লেখকঃ ইঞ্জিঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম
বিশ্বের তুখোড় তুখোর রাষ্ট্র বিজ্ঞানী আ্যারিস্টটল, প্লেটো, ম্যাকিয়াভেলি, জন লক, রুশো, হবস, কার্ল মার্ক্স, ওয়েবার, লিও স্ট্রস, হানা সবাই রাষ্ট্র ব্যবস্হায় গনতন্ত্র সমাজতন্ত্র রাজতন্ত্র শতভাবে বিশ্লেষণ করেছেন কিন্তু এই বর্বর তন্ত্র "সামরিক তন্ত্রের" কোন কথা বলেন নাই! হয়তো তারা বাড়ীর সিকিউরিটি গার্ডকে কখনওই বাড়ী মালিক রূপে দেখতে চান নাই! অথচ এই সামরিক তন্ত্রে সারাবিশ্বে অনেক দেশ বছরের পর বছর শাসন করে যাচ্ছে, সে সব দেশ লুটপাট চলছে কোন উন্নয়নের ছোয়া টুকু পায় নাই, জনগন দরিদ্র থেকে দরিদ্র হয়েছে! আশির দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সামরিক সরকার কে entertained করতো তাদের বিরুদ্ধ মতাবলম্বী স্বাধীন চেতা জাতীয়তাবাদী সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ সরকার উৎখাত করতে! উদাহরণ স্বরূপ মিয়ানমার পাকিস্তান বাংলাদেশের ১৯৭৫ সালে মুজিব হত্যা, ১৯৭৩ সালে চিলির আলেন্দে কে হত্যা করে সামরিক পিনাচোট কে ক্ষমতায় বসানো!
ইন্দোনেশিয়ার জাতির জনক সুকর্নকে বন্দী ও মৃত্যু !
প্রিয় পাঠক, ১৯৫০ সাল থেকে বিশ্বে প্রায় ২০০ সামরিক ক্যু হয়েছে। তার অর্ধেকের বেশী আফ্রিকা মহা দেশে যার জন্য তেলসমৃদ্ধ দেশ গ্যাবন, নাইজার ও দরিদ্র! মার্কিন গবেষক জোনাথন পোয়েল এমন টা বলেছেন! এসব সুযোগ নিয়ে আফ্রিকার অনেক দেশ পশ্চিমা কলোনি তে রূপান্তর হয়েছে। সেদিন ও ফ্রান্সের কলোনি ছিলো আলজেরিয়া, মৌরিতানিয়া, সেনেগাল, মালি, গিনি, ফাসো, আইভরি কোস্ট, মালি, নাইজার, চাঁদ, গ্যাবন, কঙ্গো ইত্যাদি! গ্যাবনে বিশ্বের শেষ সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে! বলভিয়ায় মোট ১৯০ বার সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে! বাংলা ভাষা সেদেশের একজন লোকও বলে না অথচ তাদের রাষ্ট্র ভাষা "বাংলা", দেশটার নাম " সিয়েরা লিওন"! সে দেশটায় ও তিনবার সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে!
মিয়ানমারে ১৯৬২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন সামরিক সরকার চলয়মান!
পাকিস্তানে তো সামরিক অভ্যুত্থান হওয়া লাগে না সিভিল একটা মুখোশ থাকে কিন্তু সামরিক শাসন জন্ম থেকে সেই ১৯৫৪ তে "বাঙালির যুক্ত ফ্রন্টের" কাছ থেকে অস্ত্র ধরে নির্বাচনের দিন ৫৪ পর, ক্ষমতা কেড়ে নিলো মীর জাফরের বংশধর "ঈসকান্দার মির্জা" তারপর আইয়ুব ইয়াহিয়া জিয়াউল হক পারভেজ মোশাররফ সরাসরি মাঠে ছিলো তাছাড়া মুখোশ সিভিল ভুট্টা শরীফ ইমরান খান শাহবাজ শরিফ সবই পাপেট, টয়লেটে যেতেও সেনা অনুমতি লাগে!
