কলমেঃ সাহেলা সার্মিন
কেতকীর এস এস সি পরীক্ষার গার্ড। কেন্দ্রে সাড়ে নয়টায় উপস্থিত হতে হবে। রিজার্ভ গাড়ি।সাড়ে আটটায় গাড়ি ছাড়বে। কেতকী ভোর থেকে খুব দ্রুত হাতের কাজগুলো শেষ করার চেষ্টা করছে।
যথা সময়ে গাড়িতে এসে বসলো কেতকী। ছেলে-মেয়েরা ওকে দেখে দারুণ উৎফুল্ল। কয়েকজন দল বেঁধে কাছে এসে সালাম দিয়ে দাঁড়ালো।কুশলাদি জিজ্ঞাসা করলো। আপনি আমাদের সাথে যাচ্ছেন ম্যাম,এটা জেনেই আনন্দ লাগছে। ম্যাম কি খাবেন বলেন? তখনি ওখানে এক চ ওয়ালা এলো। এককাপ লেবু চা এনে দিলো মীম। চা টা খেয়ে একটু ফ্রেস লাগছে এখন।
ম্যামকে পাশে বসানোর জন্য কয়েকজন পিড়াপিড়ি করলো। কিন্তু রহমান স্যার এসে বললেন, ম্যাডাম আপনি সামনে বসেন।ভিতরে গরম। ওখানে বসলে আরামে যেতে পারবেন। গরম লাগবেনা। অগত্যা রহমান স্যারের কথামতো তাই করলো কেতকী।
গাড়ি চলছে দ্রুত গতিতে। রাস্তার দু’পাশে হরেক রকম ফলবান বৃক্ষের সারি। গ্রীষ্মের মৌসুম। গাছে গাছে আম,কাঁঠাল, লিচু,জাম,জামরুল। কিন্তু সবই অপরিপক্ক। দিন পনেরো পরে পাঁকতে শুরু করবে। গরমে কাঁচা আমের স্বাদও মন্দ নয়। কাঁচামরিচ, লবণ,কাসুন্দি দিয়ে কাঁচা আমের ভর্তা দারুণ মুখরোচক।
যমুনা নদীর পাড়ে যেই ওদের গাড়ি পৌঁছালো, শুরু হলো কালবৈশাখি ঝড়। তীব্র ঝোড়ো বাতাসে ধুলোবালি উড়িয়ে সব একাকার করে দিলো। মেয়েরা সব ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেলো। সবার মুখেই কলেমার সুর হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। রাস্তায় গাছ থেকে কাঁচা আম টপাটপ পড়তে লাগলো। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা কুড়াচ্ছে সে আম। মনে হচ্ছিল ঝড়কে উপেক্ষা করে নেমে পড়ি কুড়াতে। কাঁচা আমগুলো বারবার ডাকছিলো কেতকীকে। ছেলেবেলায় অবশ্য ঝড়ের ভিতরে আম কুড়ানো হয়নি; ঝড় থামলে আম কুড়াতাম। আজ সেই স্মৃতিগুলো কেতকীর বড্ড মনে পড়ছে।
গাড়িটি যমুনার পাড়ের মোড়টি অতিক্রম করলো। ধীরে ধীরে বাতাসের বেগ কমতে লাগলো। সবার মুখে আলহামদুলিল্লাহ, আমরা ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পারবো এতেই শুকরিয়া।