রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫, ০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন এর প্রতিবেদন সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী

Coder Boss
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫
  • ২৩৮ Time View

 

লেখকঃ মাওলানা শেখ মিলাদ হোসাইন সিদ্দিকী

তাদের দাবি:-সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদের অধীনে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্যমূলক বিধান বিদ্যমান, বিশেষ করে বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ ও ভরণপোষণের ক্ষেত্রে ধর্মীয় আইন অনুসরণ বাধ্যতামূলক হওয়ায় নারীরা বৈষম্যের শিকার হন। যার ফলে পুরুষ ও নারীর মধ্যে বিদ্যমান অসমতা তাদের সামাজিকভাবে পশ্চাৎপদ করে রাখছে। নারী নির্যাতন, পারিবারিক সহিংসতা ও অভিভাবকত্ব সম্পর্কিত আইনের বাস্তবায়নে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আদালতের অপর্যাপ্ত সংখ্যা, দীর্ঘসূত্রিতা, পুরাতন অবকাঠামো এবং ন্যূনতম মৌলিক সুবিধার অভাবে নারীরা নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

আসুন আমরা কুরআন ও হাদিসের আলোকে জানবো নারীর বৈষম্য অধিকার ও মর্যাদা

ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা নারীকে যথাযথ মর্যাদা দিয়েছে এবং তাদের সত্যিকার স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করেছে।

পশ্চিমা সংস্কৃতির শিল্পকৌশলে তা এক কলংক হিসাবে বিরাজ করছে। আজকের পশ্চিমা ও ধর্মহীন সমাজে নারী অধিকার সম্পর্কে বহু সনদ ও ঘোষণা থাকা সত্ত্বেও স্ত্রী প্রহার, বাণিজ্যিক পণ্য হিসাবে এবং অন্যান্য অসৎ উদ্দেশ্যে তাদেরকে ব্যবহার করা একটি নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্বের ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে, রাসূলুল্লাহ সা.-এর আগমনের পূর্বে নারীর অধিকারের বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না। সভ্যতার দাবিদার ইহূদী-খৃস্টান ধর্মের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলে আমরা দেখি যে, পিতা, সন্তান বা স্বামীর সম্পত্তিতে নারীর কোনো অধিকার দেওয়া হয় নি, কেবলমাত্র পিতার যদি কোনো পুত্র সন্তান না থাকে তবে তার সম্পত্তি কন্যারা লাভ করবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে এ সকল কন্যা পিতার বংশের বাইরে কাউকে বিবাহ করতে পারবে না, কারণ এতে এক বংশের সম্পত্তি অন্য বংশে চলে যাবে!!

কুরআনের আলোকে নারীর অধিকার মর্যাদা ও প্রাপ্য।

নারী ও পুরুষ উভয়েই মহান আল্লাহর সৃষ্টি……

নারী ও পুরুষের মধ্যে কিছু “বৈষম্য” বা “পার্থক্য” দিয়েই তিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আর এ “বৈষম্য” বা “পার্থক্য”-ই মানব সভ্যতার টিকে থাকার মূল ভিত্তি।
আল্লাহ বলেন:-
وَلا تَتَمَنَّوْا مَا فَضَّلَ اللَّهُ بِهِ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ لِلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِمَّا اكْتَسَبُوا وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِمَّا اكْتَسَبْنَ وَاسْأَلُوا اللَّهَ مِنْ فَضْلِهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا
“আল্লাহ যা দিয়ে তোমাদের কাউকে কারো উপরে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন তোমরা তার লালসা করো না। পুরুষ যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ এবং নারী যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ। আর তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ।”

নারীকে উপেক্ষা করে মানবতার জন্য যে কর্মসূচি তৈরি হবে তা হবে অসম্পূর্ণ। এমনকি নারীকে উপেক্ষা করে সামাজিক ভারসাম্যও রক্ষা হবে না। আল্লাহ তায়ালা সুরা হুজরাতের ১৩নং আয়াতে ঘোষণা করেন— یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ اِنَّا خَلَقۡنٰکُمۡ مِّنۡ ذَکَرٍ وَّاُنۡثٰی وَجَعَلۡنٰکُمۡ شُعُوۡبًا وَّقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوۡا ؕ اِنَّ اَکۡرَمَکُمۡ عِنۡدَ اللّٰہِ اَتۡقٰکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَلِیۡمٌ خَبِیۡرٌ
হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলকে এক পুরুষ ও এক নারী হতে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অন্যকে চিনতে পার। প্রকৃতপক্ষে তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা বেশি মর্যাদাবান সেই, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি মুত্তাকী। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু জানেন, সবকিছু সম্পর্কে অবহিত।

