কলমেঃ সাকিব আল হাসান
চন্দ্রপুর গ্রামের মাটিতে একটা ছায়া যেন স্থায়ীভাবে গেঁথেছিল- সুধাময়ির ছায়া। তিনি ছিলেন অরুনের মা, আর অরুণ ছিল তার একমাত্র সন্তান। স্বামী মারা গিয়েছিলেন অনেক আগে, সুধাময়ী ছিলেন একাই, কিন্তু কখনো কারো উপর নির্ভর করেন নি। তার শক্তি ছিল প্রকৃতির নদী, বন, পাখির ডানা, কোকিলে ডাক। ছোটবেলা অরুনকে নিয়ে তিনি প্রতিদিনই বেড়াতে যেতেন নদীর পাড়ে। বলতেন প্রকৃতি হল বড় এক মা, যা সবকিছুকে আগলে রাখে। আমি যদি একদিন না থাকি তাহলে প্রকৃতির মাঝে আমাকে খুজবি। অরুণ হেসে বলল তুমি কি গাছ হয়ে ফিরবে? সুধাময়ি মৃদু হেসে বলতেন,গান হয়ে ফিরব... কোকিলের ডাক হয়ে...বছরগুলো কেটে গেল। অরুণ বড় হল কিন্তু মায়ের সঙ্গ ছেড়ে কোথাও গেল না। হঠাৎ একদিন সুধাময়ীর শরীর খারাপ হতে শুরু করল। ডাক্তার, ওষুধ, দোয়া, সবই হলো কিন্তু মা আর ফিরে এলেন না। শুধু চলে গেলেন একদিন ভোরে পৃথিবী ছেড়ে। অরুণ নিঃশব্দে চেয়ে রইলো মায়ের মুখের দিকে। মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সব শব্দ যেন থেমে গেছে। ঘর খালি, বুক খালি, মন শূন্য। বন্ধু নেই, সাথী নেই, কেবল স্মৃতি আর দুঃখে ডুবে থাকা এক আত্মা অরুণ। দিন যায়, মন পড়ে থাকে অতিতে । একদিন বিকেলে হঠাৎ বেরিয়ে পড়ল অরুণ সেই চেনা পথ ধরে যেখানে একদিন মা হাত ধরে নিয়ে গিয়েছিল। নদী বয়ে চলে, গাছগুলো আছে কোকিলের ডাক। সবই আছে শুধু মা নেই। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করলো অরুণ। তখন হাওয়ার সঙ্গে বেশে এলো এক সুর ঠিক মায়ের গলার মত। সে কেঁপে উঠলো চারপাশে তাকালো। পাতার ফাঁক দিয়ে পড়ছে আলো, নদীর গর্জন যেন বলছে আমি আছি অরুণ আমি তোকে ফেলে যায়নি... তার চোখ ঝাপসা হয়ে গেল বাতাসে সে অনুভব করলো সেই চেনা গন্ধ। সে বসে পড়ল নদীর পাড় গাছের ছায়ার হৃদয়ের গভীরে স্পষ্ট বুঝলো মা হারায়নি। তিনি রয়ে গেছে নদীর সুরে, কোকিলের গানে, পাতার ফাঁকে। মা প্রকৃতি হয়ে ফিরে এসেছেন। অরুন আর একা নয়। সে প্রতিদিন যায় সেই বনে সেই নদীর ধারে। মায়ের ছায়া যেখানে নিঃশব্দ অথচ স্পষ্ট। মা চলে যায়নি সে শুধু রূপ বদলে প্রকৃতির মাঝে ফিরে আসে চিরন্তন এক ছায়া হয়ে।