চাঁদরাতের দিনটাতে অন্য দিনের তুলনায় ব্যবসা ভালো হয়। অনেক ক্রেতা সকল কাজকর্ম সেরে এই দিনটাকে কেনাকাটার জন্য বেছে নেয়। মার্কেটে অনেক কাস্টমার থাকে। দম ফেলার ফুসরতও থাকে না। রাতভর কেনাকাটা চলে। গিজগিজ করে ক্রেতা। সরগরম হয়ে ওঠে ঈদের আগের এ রাতটি। এ যেন একটি ট্রেডিশন হয়ে গেছে। ঘুম ঘুম চোখে ক্লান্তি নিয়ে রাতভর বেচাকেনা করে দোকানীরা। দোকান বন্ধ করে ভোরের দিকে কর্মচারীসহ বাড়ির দিকে রওনা দেয় কৌশিক বাবু। রোজার কটা দিন বেশ ধকল গেছে তার উপর দিয়ে। আজ তার দোকান বন্ধ থাকবে। ভেবে রেখেছে সারাদিন বিশ্রাম করবে সে। দোকানের ছেলেগুলো চলে গেল। কৌশিক বাবু একটু হেঁটে সরু গলিটার মুখে মসজিদের সামনে আসতেই মসজিদের ভেতর থেকে ফজরের আজানের ধ্বনি ভেসে আসে। পথে নামাজী লোকজনের সঙ্গে দেখা হয় কৌশিক বাবুর। সবাই তার পরিচিত। টুকটাক কথাবার্তাও হয় ওদের সঙ্গে। বাসায় প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছেন তিনি। হঠাৎ তার চোখ যায় রাস্তার মাঝখানে দাঁড়ানো সাদা রঙের একটা প্রাইভেট কারের দিকে। গ্যাঞ্জাম হচ্ছে। ষণ্ডামার্কা কয়েকজন লোক দশ বারো বছরের একটা বাচ্চা নিয়ে টানাহেঁচড়া করছে। জোর করে গাড়িতে তোলার চেষ্ঠা করছে। ছেলেটাকে অচেতন মনে হচ্ছে। কোন জ্ঞান নেই। অসাঢ় অচেতন ছেলেটার দেহ নিয়ে লোকগুলো টানাহেঁচরা করছে গাড়িতে তোলার জন্য। আকাশ এখনো পুরোপুরি ফর্সা হয়নি। কৌশিক বাবু এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লোকগুলোর কাণ্ডকারখানা দেখছিলেন। তিনি এবার জোরালো গলায় হাক মারলেন, কে রে ওখানে? কি হচ্ছে ওসব? লোকগুলো বোধহয় ভয় পেয়ে গেল। ছেলেটাকে ফেলে তড়িঘড়ি পালিয়ে গেল। কৌশিক বাবু সেখানে দ্রুত এগিয়ে গেলেন। দেখলেন ছেলেটার শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে। কিন্তু জ্ঞান নেই। কোন কিছু দিয়ে হয়তো অজ্ঞান করা হয়েছে। কৌশিক বাবু ছেলেটাকে কাঁধে তুলে পাশের একটা ফার্মেসিতে নিয়ে গিয়ে দোকানদারকে ডেকে তুলে তার জ্ঞান ফেরালেন। তারপর একটা রিকসা নিয়ে ছেলেটাকে তার বাসায় নিয়ে আসলেন। কৌশিক বাবু ও তার স্ত্রী মিলে ছেলেটার অনেক সেবা শ্রশ্রুষা করে সুস্থ করে তুললেন। তারপর অনেক কথা হলো হলো ছেলেটার সঙ্গে। বড় মায়াভরা মুখ ছেলেটার। ওর নাম মুন্না। বাবা মার একমাত্র সন্তান। বাবার সঙ্গে শত্রুতার জেরে লোকগুলো তাকে কিডন্যাপ করেছিল। টাকা পয়সার বিষয় নিয়ে রাস্তার মাঝে বাকবিতণ্ডা চলছিল। আর তখনই কৌশিক বাবু বিষয়টি দেখতে পান। অনেক লোকজন জড়ো হয়েছে তার বাসায়। প্রতিবেশী আনোয়ার সাহেব ছেলেটাকে সঙ্গে নিয়ে ঈদের নামাজ পড়তে গেলেন। বিকেল পর্যন্ত মুন্না সবার সঙ্গে খেলাধুলা আনন্দ করে ভালো সময় কাটালো। বিকেলে ওর বাবাকে ফোন করা হলো। মুন্নার বাবা মা আসলেন। ছেলেকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন। ওর মা বারবার ছেলের গালে চুমু দিতে লাগলেন। আদরের ছেলেকে বুকে নিয়ে আনন্দে কেঁদে ফেললেন ওর মা। পাশে কৌশিক বাবুর দু'চোখ বেয়ে গড়ে পড়লো কয়েক ফোঁটা আনন্দের জল।