শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:১৪ পূর্বাহ্ন

বোর্ড পরীক্ষার কাফেলা

Coder Boss
  • Update Time : শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ১৫০ Time View

জহিরুল ইসলাম ইসহাকী

বিদ্যার্জন মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ সাধনা। সে সাধনার শীর্ষ পরীক্ষা হলো বোর্ড পরীক্ষা, যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মেধা, শ্রম ও অধ্যবসায়ের ফসল ঘরে তুলতে চায়। পরীক্ষার দিন যতই ঘনিয়ে আসে, ততই বেড়ে যায় উত্তেজনা, প্রস্তুতি ও প্রত্যাশার চাপ। এই পরীক্ষার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে পাথরঘাটা মাদ্রাসা, যেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে ছুটে আসছে, স্বপ্ন বুনছে, কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের আশায় কলম ধরছে।

পরীক্ষা কেন্দ্রের পথে শিক্ষার্থীদের কাফেলা

পাথরঘাটা মাদ্রাসা যেন এক জ্ঞানতীর্থ, যেখানে হাজারো শিক্ষার্থী বোর্ড পরীক্ষার জন্য সমবেত হচ্ছে। কারও চোখে উদ্বেগ, কারও মুখে আত্মবিশ্বাসের ছাপ, কেউবা নীরবে দোয়া পড়ছে—হে আল্লাহ! আমার কলমের কালি যেন সফলতার গল্প লেখে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, এমনকি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেও শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে পাথরঘাটায় আসছে। কারও হাতে বই, কারও ব্যাগে কিতাব, কেউবা শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, আবার কেউ আল্লাহর দরবারে হাত তুলে দোয়া করছে। যেন এক কাফেলা, যেখানে প্রত্যেকের স্বপ্ন একটাই—বোর্ড পরীক্ষায় সফল হওয়া, পরিবার, সমাজ ও শিক্ষকের মুখ উজ্জ্বল করা।

পথের দৃশ্য: স্বপ্নবাহী এক অভিযাত্রা

শিক্ষার্থীদের এই যাত্রা যেন এক মহাসমারোহ। দূর-দূরান্ত থেকে বাস, ট্রেন, নৌকা বা রিকশায় করে তারা ছুটে আসছে। স্টেশনে, বাস টার্মিনালে, নৌকায়—সবখানেই পরীক্ষার্থীদের ব্যস্ততা। কেউ কিতাব মুখস্থ করছে, কেউ পরীক্ষার সাজেশন পড়ছে, কেউবা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাচ্ছে। যেন তারা সবাই এক মহাযাত্রায় শামিল হয়েছে, যে যাত্রার গন্তব্য সাফল্যের দুয়ার।

পাথরঘাটা মাদ্রাসার পথে পথে অভিভাবকদের ব্যস্ততা, শিক্ষকদের দোয়া, আর পরীক্ষার্থীদের আশাবাদী চেহারা এক অনন্য দৃশ্যপট তৈরি করেছে। কেউ হয়তো জীবনে প্রথমবার এত দূরের পথে পা বাড়িয়েছে, কেউবা সহপাঠীদের সঙ্গে শেষবারের মতো এভাবে বোর্ড পরীক্ষার জন্য মিলিত হয়েছে।

পরীক্ষা কেন্দ্রে এক বৈচিত্র্যময় পরিবেশ

পরীক্ষার দিন সকালে পাথরঘাটা মাদ্রাসার আঙিনা শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। একদিকে শিক্ষার্থীরা পরবর্তী পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, অন্যদিকে অভিভাবকরা পরম আগ্রহে অপেক্ষা করছে প্রিয় সন্তানের জন্য।

শিক্ষকরা আশ্বাস দিয়ে বলছেন, “মনোযোগ দিয়ে লিখবে, সময়ের সদ্ব্যবহার করবে, ইনশাআল্লাহ ভালো ফল আসবে।” কেউ স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের মাথায়, কেউবা পানি পান করিয়ে দোয়া দিচ্ছেন।

পরীক্ষার হলের সামনে শিক্ষার্থীদের মুখে ভিন্ন রকমের উত্তেজনা—”আজকের প্রশ্ন কেমন হবে?” “সময়মতো উত্তর শেষ করতে পারব তো?” কারও চোখে সাহসের ঝিলিক, কারও মনে দুশ্চিন্তার ছায়া। কিন্তু সবার হৃদয়ে একটাই স্বপ্ন—ভালোভাবে পরীক্ষা দিয়ে সফলতার মুকুট পরা।

