এম আলী হুসাইন
অনু থেকে পরমাণু, ফুটাফুটা বৃষ্টি থেকে জলাশয়, কণা-কণা বালুকণা থেকে হয় পাহাড়-পর্বত বা হিমালয়। এমনি অল্প-অল্প লিখা থেকে এক সময় হয়ে যায় কাব্যে থেকে মহাকব্য।
আজ লিখছি নতুন কিছু, যা আমাকে লিখতে বারবার আহবান করছে। কেন যেন জানি ঘুম আসছে না। ঘুমের ঘরে ও সেই এই লেখার তাড়না। সাহিত্যিক বা কবির ভাষায় সব ফুটিয়ে তুলতে পারব না। তবে হ্যাঁ লেখায় এমন কিছু তুলে ধরব যা সচরাচর সবাই সব সময় তুলে ধরে না।
মেট্রোরেল বিগত ২৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর চালু হয়। নতুন কিছু আশা প্রত্যাশা নিয়ে চালু হওয়া এই মেট্রোরেল নিয়ে মানুষের প্রত্যাশার শেষ ছিল না। কখন কিভাবে আরোহন করবে সকলের মনে জমেছিল নতুন প্রত্যয়। আমিও ব্যতিক্রম নয়। চাইতাম কোন সময় সুযোগ সুবিধা হলে মেট্রোরেলে ভ্রমন করব। আর সেই সময়টা চলে আসল মার্চ ফর গাজার দিন।
১২ এপ্রিল ২০২৫ সালের এই দিন বিশ্ব ইতিহাসে এক অবর্ণনীয় দিন। বিশ্বের মানচিত্রে নতুন এক বাংলাদেশকে দেখল বিশ্ববাসী। এক দাবীতে সমগ্র বাংলাদেশ এক হয়ে যাবে হয়তো কেউ ভাবেনি। আমার ভাবনার বাহিরে ছিল কিন্ত আমরা এমন কিছু দেখলাম যা আমাদের পূর্ব প্রজন্ম দেখেনি। গাজা, ফিলিস্তিন আর আল্লাহু আকবার শ্লোগানে প্রকম্বিত ঢাকার অলিগলি। কেউ কেউ বলতে শুরু করে দিল এ যেন এক ভিন্ন রকম ফিলিস্তিন। ফিলিস্তিন যেন বাংলাদেশের মানচিত্রে চলে আসছে। সত্য সুন্দর এক অপরূপ দৃশ্য। আসলে এই দৃশ্যটা সাধারণ কোন দৃশ্য নয় যেন বিশ্বের মানবতা বিরোধীদের কলিজায় আঘাত করা।
মানবতা বিরোধী অপরাধীদের কল্পনার বাহিরের এমন কিছু উপমা তৈরী করল বিশ্বের দ্বিতীয় মুসলিম রাষ্ট্র আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। দিন অবশ্য স্বরণীয় ও ইতিহাসের কোন এক অধ্যায়ে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে যা চাইলেও কোন জালিম কখনো মুছতে পারবে না। আর এই একতার জয় গান আমাদেরকে বারবার অনুপ্রেরণা দিবে।
এই দিনটির শেষ মুহুর্তে সবাই যখন নিজ নিজ বাসায় ফিরছে আমিও সকলের সাথে বাসায় ফিরছিলাম। কিন্ত কেন যেন মনের মাঝে এক প্রকার আগ্রহ সৃষ্টি হল মেট্রোরেলে আরোহন করার নিজেও জানিনা।
আর ঠিক সেই সময় আমি শাহবাগ মেট্রোরেল ষ্টেশন অবস্থান করছিলাম, কৌতুহল বশত একটু দেখার জন্য উপরে যাই। দেখি আমার মত আরো কিছু নতুন যাত্রী আছে যারা আামার গ্রন্থব্য উত্তরায় যাবে।
আর মেট্রোরেল ঢাকা মতিজিল থেকে উত্তরা উত্তর পর্যন্ত চলাচল করছে। কমলাপুর থেকে উত্তরা উত্তর বা উত্তরা উত্তর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু থাকার কথা থাকলে সেই কমলাপুর পর্যন্ত এখনো এই রেল চালু হয়নি। যদিও মেট্রোরেলের মেগা প্রকল্পের মেগা লুটপাটের ৫ আগষ্টের পালিয়া যাওয়া ফ্যসিষ্ট সরকার এখনো অভিযুক্ত। তারা দাঁড়িয়ে আছে এই সব দূর্নীতি সহ গুম-খুন ও অসংখ্য মামলা নিয়ে। তবুও তাদের আমলের কিছু ভালো কাজের স্বনাম করতেই হয়। যেমন তারা এই মেট্রোচালু করেছে ঢাকার নাগরিকদের সুবিধার জন্য।
মেট্রোরেল স্টেশনে প্রবেশ করেই দাঁড়িয়ে গেলাম বিশাল এক লম্বা লাইনে। টিকেট নিলে এই লাইনে দাঁড়িয়েই নিতে হবে। কোন প্রকার চালাকি চলবে না। তিন ফোট পরিমাণ উঁচু শিশু থেকে নিয়ে সবাইকে টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। টিকেট ছাড়া যাত্রীরা কেউ বাহিরে যেতে পারবে না আবার বের হতেও পারবে না। সব মিলিয়ে সাধারণ ট্রেন থেকে এইটা তাদের ব্যতিক্রম আয়োজন। যেখানে আমরা আমাদের প্রচলিত ট্রেনগুলোতে গেলে দেখতে পাই কোন টিকেট ই নাই।
