শেখ সাইফুল ইসলাম কবির
মানুষের জীবন আজ এক অদ্ভুত দোলাচলে দুলছে। আমরা জানি না আগামীকাল আমরা বেঁচে থাকব কি না, অথচ আমাদের চিন্তা—‘কাল কাকে ঠকানো যাবে’, ‘কীভাবে একটু বেশি সুবিধা আদায় করা যায়’, ‘কীভাবে অন্যকে পিছনে ফেলে নিজে এগিয়ে যাওয়া যায়’। এই চিন্তাগুলো যেন আমাদের নিত্যদিনের রুটিন হয়ে উঠেছে।
আমরা সময় ব্যয় করি হিসাব কষে, কে দুর্বল, কাকে ফাঁদে ফেলা যাবে, কার বিশ্বাসকে পুঁজি করে নিজের লাভ নিশ্চিত করা যাবে। অথচ খুব কম মানুষই ভাবছে, “আমার আচরণে কেউ কষ্ট পাচ্ছে কি না”, অথবা “আমার এই সিদ্ধান্ত আগামী প্রজন্মের জন্য ক্ষতিকর কি না।”
কেন এমন হচ্ছে?
এর পিছনে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে:
নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়
অতিরিক্ত প্রতিযোগিতার সংস্কৃতি
সামাজিক এবং অর্থনৈতিক চাপ
স্বল্পমেয়াদি লাভের প্রতি লোভ
সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, এই অবস্থা আমরা জানি, বুঝি—তবুও বদলাতে চাই না। আমরা ভাবি, ‘আমি না ঠকালে আমাকেই ঠকাবে।’ এই মানসিকতা আমাদের এক গভীর অনৈতিক চক্রে ফেলে দিচ্ছে, যেখানে পরস্পরের প্রতি আস্থা, শ্রদ্ধা, সহমর্মিতা—সব কিছুই হারিয়ে যাচ্ছে।
সমাধান কী?
সমাধান হয়তো কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। আমাদের প্রয়োজন:
আত্মসমালোচনার সাহস
নৈতিকতা ও মূল্যবোধে ফিরে যাওয়া
সততার চর্চা—ছোট জায়গা থেকে শুরু করে
শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিকতা অন্তর্ভুক্ত করা
অন্যের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করার চর্চা (Empathy)
শেষ কথা
আমরা যদি আমাদের চিন্তার কেন্দ্রে শুধু নিজেকে না রেখে, পুরো সমাজ, মানবতা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রাখি—তাহলে হয়তো ‘কাকে ঠকানো যায়’ এই চিন্তাটা হারিয়ে যাবে। তার জায়গায় আসবে ‘কাকে সাহায্য করা যায়’, ‘কে বিপদে আছে’, ‘আমি কীভাবে একজন ভালো মানুষ হতে পারি’—এই প্রশ্নগুলো।
জীবন ক্ষণস্থায়ী, কাল বাঁচব কি না জানি না—কিন্তু আজ যদি নৈতিকভাবে সঠিক পথে চলি, তাহলে হয়তো কালটা একটু সুন্দর হবে, আমাদের সবার জন্য।
—
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির চেয়ারম্যান
জাতীয় মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম কেন্দ্রিয় কমিটি ঢাকা।