লেখক: ইমতিয়াজ নূর আনাইফা
(দৃশ্য ১: স্কুল মাঠ)
[Narrator (ভয়েসওভার)]
একটি ছোট্ট গ্রামের কিন্ডারগার্টেন স্কুল। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সোহান—বয়স বাইশের কোঠায়, কিন্তু কাজের প্রতি একনিষ্ঠ, উদ্যমী।
স্কুলের পাশেই সাথীদের বাড়ি। সাথী—চোখে মায়াবী ছায়া। প্রতিদিন স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে, সোহানের চোখে আটকে থাকে সাথীর সেই চাহনি।
[সোহান ক্লাস নিচ্ছেন, মাঝেমাঝে জানালার বাইরে তাকান]
সোহান (মনোলগ, চুপচাপ)
এই মেয়েটার চোখে কী আছে জানি না… যেন কথা বলে নিঃশব্দে।
—
(দৃশ্য ২: ক্লাসরুম)
(এক ছাত্র ভুল করলে সোহান একটু রেগে যান)
সোহান (রাগ করে)
তোমরা ঠিকমতো পড়া ধরো না! (বই বন্ধ করে চলে যান)
[সাথী উঠে দাঁড়ায়]
সাথী (কাঁপা গলায়):
স্যার, এমন করে চলে যাবেন না প্লিজ…
[সোহান পেছনে না তাকিয়ে চলে যান]
—
(দৃশ্য ৩: পরদিন)
[Narrator]
পরদিন স্কুলে সোহান স্যারের দেখা নেই। শোনা যায়, তিনি অসুস্থ হয়ে গৃহবন্দী। সাথীর মন অস্থির হয়ে পড়ে।
[সাথী ধীরে ধীরে ম্যামের কাছে যায়]
সাথী:
ম্যাম… একটা অনুরোধ করব। সোহান স্যারের নাম্বারটা যদি দিতেন…
[ম্যাম একটু অবাক হয়ে হেসে বলেন]
ম্যাম:
আচ্ছা, দিচ্ছি… খেয়াল রেখো যেন অযথা বিরক্ত না করো।
—
(দৃশ্য ৪: বিকেলবেলা, সাথীর বাড়ির উঠোন)
[সাথী মোবাইলে কল করে]
সোহান (ফোনে):
আসসালামু আলাইকুম, কে আপনি?
সাথী (হালকা হাসি দিয়ে):
দেখেন তো চিনতে পারেন কিনা।
সোহান:
না তো… কে আপনি?
সাথী:
আমি সাথী। শুনেছি আপনি জ্বরে ভুগছেন তাই ফোন দিলাম।
[কিছুক্ষণ চুপচাপ]
সোহান:
তুমি… ফোন দিলে ভেবে খুশি লাগছে।
[একটু আলাপ, তারপর…]
সাথী (একটু থেমে):
স্যার, প্রপোজটা কবে করবেন?
সোহান (হেসে):
তুমি যদি বলো, আজকেই করবো।
সাথী (মুচকি হাসি):
তাই নাকি?
সোহান:
ডু ইউ লাভ মি?
সাথী:
ইয়েস, আই লাভ ইউ।
—
(দৃশ্য ৫: স্কুল মাঠ, সন্ধ্যা)
[Narrator (ভয়েসওভার)]
তারপর থেকে তাদের ভালোবাসার এক নতুন গল্প শুরু হয়।
দিন যায়, সম্পর্ক গাঢ় হয়।
দুধ যেমন আগুনে জ্বাল দিলে ঘন হয়, তেমনি ভালোবাসা সময়ের তাপে আরও গভীর হয়ে ওঠে।
(সোহান আর সাথী পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছে স্কুলের পেছনের পুকুরপাড় ধরে)
[পেছনে আবেগঘন গানের সুর বাজে]
পর্ব ২: ভালোবাসার পরীক্ষা
[Narrator (ভয়েসওভার)]
সোহান আর সাথীর ভালোবাসা দিনে দিনে গভীর হতে থাকে। স্কুল শেষে পুকুরপাড়ে হেঁটে চলা, গাছতলায় চুপচাপ বসে থাকা, আর সন্ধ্যায় মোবাইলে ফিসফিস আলাপ—সব মিলিয়ে এক পরিপূর্ণ মায়াবী প্রেম।
কিন্তু প্রেম তো কেবল দু’জনের হলে চলে না।
সমাজ, পরিবার—সব কিছু এসে পড়ে মাঝখানে।
—
(দৃশ্য ৬: সাথীদের বাড়ি, বসার ঘর)
সাথীর বাবা (রাগান্বিত গলায়):
এই বয়সে প্রেম? তাও একজন স্কুল স্যারের সঙ্গে?
তোমার জন্য ভালো পাত্র দেখছি শহরে—আর তুমি কিনা একটা চাকরির অস্থায়ী ছেলের পেছনে!
সাথী (চোখে জল):
বাবা, ওকে আপনি জানেন না। সোহান শুধু শিক্ষক নয়, খুব ভালো মানুষ…
সাথীর মা:
ভালো মানুষ হলেই কি সব হয়? সমাজ কী বলবে?
—
(দৃশ্য ৭: সোহানের ঘর, রাত)
সোহান (ডায়েরিতে লিখছে):
“ভালোবাসা যদি শুধু চাওয়ার নাম হতো, হয়তো সহজ হতো।
কিন্তু সেটা তো বোঝাতে হয়… প্রমাণ দিতে হয়।”
—
(দৃশ্য ৮: স্কুল মাঠ, পরদিন)
সাথী (চোখে জল):
স্যার… মানে সোহান, আমার বাবা-মা মানছে না।
তাদের মতে, তুমি এখনো স্থির হওনি জীবনে।
সোহান:
তুমি কি চাও আমি পিছিয়ে যাই?
সাথী:
না… আমি চাই তুমি নিজেকে প্রমাণ করো।
আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব।
—
[Narrator]
এরপর সোহান নিজেকে বদলে ফেলে।
শুধু শিক্ষক নয়, হয়ে ওঠে গ্রামের একজন সমাজ-নেতা—স্কুলে নতুন ভবন গড়ে, অসচ্ছল ছাত্রদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করে।
গ্রামের মানুষ তাকে দেখতে শুরু করে সম্মানের চোখে।
—
শেষ দৃশ্য: কয়েক বছর পর
(স্কুল মাঠে নতুন ভবনের উদ্বোধন হচ্ছে)
গ্রামের চেয়ারম্যান:
এই স্কুল আজ যা হয়েছে, তার পেছনে একটাই নাম—সোহান স্যার।
(দূরে দাঁড়িয়ে সাথী তাকিয়ে আছে—চোখে গর্ব আর ভালোবাসা)
সোহান ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে, বলে)
সোহান:
তুমি তো বলেছিলে, অপেক্ষা করবে…
সাথী (মুচকি হাসে):
আর তুমি তো প্রমাণ করে দিলে, ভালোবাসা কেবল কথা নয়—কাজেও দেখাতে হয়।
—
শেষ লাইন (Narrator):
> “ভালোবাসা যদি মায়াবী চোখের ডাক হয়, তবে দায়িত্ব আর সম্মানই তার উত্তর।”