শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৩১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
জগন্নাথপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে অবৈধ দোকানঘর উচ্ছেদ ডিমলা কামিল মাদ্রাসা সেন্টারে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে অধ্যক্ষ বরাবর আবেদন বিশিষ্ট ব্যাংকার মোহাম্মদ হারুন উর রশিদ সিকদারকে সংবর্ধনা সিংগাইরে ইমাম- মোয়াজ্জেমদের মাঝে সাত্তার খানের শীতবস্ত্র বিতরণ Where the Earth Sings in Light and Green ছোটগল্প: স্বরচিত কষ্ট- কলমে: ইরি অতনু কটিয়াদীতে গভীর শ্রদ্ধা ও নানা আয়োজনে মহান বিজয় দিবস পালিত মোরেলগঞ্জে মহান বিজয় দিবসে জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা নিবেদন কবি নাসির আহমেদের সম্পাদনায় খুলনার কবি সাহিত্যিকদের জীবনালেখ্য গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন বাজিতপুরে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন শিক্ষাবোর্ডের বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

স্কুল জীবনেও সেরা ছিলাম, তারপর ও স‍্যারের নাম লিখতে ভুল করেছিলাম

Coder Boss
  • Update Time : বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ১১২ Time View

অথই নূরুল আমিন
============

সেই আশির দশকের দশকের কথা, তখন ক্লাস ফোরে লেখাপড়া করি। আমার প্রথম বিদ‍্যালয়ের নাম ছিল, “মনাষ সরকারি প্রাথমিক বিদ‍্যালয়”। তখনকার সময়ের লেখাপড়া আজকের দিনের মত যেমন ছিল না আধুনিক। তেমনি ছিল না কোন স্কুল ড্রেস। তখনকার সময়ের বাবা মায়েরা প্রায় নব্বই শতাংশই,তারা শিক্ষার ক্ষেত্রে ছিলেন খুবই উদাসীন। স্কুলে গেলে যাও না গেলে নাই, এমন অবস্থা।

তবে ছেলে বা মেয়েরা স্কুলে গেলে বাবা মা আত্মীয়স্বজন সবাই খুশি হতেন একথা ঠিক। কিন্তু স্কুলে না গেলে খুব শাসন ছিল না। তাই মাঝে মাঝে কেউ স্কুলে যেত। আবার কেউ কেউ স্কুল ফাঁকি দিত। তবে তখনকার সময়েও বিশেষ করে শিক্ষকগণেরা খুবই শতর্ক থাকতেন। স্কুল ফাঁকি দিলে স‍্যারদের কাছে কঠিন থেকে কঠিন জবাবদিহি করতে হতো। অনেকের বেলায় কঠিন থেকে শাস্তি পেতে হতো।

তখনকার সময়ে মাঝে মাঝে এই স‍্যার, সেই স‍্যার স্কুলে আসতেন না। কারো ছুটি থাকত। কারো বদলি। কারো সাংসারিক কাজ থাকতো। ক্লাস ফোরে তখন আমরা ৩০ থেকে ৩২ ছেলেমেয়ে একসাথে লেখাপড়া করি। তার মধ‍্যে ১২ থেকে ১৪ জনই হিন্দু সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়ে ছিল, কাজল দাস, মিতালী সেন, রাধা, শিবানী, মনমোহন, রমা রানী, কমল চৌধুরী, গিরিধর, মালা রানী, অরবিন্দ। এদিকে মুসলমানদের মধ‍্যে বারেক মোড়ল, খোকন খন্দকার, রাজ্জাক মোড়ল, হযরত আলী, ছাত্তার মিয়া, মৌলা মিয়া, আব্দুল আজিজ ওরফে বাচ্চু মোড়ল, লিয়াকত, রহিম, মালেক, আকবর, ছোবাহান শেখ, রতন, মুকুল, আবু তাহের, রেহানা, রোজিনা, তাহেরা, রুখসানা, আফসার উদ্দিন, ফজলুল খান, লতিফ বাঘমারা, ইয়াসিন গোড়ল, আবু তাহের হাছপাড়াসহ অনেকেই।

