নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে নেওয়া “চিলাহাটি-ভারত সীমান্ত পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত)” প্রকল্পে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। অভিযোগ উঠেছে,প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আব্দুর রহিমের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ক্যাসেল কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড কাজ সম্পূর্ণ না করেই ২৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করেছে।
সরকারের পরিবহন অডিট অধিদপ্তরের তদন্তে উঠে এসেছে, প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ,ওয়াশ পিটের রেললাইন স্থাপন, সোক ওয়েলের ফিনিশিং, জয়েন্ট কলামের ফাটল মেরামতসহ বহু কাজ অসম্পূর্ণ থাকা সত্ত্বেও সিভিলের ৯ কোটি ৪০ লাখ এবং ওয়াশ পিটের ১৪ কোটি টাকা মিলিয়ে মোট ২৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এতে সরকারি ক্রয়বিধিমালা (পিপিআর) ২০০৮-এর ৩৯(১৫) ও ৩৯(১৬) ধারা সরাসরি লঙ্ঘিত হয়েছে।
প্রকল্পের চূড়ান্ত মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২৪ সালের ৩০ জুন, এমনকি দায়দায়িত্বের সময়সীমাও শেষ। তবুও কাজ চলমান থাকা অবস্থায় বিল অনুমোদন করা হয়। সরকারি রেল পরিদর্শক (GIBR) ফরিদ আহমেদ ২০২৫ সালের মার্চে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বিস্তারিত প্রতিবেদন দেন।
নথি অনুযায়ী, প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ক্যাসেল কনস্ট্রাকশনের মালিক কাজী নাবিল আহমেদ, যশোর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। অভিযোগ রয়েছে, পিডি আব্দুর রহিমের সহায়তায় পুরো ১০০ শতাংশ বিল উত্তোলনের পর তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে পলাতক।
পিডি আব্দুর রহিম এ বিষয়ে দাবি করেছেন, “প্যাকেজ-২-এর ৮০ ভাগ কাজ শেষ করে রেলওয়ের অপারেশনাল বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু কাজ বাকি আছে, যা ৩১ আগস্টের মধ্যে শেষ করা হবে।” তবে একইসঙ্গে তিনি স্বীকার করেন, “ঠিকাদার পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় পুরো অর্থ একবারে দেওয়া হয়নি, বরং বরাদ্দ রেখে পরবর্তীতে ছাড় করা হয়েছে।”
কিন্তু বাস্তবতা হলো,২০২৪ সালের ডিসেম্বরেও প্রকল্প এলাকায় কাজ চলমান ছিল, অথচ ছয় মাস আগেই সমাপ্ত দেখিয়ে বিল দেওয়া হয়েছে। টাইম এক্সটেনশন ছাড়াই এই বিল অনুমোদন প্রশাসনিক ও আর্থিক শৃঙ্খলার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বর্তমানে আব্দুর রহিমকে বদলি করে পূর্ব বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রামে নির্বাহী প্রকৌশলী পিএন্ডডি পদে পাঠানো হয়েছে।
রেলওয়ের অভ্যন্তরে একটি সংঘবদ্ধ দুর্নীতিচক্রের যোগসাজশে সরকারি অর্থ আত্মসাতের এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। তদন্তকারীরা চিলাহাটি, পাকশী, রাজশাহী, সৈয়দপুর ও ঢাকা থেকে নথিপত্র সংগ্রহ করছেন।
সংশ্লিষ্ট মহল বলছে,দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের অর্থ লোপাটের ঘটনা ঘটতে পারে।
এ বিষয়ে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।