"শিল্পীদের শিল্পস্রষ্টা চিত্রশিল্পী এস. এম. সুলতান"
বাংলাদেশের চিত্রকলার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম এস. এম. সুলতান। ১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট নড়াইল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এই অসাধারণ শিল্পী। আবহমান বাংলার গ্রামীণ কৃষিজীবী সভ্যতার অনুপম চিত্রায়ন তাঁকে একজন দার্শনিক হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করে তোলে । শৈশব থেকেই তাঁর আঁকার প্রতি ছিল গভীর অনুরাগ। কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি হলেও যুদ্ধ ও আর্থিক সংকটের কারণে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। তবুও নিজের প্রতিভা, অধ্যবসায় এবং স্বতন্ত্র শৈলীর মাধ্যমে তিনি বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেন।
সুলতানের শিল্পকর্মে ফুটে ওঠে গ্রামীণ জীবনের শক্তিমান কৃষক, প্রকৃতির বিশালতা এবং মানুষের শ্রমের মহিমা। তাঁর ক্যানভাসে দেখা যায় পেশিবহুল কৃষক-শ্রমিক, সবুজ শ্যামল ধানের ক্ষেত আর মাটির গন্ধমাখা জীবনের প্রতিচ্ছবি। ১৯৮২ সালে তিনি “একুশে পদক” এবং ১৯৯৩ সালে “স্বাধীনতা পুরস্কার” লাভ করেন।শুধু শিল্পী নয়, তিনি ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকও। নড়াইলে শিশুদের জন্য “শিশু স্বর্গ” ও চারুকলা শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে তিনি তাঁর জীবনদর্শনকে বাস্তবে রূপ দেন। আজ শিল্প জগতে তাকে সবাই গুরু বলেই শ্রদ্ধা নিবেদন করে তার জন্মদিনে আমি চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস খুলনা আর্ট একাডেমি পরিবারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। তার জন্মদিনে সকল শিশুর প্রতি ভালোবাসা এবং শুভেচ্ছা জানাই তার চিন্তাধারা নিয়েই আমি শিল্পচর্চার যাত্রা শুরু করি। আমি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেছি খুলনা আর্ট কলেজে এসে মহান শিল্পীর সঙ্গে আমার সরাসরি দেখা হয়নি। তার জীবনী পড়ে তার বাড়িতে গিয়ে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছি তাই শিশুদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে আমি শিল্প সাধনা করি।আমি, চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস, আর্ট কলেজে পড়াকালীন সময়ে এস. এম. সুলতানের জীবনবৃত্তান্ত জানার পর গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হই। তখন থেকেই শিশুদের নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা করি। ছাত্রজীবনে প্রতিষ্ঠা করি “নিশাত আর্ট কোচিং”। ২০০৮ সালে এর নাম পরিবর্তন করে রাখি খুলনা আর্ট একাডেমি। প্রথমে শুধু ছবি আঁকার কার্যক্রম চালু ছিল, পরে ২০১০ সালে শুরু হয় চারুকলা ভর্তি কোচিং।
আজ সফলতার ১৫ বছর পেরিয়ে খুলনা আর্ট একাডেমিতে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছে ২২৩ জন শিক্ষার্থী। ইতোমধ্যে আমার অসংখ্য শিক্ষার্থী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন। আমি গর্বিত আমাদের শিক্ষার্থীরা জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে, দেশসেরা সাফল্য অর্জন করেছে। এমনকি নবীন চারু শিল্পীদের পথপ্রদর্শক হয়ে আমিও বেশ কয়েকবার সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেছি।যমুনা টিভি আমার উপর একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করেছে, এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। গ্রাম থেকে উঠে এসে আজ আমি চিত্রশিল্পী হয়েছি এটিই আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি।শৈশব থেকেই আমি বিশ্বাস করি “আজকের শিশু, আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।” একজন শিল্পীর প্রকৃত সাফল্য নির্ভর করে তাঁর শিক্ষার্থীদের অর্জনের উপর। তাই আমরা সর্বোচ্চ দিয়ে শিশুদের গড়ে তোলার চেষ্টা করি। আমাদের লক্ষ্য শিশুদের মাঝে নিজের অর্জন বিলিয়ে দেওয়া।