লেখকঃ ইঞ্জিঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম
বাবা তার বিসিএস পরীক্ষা রত কন্যাকে নিয়ে ঢাকা শহরে ছুটে এসেছেন, কারন তার মেয়েকে বেড়ানোর কথা বলে জামাই বাবাজী শ্বশুর বাড়ী রেখে এসেছেন! আসার আগে মা বড় ভাই মিলে পরামর্শ করে স্ত্রী কে একটা ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে এসেছেন! ডিভোর্সের কারন হিসাবে দেখিয়েছেন, "স্ত্রী অবাধ্য"! পিছনের রহস্য হলো, " পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক প্রাপ্তি সম্পন্ন হয় নাই এবং স্ত্রী বিসিএস হোক তা পরিবার থেকে মেনে না নেওয়া!
স্বামী ঢাকা শহরে একটা ব্যক্তি মালিকানাধীন ফার্মে চাকুরী করেন! আহা মরি তেমন কিছু না! গায়ের রং ব্লাক ডায়মন্ড! আবার একখানা কন্যা সন্তান জন্ম দিয়ে ফেলেছেন! বয়স মাস ছয় মাস!
ছয় মাসের অবোধ শিশুকে কোলে নিয়ে পিতার সাথে ছুটে এসেছেন উচ্চ শিক্ষিত বধূটা তার অপরাধ জানতে! অসহায় শিশুর মত অসহায় মেয়ের বাবা! কি করবেন দিশেহারা! মেয়ে বুদ্ধি করে সবুজবাগ থানায় হাজির হয়ে আমার সহধর্মিণী কে ফোন করেছেন ওসি সাবের সাথে একটু কথা বলে দিতে! ঢাকায় প্রশাসনিক সাহায্য করে তেমন কেউ নাই! আমার সহধর্মিণী কথা বলার পর একটু গার্জেন সাপোর্ট পেয়ে ওসি সাব ফোন দিলেন ছেলেটাকে তার অফিসে! থানার ফোন না বুঝেই রিসিভ করলেন কৃতি পুরুষ "বর"! ওসি সাব বললেন, " তোমার তালাকের কারন যথেষ্ট নয়, আর আমরা জোর করে সংসার করাবো না, মামলা হয়েছে, Warrant already been issued. তুমি এসো, তোমার সন্তান নিয়ে যাও, যৌতুকের টাকা নিয়ে যাও, চেহারাটা দেখায় যাও, তোমার সন্তান এই মহিলা লালন পালন করলে ৮ বছর পর্যন্ত আইন মত খোরপোশ দাও, স্ত্রীর কাবিনের টাকা সাথে নিয়ে এসো এবং তিন মাসের খরপোশ! ফোন কেটে দিয়ে বীরপুরুষ বর লাপাত্তা!
বাসায় পৌঁছালে আমি নিজে যেয়ে অসহায় মেয়েটার সাথে কথা বললাম! অবুঝ শিশু নিজেই জানে না তার ভাগ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে? আমাকে পেয়ে শিশু টা খাতির জমিয়ে নিলো, দারুন হাসছে, আমাকে ধরতে চাচ্ছে! আমি মেয়েটাকে বললাম, ওসি সাহেব কে বলে, একটা warrant কপি তোমার গ্রামের উপজেলা ওসিকে পাঠায় দাও, আগে গ্রেফতার হোক মা ভাই যারা যৌতুকের জন্য তালাকে উদ্বুদ্ধ করেছে! তারপর এমন ইডিয়টের সাথে সংসার করবা কিনা পরে বুঝে দেখো! তুমি না পারলে আমি বা তোমার আন্টি কথা বলতে প্রস্তুত! তবে তুমি মনে রেখো, একদিন তুমি ম্যাজিস্ট্রেট হবে, you can do your job alone! মেয়েটা এগিয়ে গেলো! ওসি সাব আমার পরিচিত নয়! তবুও ভালো মানুষ মনে হলো! তিনি বুদ্ধি দিলেন! আমরা তোমাকে সর্বাত্মক আইনের সহায়তা দেবো, তুমি তোমার স্বামীর ভাড়া বাসা থেকে অন্যত্র চলে যাও তানা হলে উল্টো সে মামলা করবে, "আমার বাসা থেকে ৫ লাখ টাকার ক্যাশ স্বর্নলংকার চুরি করে নিয়ে গেছে!
