রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫, ১২:৪১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া, দল-মতের ঊর্ধ্বে এক সাহসী রাষ্ট্রনায়ক

Coder Boss
  • Update Time : শুক্রবার, ৩০ মে, ২০২৫
  • ১৭ Time View

এম.কে.জাকির হোসাইন বিপ্লবী

পৃথিবীর ইতিহাসে কিছু -কিছু মহান ব্যক্তিত্বের জন্ম হয়, যারা মরার পরেও চির অমর হয়ে থাকে। যাদের জনপ্রিয়তা দল মত নির্বিশেষে সবার ঊর্ধ্বে। সাবেক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া তাদেরি একজন। বাংলাদেশের সূচনা লগ্ন থেকে, উন্নয়ন প্রকল্পের সঠিক পরিকল্পনা জিয়ার অবদান। আজ ৩০ মে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী। এই দিনটি শুধু তাঁর জীবনাবসানের স্মরণ নয়, বরং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ইতিহাসে এক বীর রাষ্ট্রনায়কের চেতনার প্রতিধ্বনি। যিনি নিজে ছিলেন একাধারে মুক্তিযোদ্ধা, বিপ্লবী সংগঠক, রাষ্ট্রগঠনের রূপকার এবং সর্বোপরি একটি প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁর রাজনৈতিক জীবন, আদর্শ, উন্নয়ন দর্শন এবং ব্যক্তিত্ব দল-মত নির্বিশেষে সকল নাগরিকের মনে রেখাপাত করেছে। যেমন আমি কাব্যের ভাষায় বলে থাকি,
হে প্রেসিডেন্ট জিয়া তুমি সবার প্রিয়,
তুমি বাংলার উজ্জ্বল নক্ষত্র
দল-মত নির্বিশেষে তুমি স্মরণীয়।
দলীয় প্রতি হিংসার রুশানলে
ধ্বংস আজি রাজনীতির পথ,
দল দিয়ে তোমায় বাসিনী ভালো
ব্যক্তিত্বের বন্ধনে রেখেছি সাদরে
কাব্যে গেঁথেছি ভালোবাসার স্মৃতি
তোমার নামটিই হলো স্বাধীনতার দীপ্ত শপথ।

স্বাধীনতার ঘোষণায় এক বিপ্লবী নেতৃত্ব
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল এক যুগান্তকারী সাহসিকতার প্রতীক। জাতির চরম দিকভ্রান্তি ও নেতৃত্বশূন্যতার মুহূর্তে তাঁর ঘোষণা, “আমি মেজর জিয়া বলছি…” দেশকে একটি দৃঢ় বিশ্বাস ও লক্ষ্য এনে দেয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, একটি ঘোষণা কেবল শব্দ নয়, তা হতে পারে বিপ্লবের সূচনা। তাঁর সেই উদ্যোগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে চিরকাল অম্লান হয়ে থাকবে।

যুদ্ধের মাঠে এক সাহসী অধিনায়ক
১১ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে মেজর জিয়া মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধকৌশল, দুর্ধির্ষিতা ও সাহসিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান শুধুই অস্ত্রধারণে সীমাবদ্ধ ছিল না—তিনি ছিলেন সহযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা, শৃঙ্খলার মডেল এবং দুর্বল মুহূর্তে সাহসের প্রতীক। যুদ্ধজয়ের পর, রাজনৈতিক সংকট ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে যখন জাতি হতাশাগ্রস্ত, তখন তাঁর নেতৃত্বের আরেকটি অধ্যায় শুরু হয়।

বহুদলীয় গণতন্ত্রের ভিত্তিপ্রস্তর
১৯৭৫-৭৭ সালের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে একদলীয় শাসন ও স্বৈরতন্ত্রে মানুষের আস্থা হারিয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট জিয়া সেই প্রেক্ষাপটে ফিরে আনেন বহুদলীয় গণতন্ত্র, রাজনৈতিক মত প্রকাশের অধিকার এবং একটি বহুমাত্রিক রাষ্ট্রচিন্তা। তিনি বিশ্বাস করতেন, “রাজনীতি জনগণের জন্য, ক্ষমতার জন্য নয়।”
তাঁর শাসনামলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক বিরোধীদের কর্মক্ষেত্র, বিচার বিভাগের সচলতা, এবং ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা ছিল চোখে পড়ার মতো। তিনি নিজে ক্ষমতায় থেকেও কখনো নিজস্ব দল বা পরিবারকে প্রাধান্য দেননি, বরং প্রশাসনে কর্মদক্ষতা ও সততার ভিত্তিতে নেতৃত্ব গড়ে তুলেছিলেন।

