রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫, ০৫:৩৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

প্রতিভার এক পুরুষ কাজী নজরুল ইসলাম

Coder Boss
  • Update Time : শনিবার, ২৪ মে, ২০২৫
  • ৮৭ Time View

 

চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস:

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
পিতা: কাজী ফকির আহমদ, মাতা: জাহেদা খাতুন।কবি মুসলিম পরিবারের সন্তান এবং শৈশবে ইসলামী শিক্ষায় দীক্ষিত হয়েও তিনি বড় হয়েছিলেন একটি ধর্মনিরপেক্ষ সত্তা নিয়ে। একই সঙ্গে তার মধ্যে বিকশিত হয়েছিল একটি বিদ্রোহী সত্তা। জন্ম ২৫ মে ১৮৯৯ চুরুলিয়া, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান নাম পশ্চিম বর্ধমান জেলা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) গুণী নজরুল পৃথিবীতে আলো দিতে এসেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর প্রধান বাঙালি কবি ও সঙ্গীতকার। তার মাত্র ২৩ বৎসরের সাহিত্যিক জীবনে সৃষ্টির যে প্রাচুর্য তা তুলনারহিত। সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও তার প্রধান পরিচয় তিনি কবি। তার জীবন শুরু হয়েছিল অকিঞ্চিতকর পরিবেশে। স্কুলের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন।নজরুলের কলম ছিলেন সঙ্গী তার অবসরে হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশি এই বিস্ময়কর দ্বৈতসত্তায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী এবং মানবতায় হৃদয়সংবেদী প্রেমিক জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বহু গুণের এ মানুষ গান, কবিতা, গল্প, নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। যেখানে তিনি একাধারে গীতিকার, সংগীত পরিচালক, কাহিনিকার, সুরকার ও নির্মাতা হয়ে কাজ করেছেন। অভিনয় করেছেন দাপটের সঙ্গে। প্রতিভার এই বীর পুরুষ সৃষ্টির ক্ষেত্রে ছিলেন আজীবন গভীর নিমগ্ন এক স্রষ্টা। অস্থিরতা তাঁর বৈচিত্র্য ভাবনার সহচর। ব্যক্তিজীবনে নিরন্তর অবস্থান ক্ষেত্রে পরিবর্তন সেই অস্থিরতা ও চাঞ্চল্যের পরিচয় বহন করে। নির্দিষ্ট বিষয়ে থেমে থাকেননি তিনি। তাই শুধুই অভিনয় আর পরিচালনা নয়, রীতিমতো প্রশিক্ষকের কাজ করতেন নজরুল। সহশিল্পীদের অভিনয় শেখাতেন, গান তুলে দিতেন শিল্পীদের। এমনকি উচ্চারণও ঠিক করে দিতেন। ত্রিশের দশকে নজরুল পার্সি মালিকানাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাডান থিয়েটার্সের ‘সুর ভাঙারি’ পদে নিযুক্ত হন। এই পদটি ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন নজরুল। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার তাকে রাজন্যদ্রোহিতার অপরাধে কারাবন্দী করেছিল। তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীন অবিভক্ত ভারতের বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন। বিংশ শতাব্দীর বাঙালির মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশে তাকে “জাতীয় কবি” হিসাবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তার কবিতা ও গানের জনপ্রিয়তা বাংলাভাষী পাঠকের মধ্যে তুঙ্গস্পর্শী। তার মানবিকতা, ঔপনিবেশিক শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে দ্রোহ, ধর্মীয়গোঁড়ামির বিরুদ্ধতা বোধ এবং নারী-পুরুষের সমতার বন্দনা গত প্রায় একশত বছর যাবৎ বাঙালির মানসপীঠ গঠনে ভূমিকা রেখে চলেছে। রজন্ম ও প্রাথমিক জীবন সৈনিক জীবন, সাংবাদিক জীবন, পারিবারিক জীবন বিদ্রোহী নজরুল, অসুস্থতা, সাহিত্যকর্ম, চলচ্চিত্র রাজনৈতিক দর্শন ইত্যাদি এবং চলোচিত্র ও অভিনয় জগতে সেই সময়ের নামকরা প্রযোজক পিরোজ ম্যাডান ১৯৩৩ সালে পায়োনিয়ার ফিলাস কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে ‘ধ্রুব’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। পুরাণের কাহিনি নিয়ে গিরিশচন্দ্র ঘোষের লেখা ‘ধ্রুব চরিত’ অবলম্বনে চলচ্চিত্রটি নির্মিত ছিলেন ও ছবির গান লেখেন এবং সংগীত পরিচালনা করেন। তিনি দেবর্ষি নারদের চরিত্রে অভিনয় করেন এবং একটি গানে কণ্ঠ দেন। যেমন স্বর্গের