রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৪২ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
নিয়ামতপুরে ঘাসফুলের আয়োজনে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত জগৎটা কি সত্যিই মিথ্যার উপর দাঁড়িয়ে? বুদ্ধিজীবী দিবসে নীলফামারী জেলা পুলিশের শ্রদ্ধাঞ্জলি বাহার উদ্দিন বাংলাদেশ সীড এসোসিয়েশনের কার্ষকরী সদস্য নিবার্চিত রাহী ওয়ান ট্রাভেলস এর চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম রাহী’ “সিআইপি” মনোনীত, সর্ব মহলের অভিনন্দন গোয়াইনঘাটে যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত ডোমারে ব্যতিক্রমধর্মী চিকিৎসা ঘটনা: এক শরীরে দুই মাথার নবজাতকের জন্ম, অল্প সময়েই মৃত্যু নীলফামারীতে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে পুলিশের শ্রদ্ধাঞ্জলি পীরগাছায় রংপুর একতাবদ্ধ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের শীতবস্ত্র বিতরণ কবিতাঃ নিরীহ এক কান্না

গল্প- মুরগী খড়ে হাঁসের ছা

Coder Boss
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৬৮ Time View


লেখক- সুফিয়া ডেইজি

মুরগীর খড়ে জয়নব ১০ টা মুরগীর ডিম দিয়েছিলো বাচ্চা ফুটানোর জন্য। তারমধ্যে ৬ টির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটেছে আর ৪ টি ডিম ঘোলা হয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অথচ আরও তিনটি হাঁসের বাচ্চা আসলো কোথা থেকে? এ ভাবনায় জয়নব মনে মনে সাত পাঁচ কল্পনা করছে। মুরগীর তাপে হাঁসের বাচ্চা।এই নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় মুরগী মহলে। সবাই দল বেধে দেখতে আসে জয়নবের মুরগীকে। অন্য মুরগীরা এসে মা মুরগী কে বলছে,ভালই হলো মুরগীর বংশে হাঁসের বাচ্চা, কেউ বলছে মাটি আর পানির রানী হয়ে গেলো জয়নবের মুরগী। এভাবে পাড়ার সব মুরগী এসে এসে ঠাট্টা তামাশা করছে।মা মুরগী লজ্জা পাচ্ছে।মা মুরগী নিজে ই অসস্তিবোধ করছে যখন নিজের মুরগীবাচ্চাদের সাথে হাঁসের বাচ্চা নিজের আঁচল তলে চলে আসছে।ছোট্ট বাচ্চা তাড়িয়ে দিতে মায়া লাগছে।তাই হাঁস মুরগী কাউকেই ঘরছাড়া করা যাচ্ছেনা। তাছাড়া হাঁসের বাচ্চা তিনটা দেখতে অনেক সুন্দর আর তাদের স্বভাব ও অনেক শান্ত।যারা দেখবে সবার মায়া আসবে।মা মুরগী বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে খুব আনন্দ পাচ্ছে।এমন সময় একটা হাঁসের বাচ্চা খুব আদুরে গলায় প্যাক প্যাক করে বলছে মা মা। মা মুরগী সব বাচ্চাদের মতো তাদেরও আদর করে নিজের বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিলো।