আজ চিঠি দিবস। চিঠির কথা বললেই মনে পড়ে যায় সেই পুরনো দিনের কথা। যখন কোনো ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ বা ইমেইল ছিল না। সেকালে চিঠি ছিল প্রধান বাহন। দূর-দূরান্তে অবস্থানকৃত আত্মীয়-স্বজন কিংবা প্রেমিক প্রেমিকাকে নিজের মনের কথা বলার এক অন্যতম মাধ্যম ছিল চিঠি। চিঠি ব্যাপারটা আসলেই মনে করিয়ে দেয় আমাদের সেই উত্তরের আশায় কত কালের অপেক্ষা! বর্তমানে তো কেউ কাউকে কোনো কথা জানান দিতে চাইলে খুব দ্রুত দেওয়া যায়। কিন্তু প্রাচীন বা মধ্যযুগে কেউ জরুরি সংবাদ বা মনের ভাব দূরের আত্মীয়কে প্রকাশের জন্য চিঠির ব্যবহার করতে হতো। যুদ্ধে যাওয়া সেনাপতি যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত, এমন সময় সে যদি চিঠি পায় তার পরিবার থেকে কি অসাধারণ অনুভূতি।
আবার অনেকে তৎকালীন সময়ে বাণিজ্যের কাজে বিভিন্ন উপনিবেশিক এলাকায় যেত, এক দেশ থেকে অন্য অন্য দেশে চিঠি যেত। প্রাপক পরিবারের চিঠি পেয়ে নিশ্চয়ই অনেক খুশি হতেন। আবার কিছু দুঃখের সংবাদ পেলে প্রাপক সেখানে পৌঁছাতে পারতেন না ঠিকই কিন্তু আফসোস করতেন তার ভারাক্রান্ত হৃদয়ে। সুখ – দুঃখ ,আনন্দ -বিষন্ন এই অনুভূতিগুলোর প্রকাশ ঘটে চিঠি পড়ার মাধ্যমে। চিঠির মতো ছোট্ট কাগজে লেখনি হলেও তাতে জমা থাকে প্রেরকের মনের কথা। যা সহজেই প্রেরক ও প্রাপকের মনে ছাপ ফেলতে পারে। এই চিঠি ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। সেই প্রাচীন মেসোপটেমিয়া যুগ থেকে চিঠির চলন শুরু হয়। ডাকব্যবস্থা বা নিয়মিতভাবে চিঠি পৌঁছে দেওয়া শুরু হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৫৫০ সালের দিকে, তৎকালীন পারস্য সম্রাট দারিয়াস প্রথম-এর সময়। সেই প্রাচীন যুগ থেকে মধ্যযুগ বা মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগেও বার্তা বাহন অর্থাৎ চিঠির প্রচলন দেখা যায়। প্রাচীনকালে মৌর্য সাম্রাজ্যের সময় ভারতবর্ষের বাংলা অঞ্চলে চিঠির প্রচলন শুরু হয়। মধ্যযুগে মুসলিম শাসনামলে , আধুনিক যুগে অর্থাৎ ইংরেজ শাসনামলেও চিঠি ছিল যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। প্রিয়জনের কাছে মনের কথা পৌঁছানো হিসেবে চিঠি বেশ জনপ্রিয় মাধ্যম। আমাদের দেশের মাটিতে প্রথম ডাকঘর স্থাপন করা হয় ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ শাসন আমলে। প্রেরক ও প্রাপকের মাঝে যে ব্যক্তি চিঠি পৌঁছে দেন তাকে বলা হয় ডাক পিয়ন। প্রাচীনকালে তাদের বলা হতো (দূত, রাজদূত)-মধ্যযুগে বলা হতো (হরকরা, পেয়াদা)-আধুনিক কালে বলা হয়(ডাকপিয়ন বা ডাকবাহক) নামে। এই যুগের পর যুগ সময়ের পর সময় চলছে তবুও চিঠির সেই পুরনো স্মৃতি বা ইতিহাস আমাদেরকে চিঠির প্রতি মমত্ববোধ জাগিয়ে তোলে। প্রেরক যখন ডাকঘরে চিঠি পৌঁছে দেয় তখন তার মনে প্রাপকের প্রতি অপেক্ষার ছাপ লক্ষ্য করা যায়। প্রেরক ভাবে কখন সেই চিঠি তার প্রিয় প্রাপকের কাছে যাবে। প্রাপক যখন নিজের অজান্তেই চিঠি পেয়ে যায় তখন তার আনন্দের সীমা থাকে না। শুভজনক খবর হবে সে প্রচন্ড খুশি হয়। মাঝে মাঝে ভাবি কত যে সুন্দর সময় ছিল তখন-যখন একটি চিঠির জন্য অপেক্ষা করতে হতো ১ থেকে ২ মাস। আবার এমন ঘটনাও আছে প্রেরক চিঠি পাঠিয়েছিল সে চিঠি প্রায় ২ থেকে ৩ বছর পর প্রাপক হাতে পেয়েছিল। তবুও তাদের মনে এই চিঠির লেখা আবেগের কথা যেন আনন্দে ভরিয়ে দিত। এই চিঠির অপেক্ষায় কত প্রেমিক কত প্রেমিকা চেয়েছিল সময়ের দিকে। তারা অপেক্ষায় ছিল কখন আরেকটা চিঠি আসবে। আধুনিক যুগে এসেও এত এত প্লাটফর্ম সোশ্যাল মিডিয়া তারপরেও আমার সেই চিঠির প্রতি ভালোবাসা কমে নি। বরং আমার খুব শখ চিঠি পাওয়ার বা লেখার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে এ আধুনিক যুগে কেউ চিঠির অপেক্ষায় থাকেনা। তারা অপেক্ষায় থাকে মেসেজের রিপ্লাই কিংবা ভিডিও বা অডিও কল এর। চিঠি প্রচলন হয়তো মেসেজের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ বর্তমান যুগে, খাতা কলম দিয়ে লিখে চিঠি পাঠায় না কেউ। “এই মেসেজের রিপ্লাই পাওয়ার যুগেও আমার মতো অনেকেই চিঠি পাওয়ার অপেক্ষায় থাকবে।” আজ ১লা সেপ্টেম্বর চিঠি দিবস। চিঠি লিখুন, চিঠি পাঠান-আর চিঠির অপেক্ষায় থাকুন।