সাবিত রিজওয়ান
সেই চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে বের হয়েছি। মাঝপথে: চান্দিমা বাইপাসের ধারে কিছু হোটেলের সাইনবোর্ড চোখে পড়তেই শাহ আলম কাক্কু বলে উঠলেন,”তুফান, সামনের হোটেলে ট্রাকটা দাঁড় করাও। অনেক চালাইছো, এখন একটু লাঞ্চ করতে হবে”। কথাটা বলতে আমরা পৌঁছে গেলাম একটা রোডসাইট হোটেলে। আমরা মালবাহী গাড়ি চালাই; তাই কখনো কখনো যাত্রীবাহী গাড়ীর ড্রাইভার-হেল্পারদের তুলনায় একটু দু-চার মিনিট বেশি রেস্ট নিতে পারি। আজকেও ঠিক তাই—ডিমভাজা দিয়ে খিচুড়ি খেয়ে রেস্ট নিচ্ছি।
পকেট থেকে স্মার্টফোনটা বের করে ডাটা অন করামাত্রই ফোনে নোটিফিকেশনের হিড়িক পড়ে গেল। “Clear All”-এ ক্লিক করতে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখনই চোখে পড়ল এক অদ্ভুত খবর—
“দু’মাস আগের মৃত মানুষ, গত তিনদিন ধরে জীবত!”
প্রথমে ভূয়া খবর ভেবে পাত্তা দিলাম না। ইদানীং কাজের চাপ এতটাই যে, ফোনটাও ঠিকমতো ব্যবহার করি না। মালবাহী গাড়িরও একটা রুটিন থাকে। মালিকরা চায় মাল ঠিক সময়ে পৌঁছাক। হয়তো কখনো চার মিনিটের জায়গায় ছয় মিনিট দাঁড়ানো চলে—জুরুরিতে বা ভুলবশত। কিন্তু আট মিনিট হলে ডিসিপ্লিন নিয়ে প্রশ্ন উঠে। আমাদেরও তো করতে হয় জবাবদিহিতা।
এখন আর রেস্ট নয়।
ফোনটা পকেটে রেখে কাক্কুর পাশে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম। এবার গাড়ি চালানোর পালা কাক্কুর। তিনি ইগনিশনে চাবি ঘোরাতেই গাড়িটা গম্ভীর গর্জন দিয়ে স্টার্ট নিল।
আমি ততক্ষণে পকেট থেকে আবার ফোনটা হাতে তুলে ফেসবুকে ঢুকতে স্কিনে ভেসে উঠল এমন আরো একটি পোস্ট… তাতে মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগল—আদৌ কি মৃত মানুষ জীবিত হতে পারে?
আমি কাক্কুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,”কাক্কু, মৃত মানুষ কি জীবিত হয়?”
তিনি খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন,”না। কারণ—বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে, একবার হৃদযন্ত্র থেমে গেলে, মস্তিষ্ক কার্যক্রম বন্ধ হলে, শরীরের সব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলে আর সেই মৃত মানুষ আবার জীবিত বলা না।”
তাহলে যাঁকে জীবিত বলা হচ্ছে, তাঁর চেহারার সাথে মৃত মানুষটির চেহারার মিল আছে নাকি পোস্টদাতা আমাদের বিভ্রান্ত করছে? আজকাল ভিউ, লাইক পাওয়ার আশায় অনেকে যা-তা ছড়ায়—কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা, কোনটা কি বুঝে উঠা দায় হয়ে পড়ে।
হাতের আঙুল দিয়ে মাথার চুলগুলো বিলি দিচ্ছিলাম (চুলে হাত বুলানো), ঠিক তখনই নজরে পড়ল পোস্টটির কমেন্ট বক্স—
একজন কমেন্টে লিখেছেন “এগুলো এআই (AI=Artificial Intelligence) এর কামাল। এআই আপনার দেওয়া ছবি, ভিডিও, ভয়েস, প্রোফাইল ইনফো—সবকিছু তারা সংরক্ষণ করছে। এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনার মতো করে একটা ক্লোন বানানো হচ্ছে। হতে পারে সেটা রোবট, হিউম্যানয়েড অথবা ভার্চুয়াল সত্তা। এই ক্লোন শুধু আপনার চেহারা বা কণ্ঠ নয়—আপনার আবেগ, আচরণ, স্টাইল সব নকল করতে পারবে। এই ক্লোনের শরীরে মৃত মানুষের জিন/কারিন ঢুকিয়ে তাকে জীবিত করে তোলার চেষ্টা করে চলছে তারা।”
এমন মন্তব্য আমি পড়ায়, আবার মনে মনে প্রশ্ন জাগল—আচ্ছা দাজ্জালের আগমন হচ্ছে নাতো?
“মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াতে দাজ্জাল আসবে, এসে বলবে—’আমি ইশ্বর’। বৃষ্টির আদেশ দিবে, মৃতকে জীবিত দেখানোর ভেলকি দেখাবে, এমনকি জান্নাত-জাহান্নামের মতোও বিভ্রান্তিও সৃষ্টি করবে (শয়তান ও জিনের সহয়তায়)। সত্য-মিথ্যার সীমারেখা ঘোলাটে করবে। হাদিসে আছে, দাজ্জাল হবে মানবজাতির ওপর আল্লাহর সবচেয়ে ভয়ংকর এক পরীক্ষা (ফিতনা)।”
সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ২৯৩৮-এ এসেছে:
রাসূল (সা.) বলেছেন,”একজন যুবক তার কাছে (দাজ্জালের) আসবে, যে তাকে (দাজ্জাল) বিশ্বাস করবে না… তখন দাজ্জাল তাকে হত্যা করবে এবং আবার জীবিত করার ভান করবে। তখন সেই ব্যক্তি বলবে, ‘এখন আমি আরো নিশ্চিত হয়েছি যে তুমি দাজ্জাল’।
• সে (দাজ্জাল) হবে একচোখা (বাম চোখ অন্ধ হবে)।
• তার কপালে “كَافِر” (কাফির) লেখা থাকবে।
👉 শুধু মুমিনদের চোখেই সেটা পড়বে।