শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৪ পূর্বাহ্ন

যোগ্যতা নিয়ে কারো জন্ম হয় না, নিজের যোগ্যতা নিজেকেই তৈরি করতে হয়

Coder Boss
  • Update Time : শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৩৩ Time View

 

শেখ সাইফুল ইসলাম কবির

মানুষের জীবনে সফলতার চাবিকাঠি হলো যোগ্যতা। এটি এমন একটি গুণ, যা মানুষকে শুধু নিজের জীবনে নয়, সমাজ ও জাতির জন্যও মূল্যবান করে তোলে। তবে একটি বড় সত্য হলো—কেউই জন্মসূত্রে যোগ্য হয়ে আসে না। জন্মের পর মানুষ যেমন ধীরে ধীরে হাঁটতে শেখে, কথা বলতে শেখে, তেমনি যোগ্যতাও শেখা, গড়ে তোলা এবং অর্জন করার বিষয়। একজন মানুষ নিজের পরিশ্রম, অধ্যবসায়, ধৈর্য এবং মানসিক শক্তির মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তোলে, নিজের যোগ্যতাকে নির্মাণ করে।

জন্ম ও যোগ্যতার পার্থক্য:

একটি শিশু যখন জন্ম নেয়, তখন তার মধ্যে কোনো তৈরি করা যোগ্যতা থাকে না। সে তখন নির্ভরশীল, অসহায়। কিন্তু এই অসহায় শিশুই ধীরে ধীরে হাঁটতে শেখে, পড়তে শেখে, জীবনের নানা দায়িত্ব নিতে শেখে এবং একসময় নিজের পেশাগত জীবনে দক্ষতা অর্জন করে। অতএব, জন্মের সাথে যোগ্যতার সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। যোগ্যতা কখনো জন্মগত নয়, এটি একটি ক্রমাগত আত্মউন্নয়নের ফল।

যোগ্যতা অর্জনের উপায়:

যোগ্যতা অর্জন করা একদিনের কাজ নয়। এটি ধাপে ধাপে অর্জিত হয়। একটি শিশুকে যেমন হাঁটতে শেখার জন্য পড়ে যেতে হয়, আবার উঠে দাঁড়াতে হয়, তেমনি একজন মানুষকে জীবনে বহুবার ব্যর্থতার মুখোমুখি হতে হয় যোগ্যতা অর্জনের পথে।

যোগ্যতা অর্জনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো:

পরিশ্রম: কোনো লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে নিয়মিত পরিশ্রম করতে হয়। পরিশ্রম ছাড়া অর্জন সম্ভব নয়।

অধ্যবসায়: অনেক সময় আমরা বারবার ব্যর্থ হই, কিন্তু হাল না ছেড়ে বারবার চেষ্টা করে যেতে হয়।

আত্মবিশ্বাস: নিজের উপর বিশ্বাস না থাকলে কেউ কখনো নিজের সর্বোচ্চটুকু দিতে পারে না।

নিয়মিত শিক্ষা ও চর্চা: যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেকে গড়ে তোলা এবং শিখতে থাকা অপরিহার্য।

সময় ব্যবস্থাপনা: সঠিকভাবে সময়কে কাজে লাগাতে না পারলে যোগ্যতা অর্জন ব্যাহত হয়।

বাস্তব উদাহরণ:

পৃথিবীতে বহু বিখ্যাত ব্যক্তি রয়েছেন, যারা প্রথম জীবনে ছিলেন একেবারে সাধারণ বা দরিদ্র। তাদের মধ্যে কেউ কেউ শ্রমিকের কাজ করেছেন, কেউ রাস্তায় গান গেয়েছেন, কেউবা দিনের পর দিন ক্ষুধার্ত থেকেছেন—কিন্তু একসময় তারা হয়ে উঠেছেন বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তি।

ডঃ এ পি জে আব্দুল কালাম, ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, যিনি ছোটবেলায় খবরের কাগজ বিলি করতেন। পরবর্তীতে তিনি বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী ও রাষ্ট্রনায়ক হয়েছিলেন। তাঁর এই অর্জনের পেছনে ছিল অক্লান্ত পরিশ্রম ও অধ্যবসায়।

অ্যলবার্ট আইনস্টাইন, যিনি ছোটবেলায় বলা হত ‘বুদ্ধিহীন’, স্কুলে খুব ভালো করতেন না। কিন্তু তিনিই পরবর্তীতে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠেন।

হেলেন কেলর, জন্ম থেকেই অন্ধ ও বধির ছিলেন। কিন্তু তিনি পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন বিশ্বব্যাপী প্রেরণার উৎস।

সমাজে এর গুরুত্ব:

যদি আমরা বিশ্বাস করি যে শুধুমাত্র জন্মসূত্রে কেউ যোগ্য, তাহলে সমাজে একটি বড় বৈষম্য তৈরি হয়। ধনী পরিবারে জন্মানো মানেই যোগ্যতা আছে—এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। এই ভুল ধারণা থেকেই সমাজে হতাশা, আত্মসম্মানবোধের অভাব এবং অগ্রগতির পথে বাধা তৈরি হয়। প্রত্যেক মানুষই যদি বিশ্বাস করে যে সে নিজে নিজের যোগ্যতা গড়ে তুলতে পারে, তাহলে একটি জাতি গড়ে উঠবে আত্মনির্ভর ও আত্মবিশ্বাসী নাগরিকদের দ্বারা।

উপসংহার:

শেষ কথা হলো, জন্ম নয়, পরিশ্রম, ধৈর্য এবং অধ্যবসায়ই একজন মানুষকে গড়ে তোলে। যোগ্যতা অর্জন একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা ধৈর্য ও নিষ্ঠার মাধ্যমে গড়ে উঠে। তাই যারা আজ অসফল, তাদের উচিত নিজের ওপর বিশ্বাস রাখা এবং ক্রমাগত নিজেকে গড়ে তোলা। আপনি যদি চেষ্টা করেন, পরিশ্রম করেন, নিজের ভুল থেকে শিখেন — তাহলে আপনিও হবেন একজন যোগ্য, সফল মানুষ।

মনে রাখবেন, “যোগ্যতা নিয়ে কেউ জন্মায় না, নিজের যোগ্যতা নিজেকেই তৈরি করতে হয়।” আর এই কাজটাই জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন।

শেখ সাইফুল ইসলাম কবির চেয়ারম্যান জাতীয় মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম কেন্দ্রিয় কমিটি ঢাকা।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102