আয়শা সিদ্দিকা সাথী, খুলনা থেকে:
খুলনা আর্ট একাডেমির ঐতিহ্য সংরক্ষণশালায় আশির দশকের এক মূল্যবান নিদর্শন‘লোহার আয়রন’ উপহার দিলেন কবি ও গীতিকার মোঃ জাবেদুল ইসলাম। তিনি আলো মিডিয়া গ্রুপের সদস্য। লেখালেখির সূত্রেই তার সঙ্গে চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাসের পরিচয় ঘটে। সেই থেকে খুলনা আর্ট একাডেমির কার্যক্রম দেখে তিনি অভিভূত হন।লালমনিরহাট জেলার রমনীগঞ্জ, বড়খাতা হাতীবান্ধা মোঃ জাবেদুল ইসলামের জন্মস্থান। সেখানকার ঐতিহ্যের স্মৃতি মনে রেখেই তিনি এই আয়রনটি সংরক্ষণশালায় উপহার দেন। একসময় বিদ্যুৎবিহীন গ্রামীণ জীবনে পোশাক ইস্ত্রির জন্য মানুষের ব্যবহার্য ছিল এই লোহার আয়রন। চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস অনলাইনে একসময় পোস্ট করেছিলেন, খুলনা আর্ট একাডেমির সংরক্ষণশালার জন্য কোন কোন সামগ্রী প্রয়োজন। সেই তালিকা দেখে মোঃ জাবেদুল ইসলাম আলো মিডিয়া গ্রুপের কাছে জানান, তিনি কিছু উপহার দিতে চান। অবশেষে ১১ই সেপ্টেম্বর, আলো মিডিয়া গ্রুপের প্রতিষ্টাতা পরিচালক সাংবাদিক ও সংগঠক আহমেদ হোসাইন ছানু ভাইয়ের মাধ্যমে তিনি লোহার আয়রনটি খুলনা আর্ট একাডেমিতে পাঠান। এই উপহার পেয়ে চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস গভীর আনন্দ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন এভাবে সবাই যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, তবে সংরক্ষণশালা একদিন সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের ভাণ্ডারে পরিণত হবে।”খুলনা আর্ট একাডেমি ২০০৩ সাল থেকে প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাসের হাতে পরিচালিত হচ্ছে। শুধু ছবি আঁকা নয়—এখানে সংগীত, আবৃত্তি, হাতের লেখা, চারুকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সহায়ক প্রশিক্ষণসহ শিশুদের মানুষ গড়ার শিক্ষা দেওয়া হয়। পাশাপাশি সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে সমাজের মানবিকতা ও অসঙ্গতিগুলোও তিনি তুলে ধরছেন। সম্প্রতি তিনি প্রতিষ্ঠিত একাডেমিতে একটি জাদুঘর গড়ে তুলেছেন, যেখানে সংরক্ষিত হচ্ছে দেশের হারিয়ে যাওয়া নানান ঐতিহ্য। এর মধ্যে রয়েছে কৃষকের ব্যবহৃত টুপরি,ঘরামি কাজে ব্যবহৃত কাঠ ছিদ্র করার কূণ,গ্রামীণ প্রদীপ রাখার দেউরী,এমনকি প্রায় ১৫০ ধরনের প্রাচীন সামগ্রী। ঐতিহ্য সংরক্ষণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে মিলন বিশ্বাস বলেন“আমি একজন চিত্রশিল্পী। আমি যদি শুধু অন্যদের মতো চলি, তবে আমার সাধনার বিশেষত্ব থাকবে না। নিত্যনতুন সৃষ্টি করে সমাজকে কিছু উপহার দেওয়াই আমার ধর্ম। আমি বিশ্বাস করি শরীরের ঘাম কখনো বেইমানি করে না।তিনি আরও জানান, ২০২৫ সালের ৭ই মে যমুনা টিভি তার জীবন ও কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করেছে। এজন্য তিনি যমুনা টিভির খুলনা ব্যুরো প্রধান প্রবীর বিশ্বাসসহ পুরো যমুনা টিভি পরিবারকে কৃতজ্ঞতা জানান। নিজের শৈশব স্মৃতির প্রতি গভীর অনুরাগ থেকেই তিনি ঐতিহ্য সংরক্ষণে নিবেদিত। মিলন বিশ্বাসের ভাষায় “আমরা শৈশবে যা দেখেছি, তা আজ অনেকটাই হারিয়ে যাচ্ছে। তাই আমি চেষ্টা করি ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে লালন করে শিল্পচর্চা চালিয়ে যেতে।লোহার আয়রনটি উপহার দিয়ে কবি ও গীতিকার মোঃ জাবেদুল ইসলাম বলেন আমাদের নবীন প্রজন্ম এ ধরনের জিনিস দেখে আনন্দ উপভোগ করবে এবং শিখবে।”
এই অনন্য উদ্যোগ ইতোমধ্যেই খুলনার সাংস্কৃতিক মহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।