পাঠক, বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট মুজিব হত্যা ছিলো প্রধানত মার্কিন খেলা, খন্দকার মোশতাক ছিলো পাবলিক ঠেকানো, পর্দার আড়াল থেকে "মেজর জিয়াকে" বের করলো ২১ শে এপ্রিল ১৯৭৭ সালে আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ক্ষমতায় থাকতেই তিনি স্বঘোষিত সামরিক প্রশাসক ও প্রেসিডেন্ট রেডিও ঘোষণা দেয়া হয়! তার বিরুদ্ধে ২১/২২ টা সামরিক ক্যু হয়! শেষ ক্যুতে তিনি চট্টগ্রাম নিহত হন! ১৯৮১ সালে এরশাদ সাহেব ও জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করেন, বিচারপতি সাত্তার কে সরিয়ে ক্ষমতা নিয়ে নেন এবং ১৯৯০ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকেন! গনঅভ্যুত্থানে তার পতন ঘটে, তখন আর জুলাই ২০২৪ একই গনঅভ্যুত্থান। তখন কেউ নতুন স্বাধীনতা কয় নাই, কারন মার্কিন হাত ছিলো না! এরশাদ টিকে থাকতে ডেমড়া সহ অনেক শিল্প এলাকায় প্রচুর লোক হত্যা করেছিলেন !
১৯৯৪ সালে বেগম খালেদার বিরুদ্ধে একটা ব্যর্থ ক্যু হয় আনসার বিদ্রোহ নামে। চল্লিশ টা সেনা পরিবার তারা জিম্মি করেছিলো। দমন করতে বেশ জীবন নাশ ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিলো। ১৯৯৬ সালে জেনারেল নাসিম ও ক্যু করার চেষ্টা করেন, প্রেসিডেন্ট তখন আঃ রহমান বিশ্বাস! সাভার সেনানিবাস থেকে সৈন্য এসে ঢাকা সেনানিবাস ঘেরাও করে!
২০০৭ সালে ১/১১ খ্যাত সেনা শাসনের জাতাঁকলে পড়ে জনগন! ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা আমলে বিডিআর বিদ্রোহ আর এক অভ্যুত্থান ছিলো সন্দেহ নাই! প্রায় ৫৭ জন সেনা অফিসার মেরে ফেলে তারা। ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ও তাদের পরিবার উদ্ধার করে আলোচনার মাধ্যমে রফাদফা হয়!
২৪ শে জুলাই চাকরির কোঠা আন্দোলন ৫ ই আগষ্ট
সরকার পতন কি গনঅভ্যুত্থান নাকি সামরিক অভ্যত্থান তা আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে আসে না! ছাত্রদের কোটা আন্দোলনে ২৯ মিলিয়ন ডলারের ফুয়েল মার্কিন সরকারের বিনিয়োগ যোগ হলো তারপর সরকার প্রধান নিরিবিলি যেতে পারলো কেন? তা যদি সন্মান দেখানো হয়ে থাকে তা হলে গনভবন লুট ঠেকানো, ৩২ নাম্বার ভাঙা ঠেকানো, মার্চ টু গোপালগঞ্জ ঠেকানো কার কর্তব্য ছিলো?
পতিত সরকার কে ভুলে, ঐতিহাসিক স্হাপনা রক্ষা এবং হঠকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপে ১০ হাজার উগ্র আচরণের জনগন মারা গেলে তাকে কেউ Genocide বলতো না! চমৎকার ফল আসতো। দেশটা লাগামহীন অরাজকতায় নেয়ার সাহস কেউ পেতো না, এমন কি বাংলার ঐতিহ্য সাদা পাথর বেঁচে কেউ পয়সা আয় করতো না! হতো না এমন হযবরল অবস্হা ! দেশ উপদেষ্টারা পরিচালনা করুক আর সেনাবাহিনী কতৃক পরিচালিত হোক, জনগন জীবন নিশ্চয়তা স্হির থাকতো, কেউ আর বলতো না "হাসিনা" আমলে ভালো ছিলাম!
ভালো থাকেন সুস্থ থাকেন নিজ দেশেকে ভালোবাসেন!