
খুলনা প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন, খুলনা আঞ্চলিক শাখা কর্তৃক আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫। প্রতিযোগিতায় খুলনা আর্ট একাডেমির শিশু শিল্পী যাহরুন বর্ষাকালের দৃশ্য অঙ্কন করে তৃতীয় স্থান অর্জন করে। সে খুলনা জোহরা খাতুন শিশু বিদ্যানিকেতনের প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।যাহরুন তার অর্জিত পুরস্কার নিয়ে খুলনা আর্ট একাডেমিতে এলে প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস আনন্দিত হন। তিনি তাৎক্ষণিক উপস্থিত অভিভাবকদের নিয়ে এই প্রাপ্তি উপলক্ষে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিএল কলেজের অধ্যাপক কমলেশ বালা, প্রাইমারি স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোঃ আলাউদ্দিন সরদার এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট আতিয়া রহমান পিয়া। তাঁরা সবাই শিশুদের ছবি আঁকার উপকারিতা তুলে ধরেন এবং খুলনা আর্ট একাডেমির শিক্ষা ব্যবস্থার প্রশংসা করেন।এ সময় চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস সম্মানিত অভিভাবকদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান। যাহরুন সম্পর্কে তিনি বলেন “আমাদের প্রতিষ্ঠানের গর্ব যাহরুন। আমি কৃতজ্ঞ যাহরুনের পিতা-মাতার প্রতি, কারণ তারা পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সন্তানকে যুক্ত রেখেছেন। এত অল্প বয়সে যাহরুন ইতোমধ্যে ৬৯টি পুরস্কার অর্জন করেছে।”এই খবর শুনে উপস্থিত সকলে যাহরুনকে নিয়ে প্রশংসা করেন।পরে খুলনা আর্ট একাডেমির পরিচালক আদিত্য পালের মাকে বক্তব্য রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। তিনি বলেন “আমি রূপসা নদীর ওপার কাজদিয়া থেকে ছেলেকে নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানে আসি। এজন্য নানান জনে নানান কথা বলে, কিন্তু আমি কারও কথায় কান দিই না। আমার ছেলে স্যারকে খুব পছন্দ করে এবং স্যারের নির্দেশনা মেনে চলার চেষ্টা করে। আমার ছেলেও এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার পুরস্কার অর্জন করেছে।স্যারও আদিত্যকে খুব ভালোবাসেন। গত এক বছরে স্যারের আন্তরিকতা ও শিশুদের নিয়ে কার্যক্রম আমার কাছে অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তাই আমরা সব সময় খুলনা আর্ট একাডেমির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে আমাদের সন্তানকে আদর্শ শিক্ষায় গড়ে তুলতে চাই।”সবশেষে যাহরুনের মা খুলনা আর্ট একাডেমি সম্পর্কে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন “আমি এখানে ভর্তি করানোর পর থেকে আমার মেয়ে অনেক পুরস্কার অর্জন করেছে। আমরা হঠাৎ করেই বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছি। অনেক সময় রাতে হঠাৎ করে স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ছবি দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করেছেন। আমি মনে করি, শিক্ষার্থীদের প্রতি এভাবে যত্নশীল থেকে কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা সত্যিই বিরল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানে সন্তানকে পড়াতে পেরে খুবই আনন্দিত।স্যার সব সময় বলেন ‘ছবি আঁকতে হয় জ্ঞান অর্জনের জন্য, মার্কসের জন্য নয়।’ আমি এই কথার সঙ্গে একমত। আমার মেয়ে বৃত্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য গত দুমাস ছবি আঁকার ক্লাসে ঠিকমতো আসতে পারেনি, ফলে তার পড়াশোনার অবনতি হয়। আমরা খুব দিশেহারা হয়ে পড়ি। তখনই স্যারের সেই কথাটি মনে পড়ল ‘ছবি আঁকায় মেধা বিকশিত হয়।’ আবার যখন নিয়মিত ক্লাসে আসা শুরু করল, তখন থেকেই পড়াশোনারও উন্নতি ঘটতে শুরু করেছে। তাই আমি চাই স্যারের দিকনির্দেশনায় আমার সন্তান বড় হয়ে উঠুক।”চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন “আপনার মতো অভিভাবকরা আমাদের প্রতিষ্ঠানে থাকলে এই প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও সম্মান আরও বৃদ্ধি পাবে।”পরিশেষে চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস যাহরুনকে প্রাপ্ত সনদপত্র ও মেডেলসহ কোলে তুলে নেন এবং উপস্থিত সবার কাছে তার জন্য আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন“খুলনা আর্ট একাডেমির সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন, সবাই মামনির জন্য শুভকামনা করবেন যেন সে পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিভা ধরে রাখতে পারে। আমাদের জন্যও দোয়া করবেন, যেন প্রতিটি শিশু শিল্পীকে আমরা এভাবেই লালন-পালন ও অনুপ্রেরণা দিতে পারি।”সবশেষে যাহরুনের নিয়ে আসা কেক ও হালকা নাস্তা পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।