স্টাফ রিপোর্টার:
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রবিবার (২৭ জুলাই) ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) এর স্থায়ী ক্যাম্পাসে নারী মৈত্রী ও ইউল্যাব ক্যালাইডোস্কোপ ক্লাবের আয়োজনে “তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবি” শীর্ষক দিনব্যাপী এক সিগনেচার ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয়, যেখানে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী স্বাক্ষর দিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার পক্ষে তাদের শক্ত অবস্থান জানান দেয়। এই ক্যাম্পেইন থেকে সংগৃহীত স্বাক্ষরগুলো প্রধান উপদেষ্টা বরাবর জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। ক্যাম্পেইনটি উদ্বোধন করেন ইউল্যাবের স্কুল অব বিজনেস এর সিনিয়র লেকচারার শওকত তানভীর রহমান।
ক্যাম্পেইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবনা গুলো তুলে ধরেন। সংশোধনী প্রস্তাবনাগুলো হলো— পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বা স্মোকিং জোন নিষিদ্ধ করা, সকল ধরনের তামাকজাত পণ্যের প্রদর্শন ও বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তরুণ-তরুণীদের রক্ষা এবং তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি বা সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের সচিত্র সতর্কবার্তা বৃদ্ধি করে শতকরা ৯০ ভাগ করা।
ইউল্যাবের স্কুল অব বিজনেস এর সিনিয়র লেকচারার শওকত তানভীর বলেন, তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে এবং বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে অন্যতম। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ অনুযায়ী, দেশের প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক তামাক ব্যবহার করেন এবং টোব্যাকো অ্যাটলাস ২০১৮-এর তথ্য বলছে, তামাকজনিত কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লক্ষ ৬১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এই বাস্তবতায় শিক্ষার্থীরা দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের জন্য যে সিগনেচার ক্যাম্পেইন করছে আমি সম্পূর্ণভাবে এর সাথে আছি।”
নারী মৈত্রীর ইয়ুথ এডভোকেট এবং ইউল্যাবের শিক্ষার্থী খাইরুল আলম সিয়াম বলেন “ পরোক্ষ ধূমপানের কারনে প্রতিবছর ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ্য মানুষ পরোক্ষভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে নারী ও শিশু। আমরা কোন ভাবেই পরোক্ষ ধূমপানের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছিনা। বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ধূমপানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান রাখা আছে। তাই ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত সহ উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবণা গুলো দ্রুত পাসের দাবিতে আমাদের এই সিগনেচার ক্যাম্পেইনের আয়োজন করেছি।
নারী মৈত্রীর প্রকল্প সমন্বয়কারী নাসরিন আক্তার জানান, ২০০৪ সালে বাংলাদেশ প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)–এ স্বাক্ষর করে এবং ২০০৮ সালে এর ৫.৩ ধারা বাস্তবায়নের গাইডলাইনেও সম্মতি দেয়। এই ধারায় বলা হয়েছে, তামাক কোম্পানির ব্যবসায়িক স্বার্থ থেকে নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা রাখতে হবে। এখনই সময় এই অঙ্গীকার রক্ষা করার। জনস্বাস্থ্যের প্রশ্নে সরকারকে বুঝতে হবে যে—তামাক কোম্পানির মতামত নয়, জনগণের জীবনই রাষ্ট্রের মূল দায়।
তিনি এসকল বিষয় বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের এই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার দাবীর সাথে সবাইকে একাত্মতা প্রকাশ করার আহ্বান জানান।