আজ মা দিবস! বিশ্বের সমস্ত মায়ের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতা! আমি কাছের থেকে যে তিনজন মা’কে দেখেছি তার একজন আমার মা, চাচী ও আমার শ্বাশুড়ি! সবাইকে খুব পরিশ্রমী দেখেছি! বিশেষ করে আমার মা ও শ্বাশুড়ি দারুন sacrificed মানুষ ছিলেন! সন্তানদের অনেক কষ্টে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তবে মানুষ করেছেন সে ভাষাটা ব্যবহার করতে পারলাম না! শেষ জীবনে আর-ও স্বাচ্ছন্দ্যে রাখা যেতো যা আজ মনে হয়! আমাদের সবার যোগ্যতা ছিলো একাকীত্ব ঘুচাতে একজন বেতন ভুক্ত সেবিকা রেখে দেয়ার, ধার করা সেবা যে সত্যি পরিপূর্ণ হয় না তা দু’জনের বেলায় কাছ থেকে দেখেছি! অথচ আমাদের সামর্থ্য ছিলো কিন্তু গতানুগতিক ভাবে জীবনের শেষকালে কেউ কারো নয়, সবাই পয়সা জমায় তা সূক্ষ্ম নজর দিলে আমার নিজ ঘর থেকে সারা বিশ্ব মায়ের অবস্থা অননুমেয়!
আমার মা’কে যেমন দেখেছি! মা কখন ঘুমাতে আসতেন আর কখন বিছানা ছাড়তেন তা আমি কোনদিন দেখি নাই! আমি বড় সন্তান! স্কুল জীবনে ৫ ভাই-বোনের সংসারে মা’কে দেখতাম আমার প্রতি বিশেষ খেয়াল! একটা ডিম সিদ্ধ করে খোসা ছাড়ায় রেখে দিতেন, আমাকে বলতেন, স্কুলে যাওয়ার আগে অমুক জায়গায় ডিম আছে, খেয়ে যাস, কেউ না জানে! নারিকেল তেল তৈরি হতো নিজ হাতে, নারকেল থেকে তেল নিসৃত হওয়ার শেষে যা থাকতো তাকে গ্রামের ভাষায় “খাজা” বলতো, একা আমাকে অর্ধেক বাকীটা ভাই-বোন ভাগাভাগি! দারুন সুস্বাদু ছিলো!
মা ছিলেন বাবা-র সংসারের উন্নতির চাবিকাঠি! বাবা হারা হয়েছি অনেক আগে! ভাইবোন রা ছোট! যত বিপদ-আপদ এসেছে একক দায়িত্ব মা’কে আচ লাগতে দেই নাই! ১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে পরিবারে ডাকাতি মামলা ঢুকিয়ে দেয়া হয় বাবা তখন ও জীবিত! বাবা কিছুটা পুলিশ নিগ্রহের শিকার হন! বাড়ীর নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র পুলিশ সিচ করে নিয়ে যায়, বাবাকে গ্রেফতার সহ! ঢাকা থেকে ততকালীন সাংসদ কে জানালে তৎক্ষনাৎ তিনি আমার সাথে গ্রামে যেয়ে পুলিশ মোকাবিলা করেন! আর কোনদিন পুলিশ বাড়ীতে যেয়ে হেনস্তা করে নাই! মা তার সে কষ্ট ভুলতে পারেন নাই! তার সব ব্যবহার্য জিনিসপত্র দ্বিগুণ কিনে দিয়ে ও মা’র সে কষ্ট দূর হয় নাই! বাবা সেই মামলার টেনশনে টেনশনে অকালে মৃত্যু বরণ করেন অথচ তিনি আসামী ছিলেন না তার সন্তান ছিলো আসামি! বাবা মৃত্যুর পর ও দেশের অবস্থা পক্ষে না আসায় এবং দারুন দাগী লোকদের সাথে আসামি করায় দীর্ঘ দিন সে মামলা টানতে হয়েছে এমনকি বাদীর সাথে কম্প্রোমাইজ করে তাকে সাথে নিয়ে মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছি যা বাবা দেখে যেতে পারেন নাই!
বাবার বিশাল সংসার মা সামলিয়েছেন। জমির ধান পাট আয়ব্যয় তার এক ছেলেকে সাথে নিয়ে গ্রামে ভালো ছিলেন!আমরা কখন ও এক কেজি চাল গ্রাম থেকে নেই নাই! আমাকে ঢাকা এসে নিজে মামাকে নিয়ে আংটি পরায়ে বিয়ে দিয়েছেন! যখন বাবার ঘর আরো বড় করতে চেয়েছেন, বড় বৌ তখন তার সাথী, হয়ে গেছে, যখন পুকুর ঘাট পাকা করতে চেয়েছেন, যখন তার ছেলে, মেয়ে বিয়ে দিতে চেয়েছেন, হয়ে গেছে! ছেলে বিয়ে দিলে নতুন ঘর প্রয়োজন, বৌমা সব করে দিয়েছেন! তার মেয়ের সংসার দাড় করানো ইচ্ছে পূরন হয়েছে, জামাইকে সাইকেল কিনে দাও, টিভি কিনে দাও, মাছের প্রজেক্ট করে দাও, লেখাপড়া করায় দাও, জামাই অসুস্থ হলে ঢাকা নিয়ে বড় ডাক্তার দেখাও, সব তার বড় বৌ করে দিয়েছেন কারো অনুমতি লাগে নাই! তার সোনা দানার সখ ছিলো আমার শ্বাশুরির ধমকে আমার সহধর্মিণী পূরান করে দিয়েছেন যা আমার বিধবা মার হাতে কানে গলায় আমার শ্বাশুড়ি নিজ হাতে পরিয়ে একটা স্বর্গের আনন্দ পরিবেশ করেছিলেন, আজ ও দুই মা’কে উৎফুল্ল দেখতে পাই! অসুস্থ হলে ঢাকা মনোয়ারা হাসপাল, হলিফেমিলি হাসপাতালে, গ্রামের উপজেলা হাসপাতালের সরকারী ডাক্তার বাড়ী চলে আসছে! কিন্তু আমার মা তখন ই ভাগের মা গঙ্গা পায় না মনো কষ্টে পড়ে গেলেন যখন সবাই আয় করা শুরু করলো, সংসার ভাগ হয়ে গেলো!
