নিজস্ব প্রতিবেদক:
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবিতে সিগনেচার ক্যাম্পেইন আয়োজিত হয়েছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি) ক্যাম্পাসে। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে “তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবি” শিরোনামের দিনব্যাপী এই সিগনেচার ক্যাম্পেইনে আয়োজিত হয়। নারী মৈত্রী ও বিইউবিটি’র যৌথ আয়োজনে আয়োজিত এই সিগনেচার ক্যাম্পেইনে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী স্বাক্ষর প্রদানের মাধ্যেমে আইন সংশোধনের দাবি তুলে ধরে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই স্বাক্ষরসমূহ প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে জমা দেওয়া হবে, যাতে দ্রুত সংশোধনী পাসের জন্য নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন বিইউবিটি’র ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এবিএম শওকত আলী।
ক্যাম্পেইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনাগুলো তুলে ধরেন। সংশোধনী প্রস্তাবনাগুলো হলো— পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বা স্মোকিং জোন নিষিদ্ধ করা, সকল ধরনের তামাকজাত পণ্যের প্রদর্শন ও বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তরুণ-তরুণীদের রক্ষা করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি বা সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের সচিত্র সতর্কবার্তা বৃদ্ধি করে শতকরা ৯০ ভাগ করা।
নারী মৈত্রীর প্রকল্প সমন্বয়কারী নাসরিন আক্তার জানান, ‘‘২০০৪ সালে বাংলাদেশ প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)–এ স্বাক্ষর করে এবং ২০০৮ সালে এর ৫.৩ ধারা বাস্তবায়নের গাইডলাইনেও সম্মতি দেয়। এই ধারায় বলা হয়েছে, তামাক কোম্পানির ব্যবসায়িক স্বার্থ থেকে নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা রাখতে হবে। কিন্তু আমরা দেখতে পারছি যে, বর্তমান সরকার তামাক কোম্পানির সাথে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে করছে। এটি সম্পূর্ণই আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন। জনস্বাস্থ্যের প্রশ্নে সরকারকে বুঝতে হবে যে—তামাক কোম্পানির মতামত নয়, জনগণের জীবনই রাষ্ট্রের মূল দায়।’’
তিনি তার বক্তব্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাসের সাথে সাথে তামাক কোম্পানির সাথে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্তকে বাতিল করার আহ্বানও জানান।
প্রফেসর ড. এবিএম শওকত আলী বলেন, “বর্তমানে তরুনদের মধ্যে ধূমপানের হার বেশ উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ অনুসারে, বাংলাদেশের ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে ধূমপায়ীর হার ৩৫ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষদের মধ্যে ধূমপানের হার ৫০.৬ শতাংশ এবং নারীদের মধ্যে ধূমপানের হার ১৪.৮ শতাংশ। এই ভয়াবহ বাস্তবতা মোকাবেলায় দেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা অত্যন্ত জরুরী। এ লক্ষ্যে আমাদের শিক্ষার্থীদের আয়োজিত এই সিগনেচার ক্যাম্পেইন অত্যন্ত সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দ্রুত সংশোধনের এই দাবির সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত এবং তাদের পাশে আছি।”
নারী মৈত্রীর ইয়ুথ এডভোকেট এবং বিইউবিটি’র শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান হামিম বলেন, “মূলত তামাক কোম্পানিগুলো সচেতনভাবেই আমাদের মত তরুণদের টার্গেট করে থাকে। কোম্পানিগুলো মনে করে, তরুণ বয়স থেকেই যদি এই প্রজন্মকে সিগারেট ব্যবহার শুরু করিয়ে দেয়া যায়, তাহলে তারা অন্তত ৬০ বছর পর্যন্ত সিগারেট সেবনের অভ্যাসে জড়িয়ে পড়বে। তামাক কোম্পানিগুলোর এই কূটকৌশল বন্ধ করতে এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো দ্রুত পাসের দাবিতে আমাদের এই সিগনেচার ক্যাম্পেইনের আয়োজন করেছি।’’
বিইউবিটি-তে আয়োজিত এই সিগনেচার ক্যাম্পেইনটি তরুণ প্রজন্মের সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার একটি স্পষ্ট দৃষ্টান্ত। শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগ প্রমাণ করে যে, তামাকের ভয়াবহতা সম্পর্কে তরুণ সমাজ আজ যথেষ্ট সচেতন এবং পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত। সরকারের প্রতি তাদের জোর দাবি—প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাস করে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা হোক।