
লেখকঃ ইঞ্জিঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম
আমরা কেউ আমাদের জীবনের ভবিষ্যৎ জানি না, জানি না কোথায় আমার জন্য মৃত্যু ওঁৎ পেতে বসে আছে! তাকাই না “মাইলস্টোন ট্রাজেডির” দিকে, মৃত্যু বয়স যাচাই-বাছাই করে আসে না! জানি না, যে সম্পদ বখিলের মত জমা করছি, যে সন্তানকে আমার পৃথিবী বলে মনে হচ্ছে, যে সন্তান পেয়ে নিজ মা-বাবাকে ভুলে গেছি, আমি যে ঐশ্বর্যের জন্য নিজেকে ধনী বলে গর্ব বোধ করছি, এমনকি কোটি টাকার মালিক হ’য়ে ও একজন হাসপাতালে কাতরনো গরীব আত্মীয়ের চিকিৎসার জন্য দু’হাজার টাকা দিতে পারছি না, নিম্নতম ভদ্রতার বশে একজন আত্মীয়ের বাসায় কিছুটা মিষ্টি কিনে নিতে পারছি না, সেই সম্পদ আমার জন্য “কাল” হবে কিনা তা আমরা জানিনা!
জানি না তা আমার আহম্মকী, অজ্ঞতা কিন্তু পারিপার্শ্বিক দেখে এবং এত কষ্ট করে লেখকরা লিখছেন, নাটক সিনেমা করছেন তবু ও আমরা শিখছি না বা নিজ জীবনে তার প্রয়োগ করছি না! সারাজীবন করি নাই সে ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এখনও করছি না, ভাবছি আর-ও কতদিন বেঁচে থাকবো, ভাবছি সন্তান মাসে লাখ টাকা বেতন পাক, আমার টা ও থাকুক, ওরা আরো আরামে থাকবে!
প্রিয় পাঠক, একজন লেখক এবং সম্পদশালী ব্যক্তি! আমরা পূন্যের জন্য পাপ মোচনের জন্য যে মক্কা মদিনা গয়া কাশি বৃন্দা বন ছুটি আর দেশে ফিরে নামের আগে হাজ্বী বা আলহাজ্ব লিখে ডক্টরেটেে মত ব্যবহার করে আহম্মকী করি, নির্লজ্জের মত টাইটেল বানায় ফেলি, তেমন পবিত্র জায়গায় বসবাস করা আশি কোটি টাকার সম্পদ ওয়ালা লোকটা যিনি একশো’র উপরে বই লিখেছেন, তাকে “বৃদ্ধাশ্রমে মরতে হলো!” তার শেষ বয়সে যখন শক্তি রহিত তখন সন্তান রা সমস্ত সম্পদ লিখে নেয় সরকারি সাব রেজিস্ট্রার বাড়ীতে এনে! তারপর তাকে দূর রাস্তার মোড়ে ফেলে আসে! সমাজ কর্মীরা তাকে পেয়ে বৃদ্ধাশ্রমে ভর্তি করে দেন! তিনি থাকা-খাওয়া মেডিকেল চেক আপ ফ্রী পেয়ে জীবন ফিরে পান! আশি বছর পর্যন্ত সেই আশ্রমে বেঁচে থেকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন! সন্তানদের সংবাদ দিলে ব্যস্হতার অজুহাতে কেউ আসে নাই! শশ্মানে পুড়ে ভস্ম বা কবরে শুয়ে মাটির সাথে মিশে যাচ্ছেন! শেষ সৎকার হয়েছেন অন্য লোকদের চাদায় কেনা কাফন ও দাফন খরচ তুলে!
তিনি লেখক হিসাবে পদ্মশ্রী ভূষন খেতাব পেয়েছিলেন!
আমার এ লেখা যদি একজন পড়েন, তখন ও তিনি ভাববেন, ” আহ্, ওটা যার বেলায় ঘটেছে আমিতো সে না, আমার সন্তান হীরা দিয়ে তৈরি, আমি আমার মা-বাবা ভাই-বোনের কর্তব্য তেমন গা লাগা ইনি, তাতে কি, আমার সন্তান বিশ্বসেরাদের সেরা! আমার বেলায় এমন টা ঘটবে না!