অন্যদিকে মেট্রোরেল শৃংখলার সাথে টিকেট বিলি করছে। বিষয়টা অনেক সুন্দর। তাই আর কি করার সবার মত লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম। ভালোই লাগছিল সিরিয়ালটা দেখে। আরো ভালো লাগল মাথার উপরে চলমান বড় বড় ফ্যানগুলো দেখে।
কিন্ত কি হল প্রায় দুই ঘন্টা হয়ে গেল এখনো সিরিয়ালের মাঝামাঝি পৌঁছতে পারিনি। খুব স্ল টিকেট দেওয়া হচ্ছে এর পর মাঝে মাঝে টিকেট কাউন্টার থেকে ঘোষণা আসে আর টিকেট নাই।
এই সব শুনার পর যাত্রীরা শ্লোগান দিয়ে বসে। দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে সব শ্লোগান দিয়েছিল এখন তারা সেই শ্লোগান র্যাল অফিসে দিয়ে কাউন্টার মাষ্টারকে সজাগ করে। তখন আবার শুরু হয় টিকেট বিলি।
এই সব দেখতে দেখতে প্রায় তিনন ঘন্টা শেষ হয়ে গেল, তাই আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। খানিকটা বসে নিলাম। এর মাঝে কিছু কিছু লোক কোথা থেকে এসে আমাদের লাইনের মাঝে দিয়ে এদিক থেকে সেদিকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন আবার শুরু হয় শ্লোগান। এ যেন এক হাসি আনন্দ ও বুকভরা কান্নার প্রকাশ। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অনেকের ই ভালো লাগছে না। আমার তো এখন ভালো লাগছিল না। লোক সমাগম এত যে লাইনে দাঁড়িয়ে সাড়ে তিন ঘন্টাপর টিকেট সংগ্রহ করছি। এই এতটা সময় ছিলাম মানুষ জ্যামের মেট্রোরেলের রেলষ্টেশনে।
এখন খানিকটা খুশি, হাসিমনে চলে গেলাম অপর তলায়, হায় হায় এবার কি? আবারোও লাইনে দাঁড়াতে হবে। এবার ট্রেনে উঠার জন্যে সিরিয়াল। এইটাও কিন্ত ছোট নয়। এবার মনটা খারাপ হয়ে গেল। টিকেট সংগ্রহ করার মত যদি আবার তিন ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তাহলে আমি শেষ। এর মাঝে সারাদিনের ক্ষুধার্ত। শ্লোগান আর মিছিল নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সুযোগ হয়নি কিছু আহার করার। তারপর তিনঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে আর কে চাইবে আরো ঘন্টাখানিক দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।
তবে আশে পাশে থাকা যাত্রীরা আমাকে শান্তনা দিল। আর তারা বলল এখানে বেশী সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। তবে ট্রেন আসার সাথে সাথে একটু শক্তি দিয়ে হলেও দ্রুত ভিতরে প্রবেশ করলেই হল।
তবে কম হয়নি চার-পাঁচটা ট্রেন চলে গেল এখনো উঠতে পারিনি। মনটা একটু দুর্বল হয়ে গেল। এবার কি করা যায়? কে বলেছে মেট্রোরেল ছড়তে? নিজেকে নিজে ভর্ৎসনা করতে থাকি। আর এইভাবেই আমার সিরিয়ালটা একটু এগিয়ে যায়। কিছুটা আশার আলো দেখলাম, যাক এবার মেট্রোরেলে যাতায়াত হবে।
সময় খেয়াল করিনি হঠাৎ মতিজিল থেকে একটি ট্রেন এসে থামল, ভিতরে প্রচুর যাত্রী একটু দাঁড়ানোর জায়গা নেই। এর মাঝে পিছন থেকে জোরে জোরে ধাক্কা দিয়ে আমাদেরকে ভিতরে ঢুকিয়ে দিলেন। কি এক অবস্থা কেমনে মেট্রোর ভিতরে আসলাম নিজেও বলতে পারিনা। তখন মেট্রোর ভিতরে খেয়াল করি, দেখি খুব সুন্দর লিখা, ন ইটিং ওর ড্রিংকিং, ন স্মকিং। তার পর কোথায় থেকে কোথায় যাবে। খুব সুন্দর করে লিখা। এর পর এসি। মানুষ জ্যামের মাঝে মেট্রোতে দাঁড়িয়ে থাকলেও এসির কারণে তাদের মনে অনেক ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। খেয়াল করলাম মেট্রোর ঘরির দিকে দেখি মাত্র রাত আটটা বেজে চব্বিশ মিনিট।
