শেখ সাইফুল ইসলাম কবির
পৃথিবীর আলোয় আমরা সবাই সমানভাবে জন্মাই। সূর্য যখন উঠে, তার কিরণ ধনী-গরিব সবাইকে স্পর্শ করে সমানভাবে। কিন্তু বেঁচে থাকার লড়াই, জীবনের প্রতিটি ধাপে যে সংগ্রাম—তা কখনোই সমানভাবে ভাগ হয়নি। সমাজের একপাশে যেখানে রাজপ্রাসাদ, অন্যপাশে সেখানে খোলা আকাশের নিচে একটুকরো ছেঁড়া চাদরই কারো একমাত্র আশ্রয়।
একটি শিশু মায়ের কোলে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে। শিশুটির মুখে প্রশান্তির ছোঁয়া, চোখে এক নির্ভরতার ছবি আঁকা। অথচ সেই মা, যিনি নিজের দেহের উষ্ণতায় সন্তানকে আগলে রেখেছেন, তিনি নিজেই ঘুমোচ্ছেন খোলা আকাশের নিচে। মাটিই তার বিছানা, আর কোনো পুরোনো কাপড় তার বালিশ। চারপাশে কোলাহল, অভাব, দারিদ্র্য, অনিশ্চয়তা আর ভয়—এই সবকিছু নিয়েই তাদের প্রতিটি দিন শুরু হয়, আর শেষ হয় আরো অন্ধকারে।
এই দৃশ্য কোনো সিনেমার অংশ নয়, এটা আমাদের আশেপাশেরই বাস্তবতা। ফুটপাতে, রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে, পার্কের এক কোনায়—সেখানে বসবাস করে সমাজের সেই মানুষগুলো, যাদের কথা আমরা খুব কমই ভাবি। আমরা ব্যস্ত নিজেদের জীবন নিয়ে, লক্ষ্য পূরণের দৌড়ে, উন্নয়নের গল্পে। কিন্তু এই উন্নয়নের বাইরের মানুষগুলোর গল্পগুলো ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিদিন হাজারো শিশু ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যায়। তাদের ছোট ছোট পেটগুলো চিৎকার করে খাবারের জন্য, কিন্তু তারা জানে না, সেই খাবার আদৌ মিলবে কিনা। হাজারো মা চোখের কোনায় জল লুকিয়ে ভবিষ্যতের একটুখানি আশার খোঁজ করেন। হয়তো পরের দিন সন্তানকে একটু ভালো কিছু খাওয়াতে পারবেন, অথবা একটু নিরাপদ ছায়া জোগাড় করতে পারবেন। অথচ বাস্তবতা বলে, আশার থেকেও কষ্ট এখানে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক।
আমাদের সমাজ যদি সত্যিই সভ্য হয়, তবে এই বঞ্চিত মানুষগুলোর জন্যও তো সামান্য ভালোবাসা, নিরাপত্তা, ও সহানুভূতির জায়গা থাকা উচিত। উন্নয়নের সংজ্ঞা তখনই পূর্ণতা পায়, যখন সেটি সবাইকে ছুঁয়ে যায়—শুধু উচ্চবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্তকে নয়, পথের ধারে থাকা সেই ক্ষুধার্ত শিশুকেও।
আমরা যদি একটু এগিয়ে আসি, একটু ভালোবাসা বিলিয়ে দিই, একটু সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিই—তবে হয়তো কারো রাতের অন্ধকার একটু হলেও আলোকিত হতে পারে। একটুখানি খাবার, একটি গরম কাপড়, একটি আশ্রয়ের ব্যবস্থা—এই সামান্য বিষয়গুলোই কারো জীবনে আশার আলো হয়ে উঠতে পারে।
শেষ কথা, সমাজের প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা সেই মানুষগুলোর দিকে আমরা যতটা সম্ভব নজর দিই। কারণ সত্যিকার সভ্যতা পরিমাপ করা হয়, সমাজ কতটা পিছিয়ে পড়া মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে পারে, তার ভিত্তিতে।
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির চেয়ারম্যান জাতীয় মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম কেন্দ্রিয় কমিটি ঢাকা।