স্টাফ রিপোর্টার:
বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন রশীদ বলেন, নির্বাচন নিয়ে ক্রমশঃ জনগণের মধ্যে সংশয়-সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে। তাই অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত নির্বাচন যথাসময়ে সুসম্পন্নকরণে যাতে প্রতিবদ্ধকতা সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য জরুরী।
তিনি আরো বলেন, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন ও জুলাই বিপ্লবের সাংবিধানিক স্বীকৃতি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতানৈক্য ও দূরত্ব সৃষ্টির সুযোগে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের পুনরুত্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে কিনা তাও ভাবা দরকার।
তিনি আজ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা শাখার যৌথ প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন।
দলের মহানগর শাখার সভাপতি মুহাম্মদ রিয়াজুল আনোয়ার চৌধুরী সিন্টুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন দলের মহাসচিব বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ কাজী আবুল খায়ের।
তিনি সভায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম- ৯ সংসদীয় আসনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি মুহাম্মদ রিয়াজুল আনোয়ার চৌধুরী সিন্টুকে হারিকেন প্রতীকে দলের সংসদ সদস্য প্রার্থী ঘোষণা করেন।
তিনি আরো বলেন, ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন বাংলা বিহার উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নওয়াব সিরাজুদ্দৌলাহ্'র প্রধান সেনাপতি মীর জাফর আলী খানের বিশ্বাসঘাতকতায় পলাশীর যুদ্ধে নওয়াবের পরাজয় ও শাহাদাতের মধ্যদিয়ে ভারতবর্ষের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ইংরেজ বেনিয়াদের দখলে চলে যায়। তখন থেকে দীর্ঘ ১৮০ বছর এ দেশের জনগণকে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বৃটিশ শাসন ও শোষনের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয়। এতে ভারতবর্ষের অসংখ্য প্রতিবাদী মানুষকে জীবন দিতে হয়। ফলে বৃটিশ শাসনের অবসান ও অখন্ড ভারতের স্বাধীনতা এবং ভারতবর্ষে মুসলমানদের পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক দাবী তীব্রতরের এক পর্যায়ে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট নিখিল ভারত মুসলিম লীগের নেতৃত্বে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে মুসলিম অধ্যুষিত পশ্চিম ও পূর্ব দু অঞ্চলের সমন্বয়ে 'পাকিস্তান' রাষ্ট্র স্বাধীন হয়। ১৫ আগস্ট অন্যান্য রাজ্যগুলোর সমন্বয়ে 'ভারত' রাষ্ট্র স্বাধীন হয়। তখন থেকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ব্যবস্থা, খাদ্য উৎপাদন ও কর্মসংস্থান তথা শিল্পকারখানা গড়ে উঠে। তবে পূর্বপাকিস্তানের অধিবাসীদের মাতৃভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও বিভিন্ন বিষয়ে বিমাতাসূলভ আচরণের প্রতিবাদ-সংগ্রামের এক পর্যায়ে 'সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার' প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। তখনকার সময়ের মুসলিম লীগ স্বাধীন পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার পক্ষ অবলম্বন করলেও ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাপ্রধানের আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে 'বাংলাদেশ'-এর স্বাধীনতা অর্জিত হয়। তখন বাস্তবতার নিরিখে স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা ও সংবিধানের আলোকে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের জনকল্যাণকর রাজনীতির ঐতিহ্য বিকশিত হয়ে আসছে।
দলের মহাসচিব আরো বলেন, মুসলিম লীগের দাবীতে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের স্বাধীনতা অর্জন না হলে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি হত না।
কথিত ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনপরবর্তী রাষ্ট্রীয়ভাবে মুসলিম ইতিহাস-ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার পাঠ্যপুস্তকে ইসলামীপাঠ, পরিভাষা ও সংস্কৃতির পুনপ্রবর্তন এবং ভারতীয় আগ্রাসন প্রতিরোধে রাজনৈতিক অঙ্গনে যুগপৎ ভূমিকায় ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ১৯৭৬ সালে পুনর্গঠিত মুসলিম লীগের ঐতিহাসিক ভূমিকা ও ঐতিহ্য তুলে ধরে এবং চট্টগ্রাম ৯ আসনে দলের মনোনীত প্রার্থীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মানবাধিকার গবেষক মাওলানা মুহাম্মদ জহুরুল আনোয়ার, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ফয়সাল চৌধুরী, অতিরিক্ত মহাসচিব মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান, উত্তর জেলা শাখার সভাপতি লায়ন সিএসকে সিদ্দিকী, দক্ষিণ জেলা শাখার সভাপতি মোহাম্মদ লিয়াকত আলী, এবি পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক, নেজামে ইসলাম পার্টির চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আনোয়ার হোসাইন রাব্বানী, মুসলিম লীগ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি এসএম সিরাজুদ্দৌলাহ্, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ আনিসুর রহমান আমান, শাহযাদা মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ গোলাম রসুল, মাস্টার কুতুব উদ্দিন প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন এসএম আবু তালেব, মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও শাহেনা বেগম পান্না।