মেয়েটা তড়িঘড়ি করে বাচ্চা টা বুকে চেপে এবং অসহায় বাবাকে সাথে নিয়ে রওয়ানা হলো আমার বাসা থেকে নিরুদ্দেশের পথে! Devils always look for safety ! আমার সহধর্মিণী কে মেয়েটা জানিয়েছে, " আন্টি, আমার ভাসুর ফোন করে বলেছেন, তুমি দেশে চলে এসো, ও পাগলের মত কি করেছে, আবার মামলার কি দরকার, আমরা ফয়সালা করে দিচ্ছি! উল্লেখ্য এই ভাসুর এবং শ্বাশুড়ি বিসিএস করার ঘোরতর বিরোধী এবং যৌতুকের বড় গ্রাহক!আমার সহধর্মিণীর কাছে বধূটা সবসময় তার কষ্টগুলো শেয়ার করতো!
প্রিয় পাঠক, এদেশে নারী কে, কবে মানুষ ভাবা হবে! কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা কবে যৌতুকের বলি থেকে রেহাই পাবে! অবশ্য নারী কতৃক পুরুষ নির্যাতন এবং পুরুষ কতৃক নারী নির্যাতন অভাব নাই! এমন কি মেয়ে বিয়ের পর তার আর তেমন সুখ দূঃখের খোঁজ নেয় না এমন পিতা বা পিতার অবর্তমানে বড় ভাইদের অভাব নাই! এসব ব্যতিক্রমি পরিবার বাদ দিলে এখন ও স্বামী নির্ভরশীল নারীর সংখ্যা ৬০/৭০ শতাংশ! অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা নারী দাসত্বের বড় কারন!
আবার সেচ্ছায় পুরুষ দাসত্ব আনন্দ অনুভব করে সারাজীবনের আয় পুরুষের হাতে তুলে দিয়ে সন্তানের গলগ্রহ নারীর সংখ্যা কম না! তবুও বলবো প্রায় ২০০ বছর আগে ঝাঁসির রানী লক্ষ্মী বাঈর ইতিহাস লিখতে যেয়ে কর্নেল ম্যানসন লিখেছেন তার বই, দি হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়ান মিউটিনিটি তে, তিনি আলাদা ভাবে লক্ষ্মী বাঈকে নিয়ে বলেছেন, "Jhansi Rani Laxmibai is an example among whole women nation, the peoples of India would remember her Heroism FOR ever. She is still alive, she devoted her life for her mother land !
গতকাল আমার প্রবন্ধেের মুখ্য ভূমিকার নারী যদি ভাবতো, আমি শেখ বংশের মেয়ে লোক জানাজানি হলে ইজ্জত চলে যাবে, আমার সহধর্মিণী যদি ভাবতেন, আমি সৈয়দ বংশের মেয়ে কেন অহেতুক থানায় কথা বলা, অথচ এমন ঘটনায় সামান্য সমর্থন না দেয়ায় মেকি বংশের ইজ্জত রক্ষায় কত কাপুরষ পুরুষ কে দেখেছি নিজ বোনের পিছে না দাড়ানোতে সেই নারী জীবন বরবাদ হয়ে গেছে! খোঁজ ও নেয় নি আপন জনেরা! অবশ্য সৃষ্টি কর্তা তাদের দাড় করিয়ে দিয়েছেন, এখন ভিন দেশে বসবাস করে ও সেই আপন জনের ফোন পান!
ভালো থাকেন সুস্থ থাকেন নিজ দেশকে ভালোবাসেন। ঈশ্বর জীবন দিয়েছেন, আমি আমি আমি এই ব্যক্তিকেন্দ্রিক বংশপরম্পরায় বাঁচার জন্য না, আল্লাহ চেয়েছেন, "আমি তুমি সে' নিয়ে দুনিয়ার জীবন কাটাতে। যদি আপনার সরিষা পরিমান সাপোর্ট কারো ক্ষুদ্র উপকার হয়, এগিয়ে যান!