রাশেদ ইসলাম, জয়পুরহাট:
বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্তবর্তীকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুহতারাম সিনিয়র নায়েবে আমীর শায়েখে চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম কাসেমী অভিযোগ করেছেন, যে নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে জাতির প্রত্যাশা পূরণ করার কথা ছিল, সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে বর্তমান অন্তবর্তী সরকার। শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় জয়পুরহাট শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জেলা ইসলামী আন্দোলনের আয়োজনে এক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, অন্তবর্তী সরকার এখন একটি নির্দিষ্ট দলের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। এতে তারা নিরপেক্ষতা হারাচ্ছে এবং জনগণের আস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পিআর বা প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন অর্থাৎ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিচ্ছেন তাদের যুক্তি দুর্বল। বিশ্বের বহু গণতান্ত্রিক দেশে পিআর পদ্ধতি কার্যকরভাবে চালু রয়েছে এবং বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে এই পদ্ধতিই হতে পারে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান।
গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ। এ সময় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর আল্লামা আব্দুল হক আজাদ, জেলা জামায়াতের আমীর ফজলুর রহমান সাঈদ এবং ইসলামী আন্দোলন জেলা শাখার সেক্রেটারি মাওলানা মুহাম্মদ নাজমুল হাসান মাহমুদ। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি চালু করা হলে ছোট-বড় সব রাজনৈতিক দল সংসদে তাদের আসন নিশ্চিত করতে পারবে, ফলে ভোটের মূল্য বাড়বে এবং রাজনৈতিক ভারসাম্য তৈরি হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসলামী আন্দোলনের এই বক্তব্য বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন করে গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ নির্বাচন ঘিরে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অবস্থান মুখোমুখি। এর মাঝে পিআর পদ্ধতির মতো একটি বিকল্প প্রস্তাব রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তাদের মতে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হলে শুধু নিরপেক্ষ সরকার নয়, একটি কার্যকর নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তন করাও জরুরি। আর এই প্রেক্ষাপটেই চরমোনাই পীরের বক্তব্য রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও তীব্র করেছে।
অন্তবর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা ও পিআর পদ্ধতি চালুর দাবি এখন কেবল ইসলামী আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; বরং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে এটি আগামী জাতীয় রাজনীতির অন্যতম আলোচিত ইস্যু হয়ে উঠতে পারে। জয়পুরহাটের গণসমাবেশ তাই জাতীয় রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করল বলেই মনে করছেন সবাই।