কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা ইউনিয়নের ভোগ বেতালে ২৭ শে জুন শুক্রবার সনাতন ধর্মালম্বীদের প্রথম পর্বের রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে বিকেল ৪ ঘটিকায়। ৯ দিনব্যাপী এই উৎসব উল্টো রথের মাধ্যমে শেষ হবে ৫ই জুলাই শনিবার। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস দেবতা শ্রী শ্রী গোপীনাথ তার বিশেষ বাহন রথে চরে তার বোন শুভদ্রা দেবী কে স্বামীর বাড়ি থেকে পিত্রালয়ে   নায়রে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার ভাই বলরাম শ্রী শ্রী গোপীনাথ জিওর বাড়িতে আসেন। ৯ দিন পর উল্টো রথে চড়েপুনরায় সুভদ্রাকে  নিয়ে আসবেন তার স্বামীর বাড়িতে। সনাতন ধর্মালম্বীদের এই বিশ্বাস থেকে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে পাঁচ শত বছর যাবত পালিত হয়ে আসছে ঐতিহ্যবাহী এই রথযাত্রা উৎসব। কটিয়াদী  উপজেলার আচমিতা ইউনিয়নের ভোগ বেতালে ঈশাখা ও রাজা নবরঙ্গ রায়ের স্মৃতি বিজড়িত ৫০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী গোপীনাথ মন্দিরে ২৭ শে জুন শুক্রবার শুরু হচ্ছে প্রথম পর্বের রথযাত্রা এবং আগামী ৯ই জুলাই শনিবার উল্টোরথ যাত্রার মাধ্যমে শেষ হচ্ছে এই অনুষ্ঠানের। কথিত আছে পঞ্চদশ শতকে রাজা নবরঙ্গ রায় এক দেবদেউল নির্মাণ করেছিলেন যা বর্তমানে শ্রী শ্রী  গোপীনাথজীউর মন্দির নামে প্রতিষ্ঠিত। উল্লেখ্য ঈশাখা তার রাজধানী থেকে তার বাড়ী জঙ্গলবাড়িতে যাওয়ার পথে শ্রী শ্রীগোপীনাথ জীউর মন্দিরে বিশ্রাম নেন।সেই সময় মন্দিরের পুরোহিতের আথিতেতায় মুগ্ধ হয়ে তিনি এই মন্দিরকে ২শত একর ভূমি দান করেন। রথযাত্রা উপলক্ষে গোপীনাথজীউর মন্দির প্রাঙ্গনে হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ ও ধর্মপ্রাণ মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের পদচারনায় মুখরিত হয়ে ওঠে মন্দির ও তার আশপাশ এলাকা। মন্দির প্রাঙ্গণে লোকজ মেলা, ফলমূল ও বিভিন্ন জাতের পাখির পশরা বসে। উৎসবমুখর পরিবেশে নানা ধর্মীয় আচার আচরনাদি শেষে হিন্দুধর্মালম্বী মহিলাদের  অবিরাম  উলুধ্বনির মাধ্যমে বিশাল আকৃতির রথের চূড়ায় স্থাপন  করা হয় শ্রী শ্রী গোপীনাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি। রথের চাকার সামনে  বাধা হয়  পাটের মোটা দড়ি। বিকেল চারটায় হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ সামনে থেকে রশি টানার মধ্য দিয়ে রথ টান শুরু করেন সুভদ্রার পিত্রালয়ের  দিকে। মন্দিরের নিজস্ব ভূমির

 উপর দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে পথিমধ্যে মাসির বাড়ি যাত্রা বিরতি করে এক সময়ে পৌঁছে যায় সুভদ্রার পিত্রালয়ে। ৫ শত বছরের প্রাচীন এই রথযাত্রা ভারতের পুরীর জগন্নাথ দেবের রথ যাত্রার পরেই ছিল বঙ্গের এই গোপীনাথ জিওর রথযাত্রা উৎসব।

 রথযাত্রা উৎসব কমিটির সভাপতি (গুরুদেব জর্দার স্বত্বাধিকারী) স্বপন কুমার সাহা জানান রথ যাত্রার এই উৎসব মূলত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অনুষ্ঠান হলেও এলাকার ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ এই রথ যাত্রার উপভোগ করেন। প্রায় পাঁচশত বছরের পুরনো এই রথযাত্রা কিশোরগঞ্জ জেলা বাসীর কাছে বরাবরই সার্বজনীন উৎসব হয়ে উঠে।

কটিয়াদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম বলেন, এ রথযাত্রা উপলক্ষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে  প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়েছে।