লেখকঃ ইঞ্জিঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম।
“হিন্দুর লেখা জাতীয় সঙ্গীত পাল্টানোর দরকার! এই জাতীয় সঙ্গীতে ‘৭১ নাই, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নাই, সে গান আমাদের জাতীয় সঙ্গীত হয় কিভাবে?” বলেছেন, ” “অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমান আজমী!
দুঃখজনক হলো আমান আজমী সাহেব কে আওয়ামী সরকার তুলে নিয়ে কথিত ” আয়না ঘরে” আটকে রেখেছিলো, তিনি আযান পর্যন্ত শুনতে পারেন নাই, সূর্য দেখেন নাই, মুক্ত বাতাস পান নাই! তিনি তার সাথের টাওয়ালে এত অশ্রু মুছেছেন যা জমালে একটা হ্রদ সৃষ্টি হতো! আসলে কেউ বললেন না “আয়না ঘরটা কোথায়”? অধ্যাপক নজরুল সাহেবের দাবী ছিলো, ২৬ লক্ষ ভারতীয় এদেশে চাকুরী দিলো অপরিনামদর্শী নির্বোধ শাসক হাসিনা, সে ২৬ লাখ গেলো কই?
আজমী সাহেবের সাথে বিগত সরকারের কি শত্রুতা! তিনি কেন-ইবা ৫ ই আগষ্ট হাসিনা দেশ ত্যাগের পরের দিন ৬ ই আগষ্ট মুক্তি পেলেন?
পাঠক, জনাব আজমী অধ্যাপক মাওলানা গোলাম আযমের বড় ছেলে! গোলাম আযম সাহেব কারমাইকেল কলেজের অধ্যাপক ছিলেন! একসময় মাওলানা মওদুদীর রাজনৈতিক দল “জামাতে ইসলামে” যোগ দেন এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তান টিকিয়ে রাখতে যা করার তা সব করেছেন! তার পাকিস্তান পক্ষে বাংলাদেশ বিরোধীতায় আমি দোষ দেখি না তবে অতিরিক্ত যতটুকু করেছেন মানবতা বিরোধী কাজে তার শাস্তি তাকে সরকার দিয়েছে!
১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তন অনেকটা এখনকার পটপরিবর্তনের মত ছিলো! গোলাম আযম সাহেব পাকিস্তানি পাসপোর্টে ১৯৭৮ সালে দেশে ফেরেন, আজমী সাহেবের বাবা পাকিস্তান নাগরিক থাকলে ও এবং আজমী সাহেব এসএসসি এইচএসসি তৃতীয় বিভাগের পাশ হয়ে ও সেনাবাহিনী তে কমিশন পদে চাকুরী পান এবং বিএমইতে 1st class 1st gold medalist হোন! এসব বিষয় লেখকের কিছু বলার নাই!
তিনি দাবী করেছেন, জাতীয় সঙ্গীত পাল্টানোর দরকার এর দ্বিতীয় কারন হিসাবে রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠার বিরোধী ছিলেন!
পাঠক এই মিথ্যা কথাটা অনেকে বলে থাকেন! আসলে যিনি ও যাহারা বিরোধীতা করেছিলেন তারা হলেন —
১. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আশুতোষ বাবু।
২. কলকাতার এলিট হিন্দু শ্রেনী।
৩. পূর্ব বাংলার এলিট মুসলমানরা!
কেন বিরোধীতা করিছিলেন তারা তা ব্যাখ্যা দেবো না প্রবন্ধ ছোট রাখার জন্য! তবে রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিরোধীতা করেন নাই! পরবর্তী তে রবীন্দ্রনাথ কে প্রধান অতিথি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিষেক হয়েছিল। তাকে ডিলিট উপধি দেয়া হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে! বিরোধী লোককে কেউ এত সন্মান দেয় না তা আহাম্মক ও বোঝে! সে যাক —
আমার এক সময় জনাব আজমী সাহেবের সাথে পরিচয় হয়েছিলো মনে পরে, ক্ষণিক কয়েকদিন বা সপ্তাহের জন্য! আমার এককালের চাকুরী জীবনে উনি আমার রুমের পাশ দিয়ে আসা যাওয়া করতেন, আমার অফিসটা ততকালীন সামরিক সরকার এরশাদ সেনা তত্বাবধানে দিয়েছিলেন! আমার কক্ষে ততকালীন উর্দু সিনেমার নামকরা নায়িকা “নাসিমা খান” আপা বসতেন! আজমী সাহেব সম্ভাবত তখন ক্যাপটেইন ছিলেন! এবিষয় অনেক আগে একটা আর্টিকেল লিখেছিলাম যদি কেউ পড়ে থাকেন! তাকে তখন ভালোমানুষ দেখেছি, নিয়মশৃঙ্খল একজন সেনা অফিসার! অনেকদিন আগের কথা, অনেককিছু ভুলে গেছি, হয়তো পুরাটা ই ভ্রম!
স্মর্তব্য, ১৯৭১ সালে ৩০ লক্ষ লোকের রক্ত ও চার লক্ষ মা বোনের ইজ্জত তথা এক লক্ষ জারজ শিশু দত্তক হিসাবে বিদেশের বেঁচে থাকার যে বাংলাদেশ তার গায়ের রং ধূসর এখন! এ বাংলাদেশ আমরা চাই নাই অতএব সঙ্গীত পতাকা জাতির জনক স্মৃতি সৌধ শহীদমিনার পাল্টে গেলে এমন কি ক্ষতি?
ভালো থাকেন সুস্থ থাকেন। সত্যি জানেন সত্যি বলেন?