মুরগীর বাচ্চাদের মতো হাঁসের বাচ্চাগুলো ও খুশিতে মাকে জড়িয়ে ধরে মায়ের শরীরের উম গরম নিচ্ছে।মা বাচ্চাদের নিয়ে একটু খাবার খাওয়ার অপেক্ষা করছিলো এমন সময় কিছু ভাংগা চাল জয়নব দিলো। সেগুলো মুখে করে মা সব বাচ্চাকে খাইয়ে দিলো। কিন্তু মুশকিল হলো যখন ই খাবার ঠোঁটে করে মা হাঁসের বাচ্চাদের মুখে দিচ্ছে তারপর ই হাঁসের বাচ্চারা প্যাক প্যাক করে আরও চাইছে এবং খাওয়ার জন্য ভীষণ প্যাকপ্যাক করছে কারণ অল্প খাবারে তাদের ভালো লাগছেনা । মায়ের অনেক মায়া হলো। মা বললো চলো তোমাদের সবাইকে বাইরে থেকে কিছু খাইয়ে নিয়ে আসি। গাছ পালার মধ্যে যে পোকামাকড় থাকে মা মুরগী ধরে সেগুলো খাওয়া অভ্যেস করাতে শুরু করলো। কিন্তু কিছুতেই সেদিকে হাঁসের বাচ্চাদের আগ্রহ নেই। এদিক ওদিক ছুটাছুটি করতে শুরু করলো। এমন আচরণ দেখে মুরগীর বাচ্চাগুলো ও মজা পাচ্ছে তাই হাঁসদের পিছন পিছন তারাও ছুটাছুটি করতে শুরু করলো।হঠাৎ বাড়ির পাশ দিয়ে একটা নর্দমার নালা দেখে হাঁসগুলো সেখানে নেমে গেলো। হাঁসের বাচ্চাদের সে কি আনন্দ আর মাতামাতি। এসব দেখে মুরগীর বাচ্চাগুলো দূরেই দাঁড়িয়ে গেলো। একজন তো দৌঁড় দিয়ে কিককিক কককক বলে মাকে ডেকে আনলো। মা অনেক আদর দিয়ে বুঝিয়ে এক রকম টেনে উঠালো। কিন্তু হাঁসের বাচ্চাগুলো বারবার প্যাকপ্যাক প্যাকপ্যাক করে কত কি বুঝিয়ে বলছে কিন্তু মা কিছুতেই তাদের আর নর্দমায় রাখলো না।মা বললো, কককক, কককক তোমাদের কোনো কথা শোনা হবে না এখন চলো।
এভাবে ভাইবোনের মতো এক সাথে খেলাধুলা খাওয়া দাওয়া ঘুম সব চলতে থাকলো। হঠাৎ একদিন মা মুরগী তার বাচ্চাদের খুঁজে পাচ্ছেনা। তাই বাড়ির চারপাশ দেখতে গেলো। সেখানে দেখলো একটা হাঁস এক মাচার নিচে ঠিক যেখানে মুরগী বাচ্চাদের তা দিয়ে ফুটিয়েছিলো সেখানে ডিম দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তখন মুরগী কককক তিতিতিতি করে জিজ্ঞেস করলো এর আগেও কি তুমি এখানে ডিম দিয়ে গিয়েছো? হাঁস বললো,প্যাকপ্যাক প্যাকপ্যাক হ্যাঁ গো কিছু মনে করো না, ভালো জায়গা পেয়ে মাঝেমধ্যে ই এখানে ডিম দেই।মুরগী বললো, কককক তিততিতি এক মাস আগে তুমি কি অনেক গুলো ডিমের মধ্যে ডিম রেখে গিয়েছিলে?হাঁস বলল,প্যাকপ্যাক প্যাকপ্যাক,হ্যাঁ কেনো বলো তো? মুরগী সবটা বুঝিয়ে বললো,কককক তিতিতিতি।হাঁস বললো, প্যাকপ্যাক আমি কি ওদের দেখতে পারি? দুজনে অনেক খুঁজে পরে পেলো বিলের ধারের অনেক বড় একটা পুকুরের পাড়ে। মা মুরগী যেই ডাক দিলো তিতিতিতি।অমনি হাঁস আর মুরগীর বাচ্চাগুলোবললো, কককক প্যাকপ্যাক মা এসে গেছে আমাদের বকা দিবে চল যাই।