শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:১৯ অপরাহ্ন

স্ত্রীর কাছে স্বামীর চিঠি

Coder Boss
  • Update Time : বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১১৬ Time View

লেখকঃ কামনা ইসলাম

লক্ষীটিয়া,,
প্রিয়তমা কেমন আছো?
তোমাকে দেখতে আজও খুব ইচ্ছে করে।
তা হয়তো আর কখনওই সম্ভব হবে না।
তুমি আমার বিধ্বস্ত জীবনে আর্শীবাদ হয়ে এসেছিলে।
তোমাকে পেয়ে আমার এলোমেলো অগোছালো জীবনটা পরিপূর্ণতায় ভরে ওঠেছিলো।
তোমার ছোঁয়া পেয়ে আমার মনে হয়েছিল মেঘমুক্ত আকাশে জ্বলে ওঠা পূর্ণিমার আলোয় আলোকিত হয়ে গেছি আমি ।
আমার রাতের নিরবতা ভেঙে দিয়েছিলে তুমি।
টিয়া,,
দেখো এখনও তোমার মাঝে আমার আমিটাকে খুঁজে পাবে কিন্তু সেই আমি আজ তোমার থেকে বহুদূরে। যেখানে শতো চেষ্টা করেও তুমি যেতে পারবেনা।
লক্ষীটিয়া,,
তুমি তো আমার মায়ের ভালোবাসা, আমার বাবার আদরিনি ছিলে তাই না!
তোমাকে খুব পছন্দ করে আমার মা ঘরে এনেছিলো।
মেয়ের মতো বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলো।
আমার বাবা তোমাকে বুকের মাঝে আগলে রাখতো।
আমি না হয় একটু দুষ্ট ছিলাম, অনেক খারাপ ছিলাম। কিন্তু ওই দুটি প্রাণ কি অন্যায় করেছিলো বলো?
কেনো তুমি ওই নিষ্পাপ দুটি প্রাণের সাথে এমন করলে?

লক্ষীটিয়া আমার,,
কথা বলো। কেনো কথা বলছো না? আমার প্রতিটি প্রশ্নের জবাব কি তুমি দিতে পারবে?

মায়ের মতো ভালোবাসলে মা পাওয়া যায়। তাহলে সন্তানের মতো ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে আমার মা কেনো ধরে রাখতে পারেনি?

আমার বৃদ্ধ বাবার কথা কি তোমার একবারের জন্যও মনে হয়নি। পারতে যদি আমার বাবার জায়গায় তোমায় বাবা হতো। তাকে ফেলে রেখে তুমি থাকতে পারতে?

টিয়া,,
তোমার নাম ধরে ডাকতে আমার ভীষণ ভালোলাগে।তোমাকে মনে পড়লে আজও মধ্যে রাতে খোলা আকাশের নীচে ছাদের উপর দাঁড়িয়ে পায়রা গুলোর গায়ের উপর হাত রেখে আলিঙ্গন করি।
আর ভাবি পায়রা, টিয়া,ময়না এরা সবই একই রকম।
একটু ভালোবাসার ছোঁয়া পেলে বুকের ভেতর লুকিয়ে থাকতে চায়।
আমার লুকিয়ে রাখা স্নেহের পরশ নিয়ে তাইতো নিঝুম রাতে ঘুম ভেঙে একলা দাঁড়িয়ে থাকি তোমার অপেক্ষায়।

যাক এসব কথা, আমার ভাইয়ের মৃত্যুর পরে আমাদের বাড়িটা বড় অগোছালো হলে গিয়েছিলো। মা-বাবার আপন জন বলে একমাত্র আমিই ছিলাম।
আমিও তাদেরকে তেমন সময় দিতে পারতাম না।ছোট বেলা থেকে নানির কাছে থেকেছি। তাই তো নানিকে রেখে মায়ের কাছে আসতে আমার মোটেও ভালোলাগতো না।
মায়ের অনুরোধে তোমাকে যখন বউ করে ঘরে নিয়ে এলাম তখন তোমার জন্য নিজের বাড়িতে মেহমান হিসেবে থেকে গেলাম।
তোমাকে দেখতে খুব ভালোলাগতো,দুজনের একটা জীবন হয়ে গেলো।
একসঙ্গে অনেকটা দিন পার করলাম।
তোমার মনে আছে টিয়া, আমাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকীর কথা।
কতো সুন্দর করে তুমি সেজেগুজে বসেছিলে।
আমার মা তোমার দিকে কিভাবে তাকিয়ে ছিলো, জানো মায়ের চোখ আড়াল করে আমি তোমাকে বারবার দেখতেছিলাম।
মনে হয়েছিলো আকাশ থেকে পরী নেমে এসেছে আমার ঘরে।