তখনকার সময়ে আমাদের ঐ স্কুলে কোন মহিলা শিক্ষক ছিলেন না। সবাই ছিলেন পুরুষ। কখনও পাঁচজন, কখনও ছয়জন শিক্ষক থাকতেন। কখনও আবার কেউ কেউ বদলি হয়ে যেতেন। কেউ কেউ অবসরে চলে যেতেন। এছাড়া তখনকার সময়ে আমাদের লেখাপড়ায় পাঠ‍্য সূচিতে আজকের মত এতগুলো বই ছিল না। বাংলা অংক ইংরেজিসহ হাতে গোনা কয়েকটি বই ছিল মাত্র।
নোট বই,গাইড বই,ডায়েরি এসবের কোন পাত্তাই ছিল না সেই সময়। এছাড়া আলাদা কোচিং এর তেমন কোন চাপ ছিল না। প্রত‍্যেক বাড়ির বড়োরা যারা একটু লেখাপড়া জানতেন। তারাই তখন গৃহ শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতেন। কোন কোন বাড়িতে যেসকল ছেলেরা লজিং থেকে লেখাপড়া করতেন। তখন তারাই এই বাড়ির অন‍্য ছোট ছেলেমেয়েকে প্রাইভেট পড়াতেন।

তখনকার সময়ে দেশের প্রায় সবগুলো সরকারি প্রাথমিক বিদ‍্যালয়ে,সবগুলো জাতীয় দিবস পালন করা হত। সেখানে গান,কবিতা,ছড়া ছোট নাটিকাসহ অসংখ্য খেলাধুলার আয়োজন করা হতো। এই সকল দিবস গুলোতে আমি অগ্রনী ভূমিকা পালন করতাম। এবং দিবস গুলোর সাজ সজ্জার দায়িত্বে থাকতাম।
নৈহাটির স‍্যারের নির্দেশ মত আমি আয়োজন গুলো সুন্দর ভাবে করতাম। নৈহাটীর স‍্যার আমাকে অথই নামের সর্বপ্রথম পদবী দেন তিনি।

মূলত: আজকের গল্পটি যেদিনের একটি বিষয় নিয়ে লিখছি। বারটি ছিল বুধবার। আমাদের মনাষ সরকারি প্রাথমিক বিদ‍্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক ছিলেন তিনি। গ্রামের নামটি রৌহা এলাকায়। সবাই এই স‍্যারকে নবাব আলী স‍্যার বলে ডাকতেন। ছোট বড় প্রায় সবাই রৌহার স‍্যার বলে ডাকতাম। তিনি একমাত্র শিক্ষক ছিলেন তখনকার সময়ে, যিনি ঘুরে ঘুরে সকল শ্রেণির ক্লাস নিতেন তিনি এবং নিয়মিত তিনি ছুটির দিন ছাড়া স্কুলে আসতেন।