তাড়াতাড়ি আসতে গিয়ে একটা মুরগীর বাচ্চা পা পিছলে পুকুরে পড়ে গেলো। কোন ভাবেই উঠতে পারলো না। তখন হাঁসের বাচ্চা লাফ দিয়ে পানিতে নেমে সুন্দরভাবে সাঁতার দিয়ে বোন মুরগীকে পানি থেকে উঠিয়ে আনলো। এটা দেখে অন্য হাঁস আর মুরগীর বাচ্চারা অবাক হয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো যে,এটা কিভাবে সম্ভব পানিতে সাঁতার?তখন মা মুরগী বললো,কককক তিতিতিতি ওরা জন্ম থেকে পানিতে বাস করতে এবং সাঁতার কাটতে পারে।শুধু আমাদের সাথে থাকার জন্য এটা ওরা বুঝতে পারে নাই। এসো পরিচয় করিয়ে দেয় তাদের মা হাঁসের সাথে। পরিচয় জেনে হাঁস আর মুরগীর বাচ্চাগুলো কোনভাবেই আলাদা থাকতে রাজি হলো না। মুরগীর বাচ্চা গুলো কোনো ভাবেই হাঁসের বাচ্চাদের যেতে দিবে না তারা তাদের মা কে বারবার বললো,কককক,কককক যেতে দিও না!হাঁসের বাচ্চাগুলোও মা মুরগী আর মুরগী ভাইবোনের সঙ্গে থাকতে চাইলো,প্যাকপ্যাক,চইচই,প্যাকপ্যাক!অবশেষে মা হাঁস তাদেরকে মুরগীর কাছেই রেখে চলে গেলো।সবাই মা মুরগীর সাথে ই নিশ্চিন্তে বাড়িতে ফিরলো।রাতে তারা দারুণ আনন্দ নিয়ে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে গেলো।গভীর রাতে শেয়াল এসে খড়ের দরজায় ঠকঠক করে দরজা খোলার চেষ্টা করছে।মা মুরগী শব্দ পেয়ে খুব বড় করে ডানা মেলে সব বাচ্চাদের নিজের পেটের নিচে আড়াল করার আপ্রাণ চেষ্টা করলো। কিন্তু এক সময় দরজা খুলে গেলো।শেয়াল এক সাথে অনেক মুরগী দেখে খুশিতে খ্যাক খ্যাক করে হাসতে শুরু করলো, তারপর খপ করে মা মুরগীর ডানা চেপে ধরলে সব বাচ্চারা নড়েচড়ে উঠলো। এমন সময় খপ করে একটা মুরগীর বাচ্চাকে মুখে চেপে ধরে নিয়ে দৌঁড় দিলো শেয়াল। মুরগীর সেই বাচ্চা অনেক কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু শব্দ করতে পারছেনা শুধু চিচি করছে! মা আমায় বাঁচাও আমি আর পারছিনা চিচি চিচি! এদিকে মা মুরগী কাঁদতে কাঁদতে পিছু পিছু যাচ্ছে আর বলছে কককক ছেড়ে দে আমার বাচ্চাকে।মা আর বাঁচাতে পারলো না।মায়ের চোখের সামনে তার বাচ্চাকে বিচিয়ে খেলো মা কিছুই করতে পারলো না।কাঁদতে কাঁদতে ফিরে এলো। ভিতরে ভয়ে অন্য বাচ্চাগুলো খড়ের এক কোণে লুকিয়ে কাঁদছে। মা অসহায়ের মতো নীরবে চোখের পানি ফেলছে।সারারাত তাদের নির্ঘুম কাটলো। পরের দিন মন খারাপ করে তারা চুপচাপ বসে থাকলো। এভাবে একদিন সব ভুলে আবারও নিজেদের মধ্যে খেলাধুলা হৈ-হুল্লোড় নিয়ে মেতে উঠলো তারা।কিন্তু হঠাৎ একদিন অনেক গুলো মেহমান আসায় দুই হাঁস ভাইকে বাড়ির মালিক ধরে জবাই করে দিলো।সেদিন সবাই মিলে খুব কেঁদেছিলো। সেই দু:খ তারা কখনো ভুলতে পারে না।তারপর থেকে মুরগী আর হাঁসরা আর কখনো হাসাহাসি দৌঁড় ছাপ করে না।চুপচাপ শান্তভাবে বেঁচে থাকে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102