কলমেঃ চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস
ফিলিস্তিনিদের মুক্তির সংগ্রাম আরব বিশ্বের অনেক পুরনো ক্ষত। আজকে যা কিছু ঘটবে আগামী দিন তাই হবে ইতিহাস। বর্তমান জেনারেশন যারা যৌবনে করেছে পদার্পণ,যারা পড়ালেখার সঙ্গে সম্পৃক্ত পৃথিবীর অতীতের অবিশ্বাস্য ঘটনা জানার জন্য পড়াশোনা করেন ,জানার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন তাদের ইতিহাস পড়তে হবে। ইতিহাস পড়লে অতীতের মানুষদের চারিত্রিক বিষয়গুলি ধারণা পাওয়া যাবে। আমি একজন চিত্রশিল্পী ছবি আঁকার স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি থেকে শহরে ছুটে এসেছি। এই সাধনায় জড়িয়ে পড়ে হয়তো চিত্রশিল্পী হতে পারিনি হয়েছি একজন রক্তমাংসের মানুষ। যখন দেখি কোন মানুষের উপরে অন্যায় অবিচার হয় প্রকৃতির উপরে অমানবিক কার্যক্রম হয় তখনই আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। সবাই বলে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ। কিন্তু আমার দৃষ্টি থেকে আমি মনে করি প্রকৃত মানুষ হওয়া খুব কঠিন কাজ। আমি যখন কোন পরিচিতি তুলে ধরার জন্য কোন ফরম ফিলাপ করতে যাই যখনই অপশন পাই কোন ধর্ম জাত নিয়ে তখনই কেমন একটা কষ্ট লাগে ।কারণ শিল্পীরা ধর্ম বা কোন দলের সঙ্গে যুক্ত থাকে না তারা প্রাকৃতিক পরিবেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে । ফিলিস্তিনিদের উপরে অমানবিক নির্যাতন নিয়ে শিল্পী,কবি এবং গবেষকরা যার যার স্থান থেকে পত্রপত্রিকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে তুলে ধরছেন। তেমনি আমিও আজকে ফিলিস্তিনিদের নিয়ে লেখার চেষ্টা করছি। যার অনুপ্রেরণায় আমার লেখার জগৎ স্বচ্ছল হয়েছে তিনি হলেন সাংবাদিক প্রবীর বিশ্বাস। দাদার প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ। আমি যখন দেখতে পাই গাজার উপরে কিভাবে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ করছেন তখন এই যুদ্ধের কারণটা একটু জানার চেষ্টা করি। গুগলের সহযোগিতা নিয়ে ইতিহাস থেকে যতটুকু বুঝতে পারলাম তাই তুলে ধরার চেষ্টা করছি ।আসুন আমরা এই অমানবিক নির্যাতনের কারনটা সম্পর্কে একটু জানি। ১৯৪৮ সাল থেকে ইসরাইল দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে, কিন্তু মূলত তার অনেক আগে থেকেই ইহুদিরা মুসলমানদের উচ্ছেদ করে আসছিল। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, ১৯২০ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে ইউরোপ থেকে দলে দলে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে যেতে শুরু করেন। ইউরোপে ইহুদি নিপীড়ন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভয়ংকর ইহুদি নিধনযজ্ঞের পর সেখান থেকে পালিয়ে তারা নতুন এক মাতৃভূমির স্বপ্ন দেখছিল। আর সেই স্বপ্ন ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড দখলের মধ্যদিয়ে বাস্তবে রূপ দেয় তারা। এতেই ক্ষান্ত হয়নি ইসরাইল। নিজেদের আগ্রাসন টিকিয়ে রাখতে দীর্ঘ ৭৫ বছর ধরে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর চালিয়ে যাচ্ছে নির্যাতন। ইহুদি রাষ্ট্র গড়তে একের পর এক প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের। ১৯৩৬ সালের ফিলিস্তিনি আরব বিদ্রোহ এর বড় প্রমাণ। এই দীর্ঘ সময়ে ফিলিস্তিনিদের সংগ্রাম জায়গা করে নিয়েছে আরবি সাহিত্যে। কবিতা হয়ে উঠেছে দ্রোহ ও ক্ষোভ প্রকাশের মাধ্যম। ফিলিস্তিনিদের ঘটনা নিয়ে নানা সময়ে নানা দেশের কবিরা কবিতা লিখেছেন। যুগ যুগ ধরে ফিলিস্তিন অসহায় ও নিরাশ্রয় মানুষের আশ্রয় ভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ইউরোপ আমেরিকা থেকে বিতাড়িত অনেক মানুষের আশ্রয়স্থল ফিলিস্তিন। ইসরাইলের যেসব অধিবাসী আদি ফিলিস্তিনিদের অবৈধভাবে উচ্ছেদ করছে তারাও বিভিন্ন দেশ থেকে এসে আশ্রয় নিয়েছিল ফিলিস্তিনের পূণ্যভূমিতে। বুঝতেই পারছেন তারা কতটা মানবিক।