রক্ষা করে। উক্ত বিষয় নিয়ে নাঈম হাসান ২০/১১/২৪ ইং তারিখে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর আইনী সহায়তা ও সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে আবেদন করেন। নাঈম হাসান তার আবেদনে উল্লেখ করেন তার ক্রয়কৃত জমিও বাংলা অক্সিজেন গ্যাস লিমিটেড এর জমি দখল করে নিয়ে যায় কামরুল। নাঈমের জমি কামরুলকে দলিল করে দেওয়ার জন্য বারবার চাপ প্রয়োগ করে আসছে।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, জুলাই গণ অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগে ও পুলিশের সাথে মিলে কামরুল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে শতাধিক মানুষ হত্যা করে।
বর্তমানে কামরুল নিজের ব্যবসা ও সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে আওয়ামীলীগ ত্যাগ করে বিএনপির সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছে। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা গাজীপুর সম্ভাব্য প্রার্থী হান্নান তালুকদারের সাথে কামরুল সখ্যতা গড়ে তোলেন। হান্নান তালুকদারের ডান হাত বলে খ্যাত কামরুজ্জামান। হান্নান তালুকদারের সকল রাজনৈতিক ব্যয়ভার কামরুল বহন করেন। এলাকা সূত্রে জানা যায়, গাজীপুর এলাকায় হান্নান তালুকদারের কামরুলের সাথে কয়েকটি রিসোর্ট আছে। এসকল রিসোর্টে চলে রঙ্গলীলা, সূর্য ডোবার সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসে কপোত কপোতী করে রাত্রি যাপন। সন্ধার পর চলে মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবন। মদের মৌ মৌ গন্ধ আর অশ্লীলতার শশীকলায় ঐ সকল রিসোর্টের আশপাশের এলাকায় জনগণের নাভিশ্বাস হয়ে পড়েছে।
কামরুলের বাগান বাড়িতে আছে টর্চার সেল, সেখানে চালানো হয় অসহায় মানুষদের নির্যাতন। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে প্রথমে করা হয় গুম তারপর করা হয় খুন। মৃত মানুষকে টুকরো টুকরো করে মাছের খাবারে পরিনত করে লাশের চিহ্ন বিলিন করে দেয়। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কামরুজ্জামানের সাথে তার ব্যবহৃত মুঠো ফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান যা শুনেছেন তা পুরোপুরি সত্য নহে। আপনার বিরুদ্ধে বিগত সরকারের আমলে অনেক মামলা হয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার উন্নতি অনেকের সহ্য হয়না তাই এতো গুলো মামলা করেছে। কামরুল এলাকার শত শত মানুষের হাজার হাজার বিঘা জমি দখল করে গড়ে তোলা মায়ের দোয়া রিয়েল এস্টেট ও ছায়া কুন্ড আবাসন প্রকল্প। এ ব্যাপারে ভুক্তোভোগী নাঈম হাসান বলেন, কামরুল একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী, ভূমি দস্যু সে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের আমলে শত শত মানুষের জমি দখল করে নিঃস্ব করে ফেলেছে। আমার জমি দখল করে আবার আমার কাছ থেকে জমির দলিল চাচ্ছে। আমাকে গুম করেছে ও একাধিকবার হত্যার হুমকি দিয়েছে। তার বিচার হওয়া দরকার এবং আমার জমি ফিরে পেতে প্রশাসনের সহযোগিতায় কামনা করছি। অসহায় হতদরিদ্ররা কামরুলের দখল করা জমি ফিরে পেতে প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।