লেখক: দেবিকা রানী হালদার।
১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত আমরা বৃটিশ শাসনে ছিলাম! ভারত স্বাধীন করতে ১৯০ বছরে হিন্দু মুসলিম মিলে প্রায় পোনে দুই বিলিয়ন মানুষ জীবন দিয়েছিলেন! সীমান্ত গান্ধী গফ্ফার খানের ভাষায় হিন্দুর থেকে মুসলমান বেশী মরেছিলো! গুজরাটের মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও লিয়াকত আলী খান মুসলমানের জন্য আলাদা আবাস ভুমি চাইলে বেধে গেলো বিভাজন! বৃটিশ বিরোধী সংগ্রাম হলো কাধে কাধ মিলিয়ে হিন্দু মুসলমান! হঠাৎ মুসলমান হিন্দু ভাগাভাগি দেশ কেন? রেডক্লিফ বিভাজন ম্যাপ তৈরি করলেন, তিনি পাঞ্জাব বাংলা কাশ্মীর ভাঙালেন! বাংলার পূর্ব অংশ ২০০০ মাইল দূরের পাকিস্তানের লেজ বানিয়ে দিলেন!নেহেরু কে রাজী করাতে লন্ডন বসবাসরত কৃষ্ণ মেননের হাত ছিলো। দাদা ভাই প্যাটেলের কথা ছিলো আপদ বিদায় হোক! বৃটিশের ইচ্ছে ছিলো ধর্মীয় বিষবৃক্ষ রোপনের তাতে শত ভাগ সাহায্য করেছেন “বল্লভ ভাই প্যাটেল”! মাওলানা আজাদ বলেছিলেন,” জিন্নাহ পাকিস্তান তৈরি পতাকা করলে প্যাটেল তা বহন করেছেন! ভারত ভাগ করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কোনদিন আমাদের ক্ষমা করবে না, আজীবন ধর্মীয় বিভেদে জীবন যাবে! বাস্তবে আজ তাই দেখছি!
আমি বলতে চাই কিছু বিষয় যা এ প্রজন্ম জানে না!
জামাতের ইসলামের জন্মদাতা পিতা মাওলানা মওদুদী, মাওলানা আযাদ, খান গফ্ফার খানদের মত জ্ঞানী গুনি রাজনীতিবিদ ভারত ছাড়তে চাইলেন না! মাওলানা আবুল আলা মওদুদী বলেছিলেন, “আমি কয়জন মুসলমান নিয়ে লাহোর করাচী বাস করবো তার থেকে বেশী মুসলমান তো ভারতে ফেলে যাচ্ছি, আমি কাকে মুসলমান বানাবো আল্লাহর কুরআন শিখায়ে! যাদের মুসলমান দাওয়াত দেবো সেই হিন্দু ভাইদের তো ভারতে ফেলে যাচ্ছি! শেষ পর্যন্ত পরাজিত মওদুদী সীমান্ত গান্ধী গফ্ফার খানেরা গেলেন কিন্তু মাওলানা আজাদ সহ অনেক ইসলামি পন্ডিত ভারতে রয়ে গেলেন! মওদুদী কে মার্শাল আইয়ুব খান ফাঁসির রায় দিয়েছিলেন ইসলামি প্রচারের জন্য।যদিও কয়েক বছর জেলে রেখে তাকে ফাঁসি দিতে পারে নাই! মাওলানা আযাদ বলেছিলেন, গত কাল সুভাষ বোসের লাল ফৌজ হিন্দু মুসলমান এক বাংকারে বসে এক বোতল পানি ভাগাভাগি করে খেলো আজ হঠাৎ তার সৎ ভাই হয়ে যায় কিভাবে?
আমার পূর্বের ইতিহাস বর্নার কারন ধর্মীয় ভাগাভাগি বিভেদ হানাহানি কোন ধর্মীয় বিশ্বাস বা আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার জন্য নয়, ক্ষমতার চেয়ারে বসা হোক তা কোন ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী কে নিয়ে! ভারত নেতৃত্ব হিন্দু মুসলিম সমান অবদান বৃটিশ থেকে স্বাধীনতায় মেনে নিয়ে ” ধর্মনিরপেক্ষ” ভারত করলেন আর পাকিস্তান সামরিক যাঁতাকল ও ধর্মীয় তকমা লাগিয়ে এক ধর্মের দেশ করলেন! আজ-ও সেই নির্বুদ্ধিতা ও চতুরতায় পাকিস্তান জ্বলছে, জ্বলে পুড়ে খাক হচ্ছে বাংলাদেশ!
