মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন

পারমাণবিক বোমার ভয়াবহতা: বিশ্ববাসীর করণীয়

Coder Boss
  • Update Time : সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫
  • ৯৬ Time View

প্রভাষক জাহিদ হাসান

পারমাণবিক বোমা হলো একসাথে তাপ, আলো, তেজস্ক্রিয়তা, চাপ ও ধ্বংসের এক জটিল, ভয়ঙ্কর এবং অপরিবর্তনযোগ্য সমন্বয়। মূলত এটি এক বিস্ফোরক অস্ত্র যা পারমাণবিক বিভাজন বা একত্রীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ শক্তি নির্গত করে। একে পরমাণু বোমা বলা হয়। ভয়ংকর পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও তেজস্ক্রিয় দূষণ হতে পারে। এই বোমাগুলো অকল্পনীয় শক্তিশালী। মানবতা বিধ্বংসী পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র যে প্রকল্প হাতে নিয়েছিল তার নাম ছিলো ‘ম্যানহাটান প্রজেক্ট’। সেই বোমা তৈরির প্রধান বিজ্ঞানী ছিলেন রবার্ট ওপেনহাইমার। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে বিশ্বের ৯টি দেশের হাতে প্রায় ১৩ হাজার পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। এই তালিকায় আছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া ও ইসরায়েল।

বিজ্ঞানীদের মতে, ধ্বংসাত্মক পারমাণবিক বোমা কয়েক সেকেন্ডেই লাখ-লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারে। দেখুন, একটি পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের পর প্রথম ৬০ সেকেন্ডে কী কী ধ্বংসযজ্ঞ ঘটতে পারে: ⏱প্রথম সেকেন্ড (০–১ সেকেন্ড): পারমাণবিক বোমা ফাটলে একটি তীব্র ঝলক দেখা যেতে পারে, যার তীব্রতায় চোখ সঙ্গে- সঙ্গে পুড়ে যেতে পারে। তাপমাত্রা ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত সূর্যের পৃষ্ঠের চেয়েও বেশি গরম হতে পারে। বিস্ফোরণ কেন্দ্রে যা কিছু থাকে সব বাষ্পীভূত হয়ে যেতে পারে। মানুষ, গাছ-গাছালি, দালান, গাড়ি, সবকিছু ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। ⏱(২-৩ সেকেন্ড): একটি বিশাল আগুনের গোলা তৈরি হয়ে দ্রুত আকাশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে ১-২ কিলোমিটারের মধ্যে যা কিছু থাকে, তা সম্পূর্ণ পুড়ে যেতে পারে। ⏱(৫-১০ সেকেন্ড): শকওয়েভ নির্গত হয়ে বাতাসের শক্তিতে বিল্ডিং ও দেয়াল ভেঙে পড়তে পারে এবং মানুষ অনেক দূরে ছিটকে যেতে পারে। ফলে ৩-৪ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থানরত মানুষের কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে এবং শ্বাস নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। ⏱(১০-৩০ সেকেন্ড): সব দিকে সুপারসোনিক ব্লাস্ট ওয়েভ ছড়িয়ে পড়ে ১৫০০+ কিমি/ঘণ্টা বেগে বাতাসের ঢেউ ছড়িয়ে পড়তে পারে। কাঁচের টুকরা, ধ্বংসাবশেষ এবং আগুনের শিখা মানুষকে মারাত্মক আহত করতে পারে। ⏱(৩০-৬০ সেকেন্ড): বিকিরণ নির্গত হয়ে যারা ১-১.৫ কিলোমিটারের মধ্যে আছেন, তাদের তীব্র বিকিরণ থেকে মারাত্মক বিকিরণ অসুস্থতা হতে পারে। ফায়ারস্টর্ম বা অগ্নিঝড় শুরু হতে পারে বহু বর্গ কিলোমিটার জুড়ে। তাছাড়া কয়েক মিনিটের মধ্যেই বাতাস, ধুলো ও বৃষ্টি থেকে গুরুতর বিকিরণ ছড়াতে শুরু করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মাত্র ১ মেগাটনের একটি পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত হলে চারিদিকে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে সবকিছু পুড়ে ছাঁই হয়ে যেতে পারে। বিস্ফোরণের জায়গা থেকে ৮-১২ কিমি দূরে মানুষের ত্বকে থার্ড ডিগ্রি বার্ন হয়ে যেতে পারে। এমনকি ১৫-২০ কিমি পর্যন্ত অবস্থান করা মানুষের কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। গ্লাস ভেঙে খসে পড়তে পারে নিমিষেই। ৫০-৮০ কিমি দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে তেজস্ক্রিয়তা। বিষাক্ত ছাই এবং তেজস্ক্রিয় কণা ভরা বৃষ্টি শুরু হতে পারে। হাজার- হাজার নয়, লক্ষ- লক্ষ প্রাণ এক দিনেই চলে যেতে পারে এবং এর প্রভাব বিদ্যমান থাকতে পারে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ। একটি পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণে তাৎক্ষণিক প্রাণহানি ঘটতে পারে কয়েক লক্ষ মানুষের। গুরুতর আহত হতে পারে লাখ- লাখ মানুষ। আর ৫ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত স্থানসমূহ রূপ নিতে পারে ধ্বংসস্তুপে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা ক্যান্সার ও রেডিয়েশনজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হতে পারে। পরবর্তী প্রজন্ম প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নিতে পারে। বিষ্ফোরণের জায়গা থেকে চারিদিকে ২০-৩০ বছর পর্যন্ত মাটি ও পানি দূষিত অবস্থায় পাওয়া যেতে পারে।

এদিকে অতীত ইতিহাস থেকেও জানা যায়, পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের ভয়বহতা। ১৯৪৫ সালে জাপানের শহর হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলায় ১,৫০,০০০ থেকে ২,৪৬,০০০ মানুষ মারা গিয়েছিল। এ দুই হামলায় প্রমাণ হয় পারমাণবিক অস্ত্র দুর্বল রাষ্ট্রকে ধ্বংস করার জন্য বিশ্ব মোড়লদের সহজ হাতিয়ার। মূলত পারমাণবিক বোমা যুদ্ধের অস্ত্র নয়, বরং মানবতা ধ্বংসের মাধ্যম। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান বিশ্বে ইরান- ইসরায়েল, রাশিয়া- ইউক্রেণ, ভারত- পাকিস্তান কিংবা উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। আন্তর্জাতিক কোনো বিরোধ যদি পারমাণবিক সংঘাতে রূপ নেয়, তবে তা গোটা মানবজাতির জন্য চরম বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

অতএব, পরমাণু অস্ত্রের অজুহাতে উদীয়মান মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে ধ্বংসের বর্বর ষড়যন্ত্র পরিহার করে, বাস্তবে পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী সকল দেশের পারমানবিক বোমা ধ্বংস করে, একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়ে তুলতে বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসতে হবে এখনই।

তথ্যসূত্র: আণবিক বিশেষজ্ঞগণের নির্ভরযোগ্য আর্টিকেলসমূহ।

লেখক: প্রভাষক জাহিদ হাসান
সাধারণ সম্পাদক,
জগন্নাথপুর সাংবাদিক ঐক্য পরিষদ,
জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ।
ইমেইল: lecturerjahidhasan@yahoo.com

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102