এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট:
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার ৪০ নম্বর আড়ুয়াবর্ণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে চরম ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিশুদের পাঠদান চলছে। ছাউনি ছিঁড়ে ঝুলে পড়েছে টিন, দেয়ালে দেখা দিয়েছে ফাটল, ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে নিয়মিত—সব মিলিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ১৯৭৩ সালে সরকারিকরণ হওয়া এই বিদ্যালয়ের চার কক্ষবিশিষ্ট টিনের ছাউনির ভবনটি নির্মাণ হয় ১৯৮৯ সালে। বর্তমানে ভবনের দুটি কক্ষে পাঠদান, একটি কক্ষে স্টোর ও একটি কক্ষে অফিস চালানো হয়। কিন্তু বয়সের ভারে ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটল, ছাউনি ছিঁড়ে পড়া ও পলেস্তারা খসে পড়া যেন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জানায়, বৃষ্টি হলে টিন ফুটো দিয়ে পানি পড়ে তাদের বই খাতা ভিজে যায়। মাঝে মাঝে ছাদের পলেস্তারা খুলে পড়ে গায়ে। এতে তারা ভয় পায় এবং অনেক সময় অভিভাবকরা মেঘ দেখলেই তাদের স্কুলে পাঠাতে চান না।
স্থানীয় অভিভাবক শাহা আলম দাড়িয়া ও রহমত মোল্লা বলেন, “আমাদের সন্তানদের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পড়াশোনা করতে হচ্ছে। প্রতিদিন আতঙ্কে থাকি। এত বছরেও ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়নি।”
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুলতানা পারভিন ও লোপা রানী মণ্ডল জানান, শ্রেণিকক্ষের স্বল্পতা ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কারণে শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে বসে এবং পাঠদানে সমস্যা হয়।
প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ ফেরদাউস হোসাইন জানান, বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২২৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ৯টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে ৮ জন শিক্ষক কর্মরত, যার মধ্যে একজন ডেপুটেশনে আছেন। দীর্ঘদিন ধরে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আবেদন করেও শুধুমাত্র আশ্বাসই মিলেছে, কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
চিতলমারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অচ্যুতানন্দ দাস জানান, “বিদ্যালয়ের ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ, তা আমরা জানি। প্রধান শিক্ষকের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অভিভাবকরা অবিলম্বে নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন, যেন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নিরাপদ পরিবেশে পাঠদান করতে পারে।