আমার বেলায়ও হতে পারে, মানুষের কিছু উপকার করে মরি,গরীব দূঃখীর একটু পাশে দাড়াই, ওদের আয় রোজগার তো ভালো, পারিবারিক ঐতিহ্য কারো উপকার না করা, তা এখন আর রক্তের ধারাবাহিকতা ধরে রাখি কেন, ছুটে যাইনা ঐ গরীব আত্মীয় টার কাৎরানো বেডের পাশে! না তেমনটা হবার নয়, বিনা পয়সায় মসজিদের নামাজ আছে না, মন্দিরের অর্ঘ্যদান আছে না, মসজিদ বাক্সে প্রতি শুক্রবার দশ টাকা দিচ্ছি না, প্রতি রবিবার গীর্জায় বিশ টাকা দিচ্ছি না? বহুত করছি, এই পূন্যের জোরে আমি বেহেশতে/ স্বর্গে যাব বলে আত্মতুষ্টির ঢেঁকুর তুলছেন, আপনি আহম্মকের নাতি! আপনার মাথায় বজ্রপাত হবে না, মাইলস্টোনের মত বিমান আছড়ে পড়বে না, বৃদ্ধাশ্রমে মৃত্যু হবে না, এমন সনদ কই পেলেন?
পাঠক, এমনটা ই আমরা ভাবতে অভ্যাস্হ। আমরা বিনা পয়সার এবাদত যতটা করি, মানব প্রেম ততটা ধার ধারি না! অথচ মানুষ কত উপরে তা বুঝাতে মুসলমানদের নবী করীম সঃ হযরত বেলাল কে কাবা শরীফের উপর তুলে আযান দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন! মানুষের কেবলা, কাবা গৃহ (কালো কাপড়ে মোড়ানো যেটা আপনারা দেখেন), যেদিকে ফিরে নামাজ আদায় করেন! কেন কাবায় চড়ে মক্কা বিজয়ের পর আজান, উত্তরে নবী করীম সঃ বলেছিলেন, “মানুষ কে বুঝালাম, মানুষ সবকিছু থেকে বড়!” পবিত্র কুরআনে মুসলমানদের প্রভু (রব) বলেছেন, “আমার পাহাড় সমান অন্যায় করলে এবং আমার বান্দা হাত তুলে ক্ষমা চাইলে আমি স্বয়ং আল্লাহ দুনিয়া সমান ক্ষমা নিয়ে হাজির হবো! কিন্তু আমার মানুষের ” সরিষা” পরিমান অপরাধ করলে আমি তা ক্ষমা করার অধিকার রাখি না!” আমরা পাহাড় সমান ক্ষমার জায়গায় মাথা টুকি, কিন্ত সরিষা পরিমান অন্যায় ক্ষমাহীন যেথা, সেখানে আমরা পদদলিত করি, এত উঁচু মর্যাদা দেয়া মানুষ কে হিংসা করি, তাদের থেকে ঘুষ নেই, সুদ নেই, ফাইল আটকাই, বিচার-আচার করি পয়সার বিনিময়ে, খুন-গুম ধর্ষন পর্যন্ত করি তেমন বিবেচনায় না এনে!
ভালো থাকেন সুস্থ থাকেন নিজ দেশকে ভালোবাসেন। মানব উপকারী হন, সস্তায় স্বর্গ বেহেশতে কেনা মানসিকতার পরিবর্তন আনেন! রোজ রোজ আপনি অধিকার হারাচ্ছেন আপনার অর্জিত রক্ত জল করা সম্পদ থেকে! প্রকৃতির নিয়মে স্বইচ্ছায় আপনি কপর্দকহীন হবেন, অধিকার হারা হবেন! সব আপনার নামে তাতে কি প্রকৃতি তা বদলে দেয়, ওয়ারিশ নিয়ম তা স্থানান্তরিত করে!