শেখ সাইফুল ইসলাম কবির
বাংলাদেশের গণমাধ্যম জগতে মফস্বল সাংবাদিকরা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের খবর, সমস্যাবলী, উন্নয়ন, দুর্নীতি কিংবা সামাজিক পরিবর্তনের চিত্র যাঁরা সামনে আনেন—তাঁরা অনেকেই মফস্বলের সাংবাদিক। তাঁদের শ্রম, সততা ও সাহসিকতা গণতন্ত্রের বিকাশে অনস্বীকার্য। তবে এই পেশায় কাজ করতে গিয়ে তাঁরা যে অসংখ্য প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন, তা আমাদের সবার উপলব্ধি করা দরকার।
সুযোগ-সুবিধা
১. স্থানীয় প্রভাব: মফস্বল সাংবাদিকেরা তাঁদের নিজ নিজ এলাকার বাস্তব চিত্র তুলে ধরার সুযোগ পান, যা জাতীয় গণমাধ্যমে স্থান পেলে অনেক বড় প্রভাব ফেলে।
২. গণসচেতনতা তৈরি: স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো কিংবা দুর্নীতি ইত্যাদি বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করে তাঁরা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে ভূমিকা রাখেন।
৩. জনসংযোগ ও নেতৃত্ব: মফস্বল সাংবাদিকদের অনেকেই তাঁদের এলাকায় সম্মানিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হন, ফলে স্থানীয় নেতৃত্বেও তাঁদের ভূমিকা থাকে।
অসুবিধা
১. নিরাপত্তার অভাব: প্রায়ই দেখা যায়, কোনো দুর্নীতি বা অপরাধমূলক কার্যকলাপ প্রকাশ করলেই মফস্বল সাংবাদিকরা হুমকি, হামলা বা মামলার শিকার হন। তাঁদের জন্য নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা।
২. আর্থিক সংকট: অধিকাংশ মফস্বল সাংবাদিক কোনো নির্দিষ্ট বেতন ছাড়াই কাজ করেন। কিছু প্রভাবশালী মিডিয়া হাউজ নামমাত্র সম্মানী দিয়ে তাঁদের কাজ করিয়ে নেন, অথচ তাঁদের জীবিকার নিশ্চয়তা দেয় না।
৩. প্রশিক্ষণের অভাব: অনেক সময় তাঁদের পর্যাপ্ত সাংবাদিকতা প্রশিক্ষণ থাকে না, ফলে প্রযুক্তিগত ও নীতিগত দিক থেকে তাঁরা পিছিয়ে থাকেন।
৪. স্বীকৃতির অভাব: জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাঁদের অবদান স্বীকৃত হয় না। অনেকেই আজীবন অচেনা থেকে যান, অথচ তাঁদের রিপোর্টে সমাজ বদলে যায়।
আমাদের করণীয়
১. ন্যায্য পারিশ্রমিক নিশ্চিত করা: সংবাদ সংস্থাগুলোর উচিত তাঁদের নিয়মিত পারিশ্রমিক ও প্রণোদনা প্রদান করা। চুক্তিভিত্তিক হলেও তাঁদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
২. প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন: সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে সাংবাদিকতা ও প্রযুক্তি বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. সাংবাদিক নিরাপত্তা আইন বাস্তবায়ন: সাংবাদিকদের সুরক্ষায় বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ ও নতুন আইন প্রণয়ন জরুরি, যাতে হুমকি-হামলার শিকার হলে দ্রুত বিচার নিশ্চিত হয়।
৪. স্বীকৃতি ও পুরস্কার: জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিকতা পুরস্কার প্রবর্তন করে তাঁদের কাজের মর্যাদা দিতে হবে।
উপসংহার
মফস্বল সাংবাদিকরা হচ্ছেন সমাজের দর্পণ। তাঁদের কলম থেমে গেলে অন্ধকারে ঢেকে যায় প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠ। তাই তাঁদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, নিরাপত্তা নিশ্চিত ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি সুশৃঙ্খল ও দায়িত্বশীল গণমাধ্যম ব্যবস্থা গড়ে তোলা আমাদের সবার কর্তব্য।
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির চেয়ারম্যান
জাতীয় মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটি ঢাকা।