রঙবেরঙের বেলুন উড়িয়ে তোমার জন্মদিন পালন করালাম। আমার মা তখন বাচ্চা শিশুদের আলিঙ্গন উপলব্ধি করতে লাগলো।
শিশুদের কলরবে মাতোয়ারা হয়ে উঠবে আমার বাবা-মায়ের রাজপ্রাসাদ।
দাদিমা ডাকটা কতোইনা মধুর লাগে ।আর সেই ডাকের অপেক্ষায় আমার মা আর বেশি দিন অপেক্ষা করতে চাইলোনা।আর তুমি আমার মায়ের সেই দূর্বল তাকে মিশিয়ে দিলে ধুলায়।
একটা দুটো কথা-কাটাকাটি হলো। তুমি চলে গেলে।
তুমি লেখা পড়া শিখতে চাও, সন্তান নয়।
লেখা পড়াই কি মানুষের জীবনের সকল সুখের চাবিকাঠি?
হ্যাঁ, আমি জানি লেখা পড়া করলে সব কিছু সুন্দর হয়। অনেক সুন্দর হয় আগামীর ভবিষ্যৎ।
দেখো টিয়া,,
লেখা পড়া যেমন তোমার জীবনে সুখ এনে দিতো, ঠিক তেমনই করে একটা সন্তানও আমাদের পরিবারের জন্য শান্তি নিয়ে আসতো।
বলো সুখের মূল্য বোশি না-কি শান্তির?
যেখানে শান্তি নেই সেখানে সুখ থাকতে পারেনা।
তাই তোমার আমার জীবন থেকে চিরকালের জন্য সুখের আশায় শান্তি ও চলে গেলো।
তুমি শুধু আমাকে নয় আমাদের তিন জনকে পর করে চলে গেলে লেখা পড়া করতে।
তোমার চলে যাওয়া আমি মেনে নিতে পারিনি। এমনকি আমার মা-বাবাও নয়।
আমাকে বারবার আমার মা বলেছিলেন বিবাহ করতে, আমি রাজি হয়নি । কারণ তোমার জায়গায় অন্য কেউ আমার জীবনে আসবে না।
অনেক — অনেক ভালোবেসে ফেলেছি আমি তোমাকে।

জানো টিয়া,,
আমার রাতে ঘুম আসে না। দিনের আলো সহ্য হয়না। খাবার সামনে এলে খুব বিরক্ত লাগে।
আমি না খেয়ে, না ঘুমিয়ে বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।
মায়ের চোখের জল দেখে নিজেকে সামলাতে পারিনি।
বাবার আহাজারি আমাকে পাগল হতে বাধ্য করেছে।
আমি পাগলের মতো ছুটে বেড়াই। কোথাও আমার মন বসেনা।

হাহা করে হেসে উঠতে মন চায়।আবার মনে হয় জোরে চিৎকার করে কাঁদতে থাকি। দৌড়ে ছুটে যাই কোনো অচেনা অজানা জায়গায়।

যাক এসব কথা তুমি ভালো থাকো। আমি চলে গেলাম, যেখানে গেলাম সেখান থেকে কেউ কোনো দিন ফিরে আসেনা।

শুধু দুঃখটুকু দিয়ে গেলাম ওই দুঃখী মা নামের মমতাময়ীকে।
তোমার আবারও সংসার হবে।স্বামী হবে। সন্তানও হবে শুধু আমার মায়ের আশা পূর্ণ হলো না।

বিদায় পৃথিবী। হে পৃথিবীর মানুষ গুলো তোমরা যারা আমার বয়সী বা আমার থেকে ছোট তোমাদের কাছে মিনতি করে বলে গেলাম আমার জনমদুখিনী মাকে মা বলে ডেকো।

বিদায় পৃথিবী।

ইতি
তোমার চিরকালের জন্য আপত্তিকর
অচেনা মানুষ
একজন হতভাগ্য স্বামী।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

সরিষাবাড়িতে তুখোড় ছাত্রদল সেক্রেটারি সহঃঅধ্যাপক রুকন আর নেই মতিউর রহমান,সরিষাবাড়িঃ জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলা ছাত্র দলের সাবেক সদস্য সচীব ও সরিষাবাড়ি কলেজের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক সহঃ অধ্যাপক মাজহারুল ইসলাম রুকন গত রাত ২:৩০ ঘটিকায় উত্তরা হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেছেন।ইন্নাহ,,,,,রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। মহাদান ইউনিয়নে জন্মগত নাগরিক ও স্থায়ী বসতি শিমলা টাউন। মরহুম রিয়াজ উদ্দিন ডাক্তারের ২য় সন্তান মাজহারুল ইসলাম রুকন। মৃত্যুকালে তিনি ৩ ভাই ২ বোন ও স্ত্রী- সন্তানসহ অসংখ্য গুনগ্রাহি রেখে গেছেন। ৭ ডিসেম্বর বাদ আছর সরিষাবাড়ি আরডিএম মডেল পাইলট হাই স্কুল মাঠে তার জানাযা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। মরহুমের জানাযা নামাযে জেলা বিএনপি’র সভাপতি ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম,সরিষাবাড়ি কলেজের সহঃ অধ্যাপক খায়রুল আলম শ্যামল,আমিমূল এহসান শাহীন,পৌর বিএনপি’র সভাপতি সাবেক মেয়র ফয়জুল কবির তালুকদার শাহিন,সাধারণ হসম্পাদক জহুরুল ইসলাম পিন্টুসহ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ অধ্যাপক /শিক্ষকবৃন্দ/ কর্মচারীবৃন্দ পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও অসংখ্য গুনগ্রাহি উপস্থিত থেকে বিদহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102