যখন যে স‍্যার ছুটিতে থাকতেন। সেই স‍্যারের ক্লাসও তিনিই নিতেন। বৃদ্ধ বয়সেও আমি এই স‍্যারকে খুবই চঞ্চল দেখেছি। এবং স্কুলের সবার প্রতি তিনি সুনজর রাখতেন এবং খুবই মন দিয়ে ছাত্রদের পাঠদানে আগ্রহী ছিলেন,আমি নিজেই দেখেছি। ঐ দিন আমরা উপস্থিত সকলেই ক্লাসে বসেছি। এমন সময় একটি বেত হাতে নিয়ে নবাব আলী স‍্যার ক্লাস রুমে প্রবেশ করলেন এবং বসলেন।
স‍্যারের নির্দিষ্ট কাঠের চেয়ারে বসেই। প্রথম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা সবাই কেমন আছো?
জী: আমরা সবাই ভালো আছি স‍্যার।
তারপর নাম ডাকার পালা। যারা উপস্থিত; উপস্থিত।
তারপর স‍্যার বললেন। আমার নাম কি? তোমরা সবাই জানো তো?
:জি স‍্যার, জি স‍্যার, জি স‍্যার। সবার এক বাক‍্য।
:তাহলে তোমরা আমার নাম লিখ।
তখন আমরা সবাই স‍্যারের নাম লিখতে শুরু করলাম। নাম লিখে একজন একজন করে স্লেট জমা দিতে থাকলাম সবাই।
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, এই স‍্যারের নাম ক্লাসের সবাই লিখল সঠিকভাবে।
কিন্তু আমি সেই নাম লিখতে বানান ভুল করেছিলাম। আর আমার হাতের লেখাও ছিল মন্দ এবং খুবই আঁকা বাঁকা।
যার জন্য সেদিন আমাকে, ক্লাসের সবার সামনে কান ধরে তিন মিনিট এক পায়ে দাড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। এবং হাতের তালুতে চারটি বেতের বাড়ি ও খেতে হয়েছিল।
শ্রদ্ধেয় স‍্যারের নামটি লিখতে যেভাবে ভুল হয়েছিল। তার বর্ণনা নিম্নরুপ;
এলাকার সবাই যখন নবাব আলী স‍্যার, নবাব আলী স‍্যার বলে ডাকতেন। তখন ঐ দিন আমি “মোহাম্মদ নবাব আলী ” এরকম ভাবে বানান করেই লিখেছিলাম।
কিন্তু না, প্রকৃতপক্ষে নামের বানানটি হবে, মোহাম্মদ নওয়াব আলী।
প্রিয় পাঠক বা পাঠিকাগণের উদ্দেশ্যে বলতে চাই লেখাজনিত ত্রুটি মার্জনীয়। এছাড়া আজকের এই গল্পের মাধ‍্যমে রৌহার প্রয়াত সেই নওয়াব আলী স‍্যারসহ আমার প্রিয় সেই মনাষ সরকারি প্রাথমিক বিদ‍্যালয়ে যাদের মাধ‍্যমে আমি প্রথম শিক্ষা গ্রহণ করেছিলাম। তাঁদের সবার প্রতি রইল আমার অন্তরের অন্তরস্থল থেকে গভীর ভালোবাসা শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। আজকে তাঁরা আর কেউ এই ভুবনে জীবিত নেই। তাঁদের সবার জন্য রইল দোয়া। যেখানেই থাকুন পরম করুণাময় যেন সবাইকে ভালো রাখেন। আল্লাহ্ যেন তাঁদের বেহেশত নসিব করুন। আমিন।
বি: দ্র: আজকে অনেকের নাম মনে নেই। এই গল্পটি আজকে থেকে প্রায় ৪৫ বছর পূর্বের। তবে নিচিন্তপুরের স‍্যার, নৈহাটীর স‍্যার,হরিয়াতলার স‍্যার, গোড়লের স‍্যার, এরকম শব্দ গুলো আজও আমার মনের মাঝে দিব‍্য ভাসমান।

সূত্র: অথই নূরুল আমিন রচিত, ৫২ বছরে তেপ্পান্ন গল্প’র বই থেকে সংগৃহিত।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

সরিষাবাড়িতে তুখোড় ছাত্রদল সেক্রেটারি সহঃঅধ্যাপক রুকন আর নেই মতিউর রহমান,সরিষাবাড়িঃ জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলা ছাত্র দলের সাবেক সদস্য সচীব ও সরিষাবাড়ি কলেজের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক সহঃ অধ্যাপক মাজহারুল ইসলাম রুকন গত রাত ২:৩০ ঘটিকায় উত্তরা হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেছেন।ইন্নাহ,,,,,রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। মহাদান ইউনিয়নে জন্মগত নাগরিক ও স্থায়ী বসতি শিমলা টাউন। মরহুম রিয়াজ উদ্দিন ডাক্তারের ২য় সন্তান মাজহারুল ইসলাম রুকন। মৃত্যুকালে তিনি ৩ ভাই ২ বোন ও স্ত্রী- সন্তানসহ অসংখ্য গুনগ্রাহি রেখে গেছেন। ৭ ডিসেম্বর বাদ আছর সরিষাবাড়ি আরডিএম মডেল পাইলট হাই স্কুল মাঠে তার জানাযা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। মরহুমের জানাযা নামাযে জেলা বিএনপি’র সভাপতি ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম,সরিষাবাড়ি কলেজের সহঃ অধ্যাপক খায়রুল আলম শ্যামল,আমিমূল এহসান শাহীন,পৌর বিএনপি’র সভাপতি সাবেক মেয়র ফয়জুল কবির তালুকদার শাহিন,সাধারণ হসম্পাদক জহুরুল ইসলাম পিন্টুসহ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ অধ্যাপক /শিক্ষকবৃন্দ/ কর্মচারীবৃন্দ পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও অসংখ্য গুনগ্রাহি উপস্থিত থেকে বিদহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102