সন্তানদের লোভ এসে গেলো তার সম্প্তির উপর! তার ঘরে ভাগ বাড়ীর ভাগ কোথায় কত ক্যাশ আছে —
মা সব সময় আমাকে ফাঁকা খুঁজতেন, কিছু বলতে চাইতেন, কোন সন্তান লোভী, কোন বৌ উপরে এক ভিতরে ভালো জানেনা, কোন সন্তান গলা বাজি সার, সেটা আমি হলে-ও নির্ভয়ে বলতেন! কোন বৌ কাপড়টা ধুয়ে দেয়, কোন বৌ তোমার মা তুমি দেখো বলে! আমার প্রতি মার দুটো ভুল ধারনা ছিলো, আমি অনেক টাকার মালিক, তার বড় ছেলে (আমি) এত ব্রেইনি ছাত্র ছিলো, সুযোগ পেলে বিশাল কিছু হতো!
সব মায়েরা যা ভাবেন যা অনেক সন্তানের মা রা মোকাবিলা করেন তা আমার নিজ মাকে দিয়ে তুলে ধরলাম! বাস্তবতা —
সন্তানের লোভ তিনি দেখেছেন,
কেউ তার স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে গেলো আর তার অলঙ্কার ফেরত দিলো না, কেউ চিটিং করে কেনার কথা বলে তার অনেক টাকার জমি নিয়ে গেলো তাকে পয়সা দিলো না! যেখানে লেখক নিরব দর্শক ছাড়া নিরুপায়! কেউ জমি পেলো না বলে মা’র যত্ন কমিয়ে দিলো — অখুশি তারা জমি পেলো না বলে, এবং অবহেলা বেড়ে গেলো!
মায়ের যে-কোন অসুস্থতা আমার সহধর্মিণী খবর পেতেন এবং ছুটে যেয়ে ঢাকা এনে ই হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করায় দিতেন!
মার জীবনের শেষ দিনগুলোতে মেয়ের সেবায় ছিলেন!
হয়তো সে-ও ধৈর্য হীন ছিলো! মা তখন ৯৫ বছর বয়স, দিব্বি চলাফেরা করেন! হঠাৎ অসুস্থ কিন্তু এবার আমি জানতে পারলাম না! মা ঢাকা এলেন, অন্য ছেলের বাসায়! মার শেষ জীবনের তিনটা ইচ্ছে পুরান করা গেলো না কারন তখন আর আমি একক সিদ্ধান্ত মেকার না!
১. আমার “মার মৃত্যু হাসপাতালে হলো না!’ তার অর্থ যমের সাথে ফাইট ছাড়া চলে গেলেন!
২. তার জমি বিক্রি টাকায় তিনি তার স্বামীর নামে এতিম মিসকিন কে দান বা খাবার দেয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন বার-বার, সে টাকা তার হাতে না যাওয়ায় ব্যর্থ হয়ে চলে গেলেন!
৩. তিনি ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন তার স্বামীর পাশে বা কাছাকাছি শায়িত হতে, তার শেষ ইচ্ছে পুরন করতে পারি নাই, অন্য সন্তান রা তাকে দূরে তাড়াতে চাইলো, চলে গেলো কবর দৃষ্টির বাইরে!
বড় ছেলে হিসাবে আমার এসব ব্যর্থতা আমাকে তাড়া করে, বিবেক দংশন করে এবং প্রায় সপ্তাহে মা আমাকে দেখা দেন! আমার মা কনজার্ভেটিভ ছিলেন না! আমার লেখার মডেল ছিলেন! পত্রিকায় ছবি দেখে বলেন নাই আমাকে দোযখে নিস না! কখন ও বলেন নাই, ইসলামি ব্যাংকে সুদ নাই টাকা কয়টা ওখানে রেখে দে! সব বুঝতেন!
ওপারে ভালো থেকো মা! আমাকে ক্ষমা করিও মা, যা তোমার জন্য করতে পারি নাই! যা পেয়েছি যা হয়েছি সবই মায়ের অবদান! বিশ্বের সব মা এমন সব অসুবিধা গুলো ফেস করেই চলে যান কারন সব সন্তান সমান তৈরি হয় না একজন মায়ের গর্ভে! একটা বানর ই যথেষ্ট একটা বিশাল গোলাপ বাগান সৌন্দর্য হীন কুৎসিত চেহারায় আনতে!