এই মানবিক মানুষের উপরে অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে ইজরায়েল।আমার মনে হয় হয়তো প্রিয়জনকে খুশি করার মত জীবন, কিংবা শত্রুকে ক্রোধান্বিত করার মত মৃত্যু। সম্মানী মানুষের জীবনের দুটি চাওয়া,হয় লক্ষ্য অর্জন নয় জীবন বিসর্জন।গাজার মানুষ গুলো নিজের মাতৃভূমিকে ভালোবেসে মাটি কামড়িয়ে শত্রুর মুখে ছুঁড়ে দিচ্ছে গাজাবাসির প্রাণ,তাদের হৃদয় হয়েছে লোহা এবং শরীর দিচ্ছে অগ্নিশিখায়।
যেভাবে গাঁজা বাসীর উপরে আক্রমণ করছেন বাসস্থান গুলো চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। পারমাণবিক বোমায় খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান সবকিছু কেড়ে নিয়েছে এটা মানব সভ্যতার ইতিহাস কে হার মানিয়েছে।আমার মনে হয় অত্যাচারীরা সীমা ছাড়িয়ে গেছে।যুদ্ধ আর জীবন নেয়াই ইজরায়েলদের কাজ । বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ছুড়ে দিলাম ঘৃনা ও নিন্দা। তারা মানুষের আচরণ সভ্যতা কে ভুলে গিয়েছে। আমি মনে করি যুদ্ধ অনেকভাবেই করা যায়। পারমাণবিক বোমা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে যুদ্ধ করাটা উচিত নয়। একজন মানুষ জন্মগ্রহণ করার পরে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে কিন্তু পারমাণবিক বোমার মাধ্যমে একজন মানুষের মৃত্যু হলে তার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খুঁজে পাওয়া যায় না। যে শিশুটি আজকে জন্মগ্রহণ করেছে সে শিশুটি কাউকে ভালোভাবে চিনে উঠতে পারার আগেই পৃথিবীর মায়াজাল ছিন্ন করে পরপরে চলে যেতে হয়েছে নৃশংস ভাবে। আবার দেখা গেছে একটা পরিবারের সকল অভিভাবকদের মৃত্যু হয়েছে বেঁচে রয়েছে শুধু মাত্র একটা শিশু। সেই শিশুর জীবনের দ্বায়িত্ব কে নেবে? এমন কথা ভাবতেই আমার দুচোখে জল গড়িয়ে পড়ে। তাই এই লেখার কারন। সবাই একটু ভেবে দেখুন তো ইজরায়েলের এটা কেমন সভ্যতা?আমি একজন চিত্রশিল্পী হিসেবে এর চরম নিন্দা জানাই। এই যুদ্ধ বন্ধ করে অন্যভাবে আইনি প্রভাবে আইনি ক্ষমতায় যুদ্ধ করা উচিত। জোর জুলুম করে নিরীহ শিশুদের প্রাণ কেড়ে নেওয়া মানুষের কাজ হতে পারে না ।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অমানবিক নির্যাতন দেখে আমরা সবাই মর্মাহত । আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি যারা এ ধরনের হত্যাযজ্ঞ করছেন তাদের মানবিক চেতনা বৃদ্ধি করে দাও যাতে তারা অনুশোচনা করেন। নিজের পরিবারের সন্তান এবং পরিজনকে দেখে যেন উপলব্ধি করেন। গাঁজাবাসীর পরিবারকে যেমন করে খন্ড করে উড়িয়ে দিচ্ছেন এটা মানব সভ্যতার গণ্ডিতে পড়ে না। আমি একজন বাঙালি তাই বাংলায় লিখে আমার প্রতিবাদ করলাম। বাংলাদেশ থেকে সাধারণ জনগণরা বিভিন্ন ভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই।হয়তো যারা বাংলা পড়তে পারবে তারাই হয়তো আমার মনের অনুভূতি জানতে পারবে এবং আমি আরো বলবো রাষ্ট্রীয়ভাবে যতটুকু পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব ততটুকু বাংলাদেশ থেকে পদক্ষেপ নিয়ে এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞকে বন্ধ করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাই।
সর্বশেষ আবারও ইসরাইল বাসী গাজাবাসীদের প্রতি যে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে তার নিন্দা জানাই।
রচনা কালঃ ২২-০৪-২০২৫ ইং