৩০ লক্ষ শহীদ ও ৪ লক্ষ ধর্ষিত মা-বোনের অবদানে বাংলাদেশ সেখানে হিন্দু মুসলিম মিলে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ তৈরি করেছে!
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ব স্বীকৃত জ্ঞানী গুনী রাজনৈতিক নেতা ছিলেন তাই তিনি গনতন্ত্র সমাজতন্ত্র জাতীয়তাবাদ ও সার্বভৌমত্ব, চার পিলার বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করেছিলেন ১৯৭২ সালে! বিশ্বে সমাদৃত হয়েছিলো সে সংবিধান!
১৯৭৫ সালের পর থেকে আবার ও বিশ্বের সেরা সংবিধান কে ১৮০° উল্টো ধাবিত করে বৃটিশ আমলের ৩৭ শতাংশ সংখ্যা লঘূ ১৯৪৭ সালে, ১৯৬৫ সালে, ১৯৭১, ২০০১ সালে এবং বিতাড়িত হতে হতে নির্ভরশীল সেই বঙ্গবন্ধুর দল ক্ষমতায় থাকতেও বন্ধ হয় নাই সংখ্যা লঘূ উৎপাত ও তাড়া খেয়ে দেশ ত্যাগ! এখন মাত্র ৬ শতাংশ হিন্দু আছে যারা ৫ ই আগষ্ট ২০২৪ থেকে অনিশ্চিত জীবন আতঙ্ক নিয়ে বেঁচে আছে!
বিগত পতিত সরকার দেশ ছেড়েছে তাদের নির্বুদ্ধিতা অসতর্কতা জনগণ থেকে বিছিন্নতা বড় কারন। কিন্তু নতুন সরকারের কাছে আমরা সবাই তো সমান দৃষ্টি পাওয়ার কথা। দুই শত দিনের বেশী অতিবাহিত হলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের, কিন্তু কাঁচামরিচ পেয়াজ রশুন তরকারি মাছমাংস শাড়ী লুঙ্গী কেনা গরীবের হাতের নাগালে আনতে পারলো না! আজ রিক্সা ভ্যান টেম্পু কাচামালের ব্যবসায়ী বস্তির পলিথিনের ছাদ ওয়ালা ভিক্ষুক বাসায় কাজ করা বুয়া ও বলছেন, “হাসিনা সরকার ভালো ছিলো”!
সরকার সেন্ট মার্টিন রেষ্ট্রিকটেড করেছেন যা পর্যটক শূন্য করবে দেশকে, পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত, রবীন্দ্রনাথ মুজিব, জয়নাল আবেদীন, বেগম রোকেয়া জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অপমান এবং ১৯৭১ সালের আগের চরিত্রে না খাওয়া অস্থির পাকিস্তান প্রীতি ছাড়া এক মিলিমিটার ও ভালো পদক্ষেপ নিতে পারেন নাই! প্রগতিশীলদের গলাটিপে ধরা আর একটা কাজ করতে পেরেছেন! পাকিস্তান যদি সমর্থন করেন ” ইমরান খানকে” করেন, সেনা বাহিনীর গৃহপালিত “শেহবাজকে কেন, ফিলিস্তিনে গাঁজা হত্যার পক্ষে না থেকে বাইডেন প্রীতিতে ইসরায়েল সমর্থন কেন?
তা হলে মুসলমান বলে বলে ধোঁকার প্রপাগান্ডার দরকার কি? আদালতে উকিল হত্যা বৃটিশ পার্লামেন্টে নিন্দা জানানো হয়েছে এবং ৩ মাসে ২ হাজার সংহিতার কথা বাংলাদেশে সরকারের দলের বলে তারা আলোচনায় এনেছেন!
বাংলাদেশ আগের থেকে শতভাগ ভালো থাকার কথা ছিলো কারন বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল ছিলো দুদিন আগে আজ বাংলাদেশ আদিম যুগে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে! পাকিস্তানের জনগন রোজ বলছেন, ” হাম ক্যায়সে বাংলা মুল্লুক কো হেল্প করেগা, হাম তো খোদ ভুঁকা মরতে হ্যায়!”