নারীর অর্থনৈতিক অধিকার সম্পত্তির মালিকানার ক্ষেত্রে সূরা নিসা ৭ নং আয়াতে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন,
لِلرِّجَالِ نَصِیۡبٌ مِّمَّا تَرَکَ الۡوَالِدٰنِ وَالۡاَقۡرَبُوۡنَ ۪ وَلِلنِّسَآءِ نَصِیۡبٌ مِّمَّا تَرَکَ الۡوَالِدٰنِ وَالۡاَقۡرَبُوۡنَ مِمَّا قَلَّ مِنۡہُ اَوۡ کَثُرَ ؕ نَصِیۡبًا مَّفۡرُوۡضًا
অর্থ:-পুরুষদের জন্যও সেই সম্পদে অংশ রয়েছে, যা পিতা-মাতা ও নিকটতম আত্মীয়বর্গ রেখে যায় আর নারীদের জন্যও সেই সম্পদে অংশ রয়েছে, যা পিতা-মাতা ও নিকটতম আত্মীয়বর্গ রেখে যায়, চাই সে (পরিত্যক্ত) সম্পদ কম হোক বা বেশি। এ অংশ (আল্লাহর তরফ থেকে) নির্ধারিত।

বৈবাহিক জীবনে স্বামী ও স্ত্রী অধিকার ও কর্তব্য।

وَالۡمُطَلَّقٰتُ یَتَرَبَّصۡنَ بِاَنۡفُسِہِنَّ ثَلٰثَۃَ قُرُوۡٓءٍ ؕ  وَلَا یَحِلُّ لَہُنَّ اَنۡ یَّکۡتُمۡنَ مَا خَلَقَ اللّٰہُ فِیۡۤ اَرۡحَامِہِنَّ اِنۡ کُنَّ یُؤۡمِنَّ بِاللّٰہِ وَالۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ؕ  وَبُعُوۡلَتُہُنَّ اَحَقُّ بِرَدِّہِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ اِنۡ اَرَادُوۡۤا اِصۡلَاحًا ؕ  وَلَہُنَّ مِثۡلُ الَّذِیۡ عَلَیۡہِنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ۪  وَلِلرِّجَالِ عَلَیۡہِنَّ دَرَجَۃٌ ؕ  وَاللّٰہُ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ
অর্থ:- যে নারীদের তালাক দেওয়া হয়েছে, তারা তিন বার হায়েয আসা পর্যন্ত নিজেদেরকে প্রতীক্ষায় রাখবে। আর তারা যদি আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান রাখে, তবে আল্লাহ তাদের গর্ভাশয়ে যা-কিছু (ভ্রুণ বা হায়য) সৃষ্টি করেছেন তা গোপন করা তাদের পক্ষে বৈধ হবে না। তাদের স্বামীগণ যদি পরিস্থিতি ভালো করতে চায়, তবে এ মেয়াদের মধ্যে তাদেরকে (নিজেদের স্ত্রীত্বে) ওয়াপস গ্রহণের অধিকার তাদের রয়েছে। আর স্ত্রীদেরও ন্যায়সঙ্গত অধিকার রয়েছে, যেমন তাদের প্রতি (স্বামীদের) অধিকার রয়েছে। অবশ্য তাদের উপর পুরুষদের এক স্তরের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আল্লাহ পরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়।

হাদিসের আলোকে নারীর মর্যাদা ও মহত্ত্ব।

মা হিসেবে নারীর সম্মান…
عنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَال: قَال رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْجَنَّةُ تَحْتَ أَقْدَامِ الأمهات
অর্থ:- নবীজি (স) বলেন, মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত।

কন্যা হিসেবে নারীর সম্মান…
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَا مِنْ رَجُلٍ تُدْرِكُ لَهُ ابْنَتَانِ فَيُحْسِنُ إِلَيْهِمَا مَا صَحِبَتَاهُ أَوْ صَحِبَهُمَا إِلَّا أَدْخَلَتَاهُ الْجَنَّةَ-
ইবনু আববাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, ‘যে কোন মুসলমান ব্যক্তির দু’জন কন্যা হবে, সে তাদের ভালভাবে রক্ষণাহেবণ করবে যতদিন তারা দু’জন তার কাছে থাকবে, তাহলে তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে’ (ইবনু মাজাহ হা/৩৬৭০)।

বোন হিসেবে নারীর সম্মান… হাদীসে এসেছে, বোনকে সেবাযত্ন করলে আল্লাহ প্রাচুর্য দান করেন।

স্ত্রী হিসেবে নারীর সম্মান…
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ الدُّنْيَا كُلَّهَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ.
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘সম্পূর্ণ পৃথিবী সম্পদ। আর পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তম সম্পদ হচ্ছে সৎ চরিত্রবান নারী’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৮৩)।

পরিশেষে বলবো…
নারীবাদিতা, পুরুষতান্ত্রিকতা, স্ত্রীর অত্যাচার, স্বামীর অত্যাচার ইত্যাদি বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে বিচ্ছিন্নতা তৈরি নয়, আমাদের মূল দায়িত্ব হলো, অধিকার ও দায়িত্ববোধের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। বিশেষত নারীত্বের কারণে নারীর প্রতি বৈষম্য, দৈহিক বা সামাজিক দুর্বলতার কারণে যেন নারী কখনো বৈষম্যের শিকার না হন তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে,
পাশাপাশি নারী অধিকারের দোহাই দিয়ে নারীকে তার প্রকৃতির বিরুদ্ধ কাজে লিপ্ত করা, নারীকে তার প্রকৃতি নির্ধারিত কর্ম করতে নিরুৎসাহিত করা ইত্যাদি মানবতা বিধ্বংসী প্রবণতা রোধ করতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক প্রদান করুন। আমীন!!

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102