সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:১১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
কবি মোঃ জাবেদুল ইসলাম নদী–মানুষ–মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়া এক সাহিত্যিক জীবন ৩বারের মত ওমানের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান সিআইপি” নির্বাচিত, ওমানে আনন্দের উল্লাস পাহাড়ের গ্রামে গ্রামে প্রাক বড়দিন উদযাপন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে নওগাঁর সাপাহারে আলোক প্রজ্বলনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন কবিতাঃ পথ প্রহরের যাযাবর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষ্যে কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত নিয়ামতপুরে ঘাসফুলের আয়োজনে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত জগৎটা কি সত্যিই মিথ্যার উপর দাঁড়িয়ে? বুদ্ধিজীবী দিবসে নীলফামারী জেলা পুলিশের শ্রদ্ধাঞ্জলি বাহার উদ্দিন বাংলাদেশ সীড এসোসিয়েশনের কার্ষকরী সদস্য নিবার্চিত

মা, আমি পড়তে চাই

Coder Boss
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৪৪ Time View

বিশ্বনাথ দাসচৌধুরী

প্রতিদিনের মতো সেদিনও বাইকে চেপে অফিস থেকে বাড়ী ফিরছি।
বেশ কিছুটা আসার পর একটি ছেলেকে চোখে পড়ল।
শাটার নামানো দোকানের সামনে বসে আছে।
বয়স ১১ কিংবা ১২ হবে।
বিমর্ষ মুখ, দুই গালে চোখের জল গড়িয়ে পড়ার স্পষ্ট দাগ।
পরনে ছেঁড়া জামা প্যান্ট। খালি পা। উসখোখুসকো চুল।

ছেলেটির সামনে বাইক নিয়ে দাঁড়ালাম।
সদ্য স্কুল ছুটি হয়েছে।
রাস্তা দিয়ে স্কুলের ছেলেমেয়েরা আইসক্রিম, বারোভাজা খেতে খেতে মহোল্লাসে বাড়ি ফিরছে।
আবার কিছু ছেলেমেয়ে তাদের অভিভাবকদের সাথে অটো টোটোতে চেপে বাড়ী ফিরছে।
আর ওই বেচারি ছেলেটি তাদের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
আর মাঝে মাঝে কংক্রিটের মেঝেতে ইটকুচি নিয়ে ছবি আঁকার চেষ্টা করছে।

এতক্ষণ আমি বাইকেই বসেছিলাম।
এবার বাইক থেকে নেমে ছেলেটির পাশে গিয়ে বসলাম।
বাবু, কি নাম তোমার?
সবুজ।
বাড়ি কোথায়?
ওইই পূবপাড়ায়।
বাড়িতে কে কে আছেন?
শুধু মা।
বাবা?
বাবা মরে গেছে।

কিভাবে মারা গেলেন, কবে মারা গেলেন এসব জানার ইচ্ছে হচ্ছিল।
কিন্তু সে পথে আর পা বাড়ালাম না।
কিছুক্ষণ থেমে ছেলেটি নিজে থেকেই বললো –
জানো তো কাকু আমার একটি দিদি ছিল। সেও মরে গেছে।
আর নিজের মনকে আটকে রাখতে পারলাম না।
কবে মারা গেল?
ওই আগের বছরে। ছেলেটি উত্তর দিল।
কিভাবে? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
দিদির যেখানে বিয়ে হয়েছিল ওখানের লোকেরা খুব বাজে।
দিদিকে টাকা চাইতো আর মারতো।
বাবা একদিন মাকে বলল মানু বিষ খেয়ে মরে গেছে।
একথা বলার সাথে সাথেই সবুজ ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো।
ছেলেটিকে দেখে, ছেলেটির কথা শুনে আমারও চোখ দুটি ছলছল করে উঠলো।
ছেলেটির কথা শুনে বুঝলাম ওর বাবা খুব বেশিদিন মারা যাননি।

