রাজ্জাকুন্নাহার সুমী, কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার হালিমপুর ইউনিয়নে মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতামূলক প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর কালেখাঁর ভান্ডা, নগর ভান্ডা ও ঢুলিরচর – এই তিন গ্রামের প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ সাধারণ জনগণ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগন, মসজিদের ঈমাম, স্কুলের শিক্ষক একত্রিত হয়ে মাদকবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেন।
প্রতিবাদকারীরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাদক বিক্রেতা হাবিবুল্লাহর (হাবুল্লা) বাড়ির সামনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন। তারা মাদকের বিস্তার এবং এর ফলে সমাজে ছড়িয়ে পড়া অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং প্রশাসনের কাছে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
স্থানীয় মসজিদের ইমাম, বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ওয়ার্ড সদস্যগণ এবং তরুণ সমাজসেবকরা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। তারা বলেন, “মাদক একটি সমাজঘাতী ব্যাধি। এর বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। আজকের এই প্রতীকী প্রতিবাদই ভবিষ্যতের পরিবর্তনের সূচনা।”
শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি চলাকালে হাবিবুল্লাহ এবং তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য প্রতিবাদকারীদের উদ্দেশ্যে চাঁদাবাজ, ডাকাত, সন্ত্রাসী ইত্যাদি অপবাদ দিয়ে উস্কানিমূলক আচরণ শুরু করেন। এ সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, এই আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে উপস্থিত জনগণ হাবিবুল্লাহর মাদক বিক্রির দোকানটির সামনের অংশ ভেঙ্গে দেয়।
প্রতিবাদে অংশ নেওয়া এক তরুণ বলেন,
“আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছিলাম। কিন্তু হাবিবুল্লাহর পরিবার আমাদের অপমান করেছে। বছরের পর বছর এই লোক মাদক বিক্রি করে আমাদের সন্তান এবং ভাইদের নষ্ট করছে, এভাবে আমরা আর চুপ থাকবো না।”
একজন শিক্ষক বলেন,
“মাদক শুধু একজনের নয়, পুরো সমাজের শত্রু। আজকের এই প্রতিবাদ একটি বার্তা—জনগণ আর চুপ থাকবে না।”
জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ
স্থানীয় ইউপি সদস্যরা উপস্থিত থেকে প্রতিবাদকারীদের শান্ত রাখার চেষ্টা করেন এবং প্রশাসনের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। তারা বলেন, এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে আসছে, কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এবার সাধারণ মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে।
পুলিশের পদক্ষেপ
ঘটনার খবর পেয়ে বাজিতপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সমাজে মাদকবিরোধী আন্দোলনের নতুন ধারা
এই ঘটনার মাধ্যমে এই এলাকায় মাদকবিরোধী জনসচেতনতার এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। সাধারণ মানুষের সাহসিক ও একতাবদ্ধ অবস্থান অনেককেই অনুপ্রাণিত করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের প্রতিবাদ শুধু আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকেই নয়, পুরো সমাজকেই মাদক নির্মূলে সক্রিয় করে তুলতে পারে। এই প্রতিবাদ কর্মসূচিকে ঘিরে এলাকায় ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও মাদক নির্মূলে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।