উন্নয়ন দর্শনের বাস্তবভিত্তিক প্রয়োগ
প্রেসিডেন্ট জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নতুনভাবে নিজেকে গড়ে তোলে। তিনি বলতেন—“গ্রাম না জাগলে বাংলাদেশ জাগবে না।” তাঁর এই দর্শনে আসে উৎপাদনভিত্তিক কৃষিনীতি, স্বনির্ভরতা-নির্ভর অর্থনীতি, এবং বেসরকারি শিল্পের উন্মুক্ত সুযোগ।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের যাত্রা, বিদেশি বিনিয়োগের পথ খুলে দেওয়া এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে অগ্রসর হওয়া, সবকিছুর সূচনা তাঁর সময়ে হয়। তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে G-77, OIC, SAARC—এসব ফোরামে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেন।

শুদ্ধাচার ও অনাড়ম্বর জীবনযাপন
ক্ষমতায় থেকেও প্রেসিডেন্ট জিয়া নিজের জীবনযাপনে ছিলেন অনন্য। তিনি সরকারি সুযোগ-সুবিধার অপব্যবহার করতেন না, আত্মীয়স্বজনকে প্রশাসনিক প্রভাব থেকে দূরে রাখতেন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছিলেন আপোসহীন। তাঁর কর্মপদ্ধতি ছিল সেনানিয়মে গড়া, যা রাষ্ট্র পরিচালনায় নতুন মাত্রা এনেছিল। তাঁর ব্যক্তিগত সততা, দাপ্তরিক নিষ্ঠা ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে আচরণ ছিল শ্রদ্ধাজনক ও মানবিক।

শহীদ জিয়ার শাহাদাত: ইতিহাসের বেদনাবিধুর অধ্যায়
১৯৮১ সালের ৩০ মে, চট্টগ্রামে একদল ষড়যন্ত্রকারীর হাতে নিহত হন প্রেসিডেন্ট জিয়া। তাঁর মৃত্যু কেবল একজন রাষ্ট্রপতির হত্যাই ছিল না, এটি ছিল একটি রাষ্ট্রদর্শনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তাঁর অনুপস্থিতিতে যে শূন্যতা তৈরি হয়, তা আজো বাংলাদেশের রাজনীতিতে পূরণ হয়নি। অথচ তাঁর রাজনৈতিক উত্তরাধিকার আজো কোটি মানুষের মাঝে প্রজ্জ্বলিত।

উপসংহার: একটি আদর্শ, যা দল-মতের ঊর্ধ্বে
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন সেই নেতা, যিনি স্বাধীনতার ভিত গড়ার পাশাপাশি উন্নয়নের ভিতও নির্মাণ করেন। তিনি রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষতা, উন্নয়ন পরিকল্পনায় বাস্তবতা এবং নেতৃত্বে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বারবার প্রমাণ করে গেছেন—একজন সত্যিকারের রাষ্ট্রনায়ক কেমন হতে পারেন।
আজ তাঁর শাহাদাতবার্ষিকীতে, রাজনৈতিক মতপার্থক্য পেরিয়ে, তাঁকে আমরা স্মরণ করতে পারি সেই স্বপ্ন ও চেতনার প্রতীক হিসেবে—যিনি নিজেকে কখনো দলের মাঝে সীমাবদ্ধ করেননি, বরং গোটা জাতির হৃদয়ে স্থায়ী আসন গড়ে নিয়েছেন।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ বেঁচে থাকুক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।
বিস্তারিত তথ্যসূত্র:- সোশ্যাল মিডিয়া।

এম.কে.জাকির হোসাইন বিপ্লবী
লেখক ও গবেষক
ইমেইল: mkzakirhossainbiplobi2003@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102