কিছুক্ষণের জন্য দুজনেই চুপ করে রইলাম।
আচ্ছা সবুজ তুমি এরকম অবস্থায় এখানে বসে আছো কেন? জানতে চাইলাম।
রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করছিলুম।
মাথায় করে ইট, বালি, পাথর বইতে হচ্ছিল।
কিছুদিন করেছি। খুব কষ্ট। তাই পালিয়ে এসেছি।
জানো তো কাকু আমি স্কুলে পড়ছিলুম।
একদিন সকালে মা আমাকে চায়ের দোকানে কাজ করার জন্য নিয়ে গেল।
তখন মাকে বলেছিলুম মা আমি পড়তে চাই। কাজ করবুনি। আমি স্কুল যাবো।
মা জোর করে দোকানে রেখে এলো আমাকে।
একদিন চা এর গ্লাস ধুতে ধুতে একটি গ্লাস হাত থেকে ফসকে পড়ে গিয়ে ভেঙে গেল।
ওই দোকানিটা আমার চুলমুঠি ধরে মাথাটা দেওয়ালে জোরে ঠুকে দিল।

আমি সেদিনই কাঁদতে কাঁদতে বাড়ী চলে আসি।
মাকে বলি মা আমি পড়তে চাই। আর কাজে যাবুনি।
পরের দিনই মা রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজে পাঠিয়ে দিল।
কাকু আমি পড়াশোনা করবো। স্কুল যাবো।
আর কাজ করবুনি।
ছেলেটির পড়াশোনার প্রতি এত আগ্রহ দেখে মনে মনে তাকে কুর্নিশ জানালাম।
ছেলেটির পাশে থেকে ওর ইচ্ছে পূরণ করতেই হবে। দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলাম।
এরকম কত ছেলেমেয়ের শৈশব হারিয়ে গেছে তাদের বাবা মা এর ভুল সিদ্ধান্তের জন্য।
সমাজের, রাষ্ট্রের অবহেলায় কত ছেলেমেয়ে ন্যূনতম শিক্ষা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে।

ঠিক আছে সবুজ।
কাল থেকে তুমি স্কুল যাবে।
মা আবার কাজে পাঠিয়ে দেবে। সবুজ আশঙ্কা প্রকাশ করল।
আমি তাকে আশ্বস্ত করে বললাম আমি পড়াবো।
এই কথাটি শুনেই ছেলেটির মুখটি এক মুহূর্তের জন্য যেন খুশি খুশি মনে হল।

সবুজকে বললাম আমি তোমার বাড়ীতে গিয়ে মায়ের সাথে কথা বলবো।
তোমার বাড়ী আমাকে নিয়ে যেতে পারবে?
হ্যাঁ পারব। দৃঢ়প্রত্যয়ী সবুজ উত্তর দিল।
কালক্ষেপ না করে তাকে বাইকে চাপিয়ে ওর বাড়িতে এলাম।

বাড়ির উঠোনে মাছ ধরার জাল। স্যাঁতসেঁতে মেঝে। খড়ের চাল।
মাকে দেখেই সবুজের করুন আর্তি মা আমি পড়তে চাই।
সবুজের মা ঘর ঝাঁট দিচ্ছিলেন।
আমাকে দেখে একটা ভাঙা চেয়ার দিলেন বসার জন্য।

দিদি, ছেলেটিকে না পড়িয়ে এখানে সেখানে কাজে পাঠাচ্ছেন কেন?
কথাটি শুনে মা এর চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো।
ইশারায় বোঝাতে চাইলেন তিনি বাধ্য হয়ে কাজে পাঠিয়েছেন।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সবুজ বলে উঠলো জানো তো কাকু বাবা মরে যাবার
পর থেকে মা কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।
বুঝতে অসুবিধা হলো না কন্যা আর স্বামী হারানোর শোক সামলাতে
না পেরে তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।
বললাম সবুজের পড়াশোনার দায়িত্ব নিতে চাই। আপনার কাছে থেকেই ও পড়াশোনা করবে।
মা এর হাতে হাজার টাকা দিয়ে বললাম কাল বিকালে সবুজ এর কাছে আবার আসবো।
সবুজ আমার দিকে তাকাচ্ছে।
কাল থেকে তুমি স্কুল যাবে। উৎসাহ দিলাম তাকে।
ঠোঁটের ডগায় তার এক চিলতে হাসি ধরা পড়ল।

বাইকে স্টার্ট দিলাম। বাড়ির দিকে বাইকের চাকা গড়াতে শুরু করল।
কানে তখনও বাজছে সবুজের অদম্য ইচ্ছাশক্তির বহিঃপ্রকাশ –
মা, আমি পড়তে চাই।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102