শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:১১ অপরাহ্ন

সুন্দরবনের উপকূলের মোরেলগঞ্জে সুপারির বাম্পার ফলন ১৬ কোটি টাকার সুপারি উৎপাদন

Coder Boss
  • Update Time : শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৬ Time View

এস. এম সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি:

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল মৎস্যভান্ডার নামে খ্যাতবিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলেরসুপারির জন্য বিখ্যাত উপকূলীয় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা। এ উপজেলার লোকজনের সারা বছরের আয়ের বড় অংশ আসে সুপারি বিক্রি থেকে। প্রতি বছরই এখান থেকে প্রচুর পরিমাণে সুপারি সারাদেশে ছড়িয়ে যায়। এ বছর সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে।এতে এ বছর ১৬ কোটি টাকার সুপারি উৎপাদন হয়েছে। এ উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সুপারির ফলন ভালো হয়। তবে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে সুপারির বাজারদর কম থাকায় হতাশ মোরেলগঞ্জের কৃষক, গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

কালের বিবর্তনে ধান, পান হারিয়ে গেলেও লাভজনক কৃষিপণ্য হিসেবে স্থান পেয়েছে সুপারি। মোরেলগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপক হারে সুপারির চাষ হয়ে আসছে। এখনকার সুপারী মানে ভাল বলে সুপারীর বাণিজ্যিক বাজার গড়ে উঠেছে।

স্থানীয় সুপারি ব্যবসায়ীদের থেকে জানা যায়, মোরেলগঞ্জ পৌরসভা ও উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের সবকটিতেই উৎপাদন হয় সুপারির। একসময় সারাদেশে সরবরাহ করা হতো মোরেলগঞ্জর সুপারি। তবে সেই অবস্থা না থাকলেও এখনো প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে সুপারি মোরেলগঞ্জ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। তবেএ বছর সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, সুপারী একটি অর্থকরী ফসল। আপদকালীন সময়ে সুপারি বিক্রি করে সংসারের চাহিদা মিটছে অনেক কৃষকের। সুপারির চাষ লাভজনক হওয়ায় অনেকেই এখন সুপারি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার পাকা ও শুকনো সুপারি কেনা-বেচা হয় মোরেলগঞ্জ। ফলে এখানে গড়ে উঠেছে সুপারীর বাণিজ্যিক বাজার।

উপকূলে সুপারীর সবচেয়ে বড় মোকাম মোরেলগঞ্জ। সুন্দরবনের উপকূলের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মোরেলগঞ্জ উপজেলা১৬টি ইউনিয়নের থেকে ব্যবসায়ীরা সুপারী নিয়ে বিক্রির জন্য মোরেলগঞ্জ শহরে গড়ে উঠা সুপারির হাটে আসেন। এখানে প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও শুক্রবার দুই দিন সুপারীর হাট বসে।

তবে শুকনো সুপারির পিক মৌসুম ফাল্গুন থেকে আষাঢ় পর্যন্ত এবং কাঁচা সুপারীর পিক মৌসুম শ্রাবণ থেকে পৌষ পর্যন্ত। এ সময় বেশির ভাগ সুপারি ক্রয়-বিক্রয় হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সুপারি কিনে ভারতসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান। আবার দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরাও এখানে আসেন সুপারি কিনতে।মোরেলগঞ্জ থেকে নিয়মিত সুপারি সংগ্রহ করেন। এখান থেকে প্রায় প্রতিদিন ট্রলার ও ট্রাক বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায় সুপারি।

মোরেলগঞ্জবাজারের সুপারি ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের ফরাজী, আব্দুল হালিম ফরাজী, বাদশা মিয়া,সোহরাব হোসেন মোহন বলেন,মোরেলগঞ্জে প্রতি হাটে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার পাকা ও শুকনো সুপারির কেনা-বেচা হয়। প্রতি বছর এই মৌসুমে বিভিন্ন হাট থেকে সুপারি কিনে মজুদ করে থাকে। শুকিয়ে ও পানিতে ভিজিয়ে সুপারি সংরক্ষণ করা হয়। পরে তা দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। এ সুপারি এলসির মাধ্যমে ভারতে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, গত মৌসুমে সুপারীর দাম ছিল অনেক ভালো। তবে এবার সুপারীর দাম বাড়তির দিকে। বর্তমান মৌসুমে ২১ ঘা (২১০টি) এক কুড়ি কাঁচা সুপারির মূল্য শ্রেণীভেদে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত মৌসুমের তুলনায় অনেক বেশী।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মাটি এবং আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এ কারণে এখানকার সুপারি আকারে অনেক বড় এবং সুস্বাদু হয়।বলেন, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সুপারিগাছে ফুল আসে। সেই ফুল থেকে সুপারি হয়।

এ বছর উপজেলার সুপারি বাগানের মালিকরা সঠিক সময়ে সঠিক পরিচর্যা করায় সুপারির এমন ফলন হয়েছে। এ উপজেলায় ৬০০ থেকে৭০০ টন সুপারি উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এর বাজারমূল্য ১৬ কোটি টাকার বেশি হবে। বাজারে কাঁচা-পাকা সুপারির দাম না থাকায় গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হতাশায় ভুগছেন। তবে আশ্বিন-কার্তিক মাসে চাষি ও গৃহস্থরা দাম বেশি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এই সুপারি কিনে ৬০ শতাংশ পানিভর্তি পাত্রে ভিজিয়ে রাখেন। ৪০ শতাংশ সুপারি দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ ও রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। এ বছর কাঁচা-পাকা সুপারির দাম কম হওয়ায় হতাশ কৃষক, গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102