মেধার লড়াই ও আত্মপ্রত্যয়ের পরীক্ষা

বোর্ড পরীক্ষা শুধু শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরীক্ষা নয়, এটি তাদের অধ্যবসায়, ধৈর্য ও আত্মপ্রত্যয়েরও পরীক্ষা। এক বছর, দুই বছর, বা তারও বেশি সময়ের নিরলস পরিশ্রমের ফসল ফলবে আজকের পরীক্ষার খাতায়। কোনো শিক্ষার্থী তার স্বপ্ন পূরণের জন্য কলম চালাবে, কেউ জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করার জন্য প্রশ্নের উত্তর লিখবে।

পরীক্ষার শেষ ঘণ্টা বাজলে যখন শিক্ষার্থীরা হল থেকে বের হয়, তখন কারও মুখে হাসি, কারও মনে সংশয়। কেউ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলে, “আলহামদুলিল্লাহ, ভালো হয়েছে!” আবার কেউ হয়তো আফসোস করে বলে, “আরেকটু ভালো হলে ভালো হতো!” কিন্তু সকলের হৃদয়ে একটাই বিশ্বাস—প্রচেষ্টা বৃথা যাবে না, সাফল্য একদিন আসবেই।

শেষ কথা

পাথরঘাটা মাদ্রাসায় বোর্ড পরীক্ষার জন্য ছুটে আসা শিক্ষার্থীদের এই কাফেলা কেবল একটি পরীক্ষার অংশগ্রহণ নয়, বরং এটি ভবিষ্যৎ গঠনের এক মহাযাত্রা। এটি জ্ঞানের আলোর দিকে ধাবমান এক অভিযাত্রা, যেখানে প্রত্যেক পরীক্ষার্থী একেকজন স্বপ্নবাজ পথিক।

তারা কলমের শক্তিতে গড়বে ভবিষ্যৎ, তারা শিক্ষার আলোয় আলোকিত করবে সমাজ। একদিন তারা কেউ হবে চিকিৎসক, কেউ হবে শিক্ষক, কেউ হবে সাহিত্যিক, কেউ হবে আলেম। এই বোর্ড পরীক্ষা তাদের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যার প্রতিটি পদক্ষেপে রয়েছে অধ্যবসায়, আত্মবিশ্বাস ও সাফল্যের স্বপ্ন।

আসুন, আমরা সবাই তাদের জন্য দোয়া করি—আল্লাহ তাদের পরীক্ষাকে সহজ করুন, তাদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে তারা যেন সমাজ, দেশ ও উম্মাহর সেবা করতে পারে। আমিন!

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

সরিষাবাড়িতে তুখোড় ছাত্রদল সেক্রেটারি সহঃঅধ্যাপক রুকন আর নেই মতিউর রহমান,সরিষাবাড়িঃ জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলা ছাত্র দলের সাবেক সদস্য সচীব ও সরিষাবাড়ি কলেজের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক সহঃ অধ্যাপক মাজহারুল ইসলাম রুকন গত রাত ২:৩০ ঘটিকায় উত্তরা হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেছেন।ইন্নাহ,,,,,রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। মহাদান ইউনিয়নে জন্মগত নাগরিক ও স্থায়ী বসতি শিমলা টাউন। মরহুম রিয়াজ উদ্দিন ডাক্তারের ২য় সন্তান মাজহারুল ইসলাম রুকন। মৃত্যুকালে তিনি ৩ ভাই ২ বোন ও স্ত্রী- সন্তানসহ অসংখ্য গুনগ্রাহি রেখে গেছেন। ৭ ডিসেম্বর বাদ আছর সরিষাবাড়ি আরডিএম মডেল পাইলট হাই স্কুল মাঠে তার জানাযা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। মরহুমের জানাযা নামাযে জেলা বিএনপি’র সভাপতি ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম,সরিষাবাড়ি কলেজের সহঃ অধ্যাপক খায়রুল আলম শ্যামল,আমিমূল এহসান শাহীন,পৌর বিএনপি’র সভাপতি সাবেক মেয়র ফয়জুল কবির তালুকদার শাহিন,সাধারণ হসম্পাদক জহুরুল ইসলাম পিন্টুসহ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ অধ্যাপক /শিক্ষকবৃন্দ/ কর্মচারীবৃন্দ পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও অসংখ্য গুনগ্রাহি উপস্থিত থেকে বিদহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102