দরজা লাগিয়ে দিল, মাত্র দুই মিনিট পর পৌঁছে গেল পরবর্তী ষ্টেশনে। মাইকে ঘোষণা হল। বা দিকের দরজা খোলা হবে। আগে নামতে দিন পরে উঠুন। এভাবে একটি একটি করে প্রতিটা ষ্টেশন মেট্রো পাড়ি দিল। মিরপুর দশ আসার পর যাত্রী অনেক কমে গেল। মেট্রোর ভিতর থেকে বাহিরের দৃশ্যটা দেখতে চাইলাম। কিন্তু ভিতর থেকে শুধু ভিতরটাই দেখা গেল।
এর মাঝে কিছু মহিলা, বয়োবৃদ্ধ যাত্রীদের দেখলাম, যারা নিজ নিজ গ্রন্থব্যে নামতেও পারেননি। মানুষের এত জ্যাম ছিল যে ভিতরে একটুও নড়া-ছড়ার সুযোগ ছিলনা। দ্রুতগামী এই ট্রেনে যাওয়ার পর ও যদি নিজ নিজ স্থানে না নামতে পারি তাহলে দুই তিন ঘন্টা দাঁড়িয়ে টিকেট নেওয়ার কি মানে আছে। যাক সর্বোচ্ছ ত্রিশ মিনিটের ভিতরে উত্তরা উত্তরে চলে আসলাম।
এই সময়ের ভিতরে আমার ব্যক্তিগত ভাবে যেগুলো অনেক ভালো লাগছে সেই বিষয় অবশ্য তুলে ধরতে চাই। আবার খারাপ লাগার মত ও কিছু অভিমত রয়েছে যা সংশোধনের দাবী জানাই। আশা করি মেট্রোরেলের কিছু সময় আমাদের জীবনে হবে ভিন্ন কিছুর আলোকপাত।
খুব সুন্দর টিকেট বিতরণ ও সংগ্রহ।
দ্রুত চলা মেট্রো প্রশংসার দাবীদার, মাত্র দুই মিনিটে এক ষ্টেন থেকে আরেক ষ্টেশন যাওয়া যেন তাহার ব্যতিক্রম বৈশিষ্ট্য। এসি সিস্টেম যেন যাত্রী সেবার অনন্য উদ্যোগ। এই সব আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে তাই বারবার মেট্রোর আরোহী হতে চাই।
অন্যদিকে টিকেট সংগ্রহে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাটা খুবই বিরক্ত মনে হল। এ ক্ষেত্রে দ্রুত টিকেট বিলি করা চাই। আর যদি দ্রুত টিকেট বিলি সম্ভব না হয় তাহলে যাত্রী সেবায় সিরিয়ালে বসার নিয়ম চালু করা সময়ের দাবী। কারণ আমি দেখছি এই সময় অনেক মহিলা মন খারাপ করেছে, অনেক বয়োবৃদ্ধ নিজেদের খুব প্রকাশ করেছে। যুবকদের অনেকে বিরূপ মন্থব্য করেছে যা মেট্রোর হীতে বিপরীত হতে পারে। এর পর ট্রেনের ভিতরে পর্যাপ্ত সিট বা আসন নাই। সিট বা আসন চাই। আর সিট ও আসন অনুযায়ী টিকেট বিলে করলে মানুষের মনে আনন্দ বাড়বে। মেট্রো আরো এগিয়ে যাবে। যাত্রী সেবায় মেট্রো আরো অবদান রাখবে বলে আশা। মেট্রো এই প্রজন্ম থেকে আগামীর প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাবে। অবশেষে মেট্রোর মেগাপ্রকল্পের মেগা লুটপাটকারী হিসাবে অভিযুক্ত কারাবন্দি পলকের কথা দিয়ে ইতি টানছি সে বলেছিল " ইন্টারনেট বন্দ করি নাই, বন্দ হয়েগেছে। আর সম্প্রতিক বলেছে "সাত দিনের জন্য হলেও সবার কারাগারে থাকা উচিত" এই ভাবে যদি মেট্রো কর্তৃপক্ষ কোন এক সময় " আমরা অসুবিধা তৈরী করি নাই, এমনিতে অসুবিধা হয়ে গেছে" তাহলে কি কেউ মেনে নিবে? সুবিধা-অসুবিধাগুলো চিহৃিত করার জন্য হলেও সচেতন সবাইকে একদিনের জন্য হলেও মেট্রো আরোহন করা উচিত। কেননা মেট্রো আমাদের প্রজন্মের দ্রুতগামী এমন যান যা আরোহন করলে সত্যে রকেটের কথা মনে পড়ে যায়। আমি বুঝতে পেরেছি মেট্রো তার স্বকক্ষে যদি এত দ্রুত চলতে পারে তাহলে রকেট কেন পারবে না? মেট্রো আমাদের জাতীয় সম্পদ। মেট্রোরেলের সফলতা চাই। বাংলার প্রতিটা শহর হউক মেট্রোরেলের আবাসভূমি।