সংবাদবাহক এবং দেবর্ষি নারদের চরিত্রে সব সময় দেখা যায় জটাধারী, দীর্ঘ শ্মশ্রুমণ্ডিত বৃদ্ধ একজনের চেহারা। কিন্তু নারদ নজরুল ছিলেন একেবারেই ব্যতিক্রম। তাঁর নারদ এক সুদর্শন যুবক। হাসি মুখ, ঝাঁকড়া চুল, ক্লিন শেভড। গলায় মালা। চলচ্চিত্রের পর্দায় এভাবেই নারদরূপে আবির্ভূত হলেন নজরুল। অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জীবনসংগ্রাম নিয়ে নির্মিত হয়েছিল। এ ছবির জন্য ‘ঝুমুর’ সুরে গান রচনা করেন নজরুল। তিনি কয়লাখনি অঞ্চল সম্পর্কে জানার জন্য সেখানে গিয়েছিলেন। ১৯৩৭ সালের আলোচিত চলচ্চিত্র ‘বিদ্যাপতি’। কবি বিদ্যাপতির জীবনীভিত্তিক এ ছবির মূল গল্প ছিল নজরুলের। যদিও চিত্রনাট্য, সংলাপ ও পরিচালনায় ছিলেন দেবকী বসু। ছবিটির সুরকার ছিলেন নজরুল ও রাইচাঁদ বড়াল। এ সিনেমার জন্য তিনি ১৫টি গান লেখেন। কিন্তু ১৯৪২ সালে নজরুল অসুস্থ হয়ে পড়ায় সিনেমাটি আর মুক্তি পায়নি। ১৯৪১ সালে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের পৃষ্ঠপোষকতায় নজরুল ‘বেঙ্গল টাইগার্স পিকচার্স’ নামে একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গঠন করেন। তার সঙ্গে ছিলেন আব্বাসউদ্দীন আহমদ, ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু, হুমায়ূন কবীর, এস ওয়াজেদ আলী, মোহাম্মদ মোদাব্বের, আজিজুল ইসলাম, সারওয়ার হোসেন, আজিজুল হক প্রমুখ। ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ সিনেমায় ‘পথহারা পাখি কেঁদে ফেরে একা’ গানটি অত্যন্ত সার্থকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। একইভাবে ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমায় ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটির ব্যবহার ছিল অসাধারণ। ‘লায়লা-মজনু’ সিনেমায় ‘লাইলি তোমার এসেছে ফিরিয়া, মজনু গো আঁখি খোলো’ গানটির সার্থক ব্যবহার দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। নজরুলের ‘মেহের নেগার’ গল্প অবলম্বনে ২০০৬ সালে একটি সিনেমা নির্মিত হয়। তার সুগঠিত দেহ, অপরিমেয় স্বাস্থ্য ও প্রাণখোলা হাসির জন্য বিখ্যাত ছিলেন, ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মারাত্মকভাবে স্নায়বিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে পড়লে আকস্মিকভাবে তার সকল সক্রিয়তার অবসান হয়। ফলে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যু অবধি সুদীর্ঘ ৩৪ বছর তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। বাংলাদেশ সরকারের প্রযোজনায় ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে তাকে সপরিবারে কলকাতা থেকে ঢাকা স্থানান্তর করা হয়। ১৯৭৬ সালে তাকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয়। পিক্স ডিজিজে মৃত্যু হয় ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ (বয়স ৭৭ বছর বয়সে সবাইকে কাদিয়ে চলে যায়) গুনী ব্যাক্তির সমাধী বাংলাদেশের সেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ। তিনি খুব দুঃখ কষ্টে ছিলো তাই তার অন্য নাম হয়েছিলো দুখু মিয়া।পুরস্কার জগত্তারিণী স্বর্ণপদক (১৯৪৫), স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৭৭), একুশে পদক (১৯৭৬), পদ্মভূষণ পৃথিবীর যত বাঙালি জাতি আছে তার লেখা গান কবিতা হৃদয়ে লালন করে ও ধারণ করে সঙ্গীত সাধনা করে। দেশ বিদেশে তার লেখা পাঠ্যপুস্তকে প্রকাশ পেয়েছে যা বর্তমানে প্রত্যেক শিক্ষার্থী পাঠ্যপুস্তক পড়ে। তাই নবীন-প্রবীণ সবাই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের জীবন সম্পর্কে অবগত আছেন। আমি একজন ছবি প্রেমী মানুষ ছবি আঁকার পাশাপাশি লেখালেখির সাধনা করি। তাই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কাজী নজরুল ইসলামের লেখা তাদের নীতি নৈতিকতা তাদের আদর্শ আমাকে মুগ্ধ করে। তাদের একাধিক ছবি এঁকেছি এবারের জন্মদিনে লেখার মাধ্যমে কাজী নজরুলের প্রতিকৃতি তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।

(লেখক: পরিচালক, খুলনা আর্ট একাডেমি)

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102