লেখকঃ ইঞ্জিঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম
বিশ্বে যখন মাত্র ২৫ কোটি মানুষ ছিলো তখন "চেঙ্গিস খান" ৪ কোটি মানুষ হত্যা করেছিলেন! তিনি আজ পৃথিবীতে নাই কিন্তু মানুষ হত্যা কি বন্ধ হয়েছে! ধর্মীয় ভাগাভাগি হত্যা বাড়িয়েছে নিষ্ঠুর ভাবে! লক্ষ্য করুন, গত দুই বছরে ফিলিস্তিনে প্রায় ৬৬ হাজার মুসলমান হত্যা করেছে ইসরায়েল। কেন আমাদের বিশ্ব মুরব্বি আমেরিকার কোন মায়া হয় নাই, কারন গাজার জনগন খৃষ্টান নয় মুসলমান! কেউ কেউ বলে থাকেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যত মানুষ মরেছে (প্রায় ৮ কোটি) তত পরিমান মানুষ আমেরিকার হাতে জীবন দিয়েছে তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদে শুধু ভু-রাজনৈতিক কারনে এবং মার্কিন আধিপত্য বিস্তারের জন্য!
প্রিয় পাঠক, আমার বিষয় ১৯৭৪ সালে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ! ততকালীন বাংলাদেশ সরকার প্রধান "মুজিব" আমেরিকা থেকে খাদ্য কেনেন! খাদ্য যথারীতি জাহাজে লোড হয়! বাংলাদেশের বৈদেশিক রিজার্ভ একদম শূন্য! তিনি ছুটছেন বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতি আদায় করতে, জাতিসংঘের সদস্য হতে, ওআইসির সদস্য ততদিনে হয়ে গেছেন! তিনি রপ্তানি বাড়াবার চেষ্টা করে যাচ্ছেন! সোনালি আশ সেই পাটের মিল গুলো উৎপাদন করে যাচ্ছে কিন্তু বাজারজাতকরণের বেশ অসুবিধা। কিছু কিছু দেশ তখন বাংলাদেশ পন্য কেনে, সবাই স্বতঃস্ফূর্ত নয়! আমেরিকা পাট কলগুলো বন্ধ করে দিতে বলে ছিল, মুজিব তা শোনেন নাই!
তিনি কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রোর কাছে কয়ক লাখ পাটের বস্তা বিক্রি করলেন এবং বেশ কিছু বৈদেশিক রিজার্ভ বাড়লো! ততদিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ভর্তি জাহাজ বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করেছে! বাংলাদেশে কোন খাদ্য অভাব হওয়ার কথা নয়!
যুক্তরাষ্ট্র নাখোশ হলো, কেন কিউবার কাছে পাটের বস্তা বিক্রি করলেন "মুজিব"! মার্কিন বিদেশ মন্ত্রী কিসিঞ্জার বঙ্গোপসাগর থেকে সব কয়টা খাদ্য জাহাজ ফেরত নিয়ে গেলেন! কেনা খাদ্য, মূল্য পরিশোধ করা খাদ্য, ফেরত নেয়া আইনসিদ্ধ ছিলো না! দুর্বল বাংলাদেশ প্রতিবাদ করতে পারলো না, এদিকে দেশে অতিবৃষ্টিতে বন্যা চলছে, ঢাকা শহর পানির নিচে! মুজিব বেরিয়ে পড়লেন খাদ্য জোগাড় করতে, তিনি ভারত রাশা যুগোস্লাভিয়া ছুটলেন! মার্শাল টিটো তাকে খাদ্য দিলেন কিন্তু লোডিং আনলোডিং সহ শত প্রসেসিং করতে যে সময় নিলো তাতে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিলো! দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হলো! মারা গেলো বেশকিছু মানুষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে!
পাঠক, তখন স্বাধীনতা বিরোধী ও চৈনিকরা দারুন বাংলাদেশ বিরোধী ছিলো। লক্ষ্য করুন সংযুক্ত ক্যাপশনের দিকে, এই ক্যাপশনের কালো বৃদ্ধ মহিলা ১৯৭৪ সালের যৌবনে পদার্পণ করা এক নারী, যার নাম ছিলো " বাসন্তী"! বাসন্তী ছিলেন কুড়িগ্রামের চিলমারীর জেলে পাড়ার পল্লীর এক ষোড়শী! একজন আফতাব সাহেব তাকে "নাইলন জাল" পরিয়ে ছবি তোলেন, সাথে সাংবাদিক ছিলেন "কবির" সাহেব। তারা ১৯৭৪ এর দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা দেখাতে নারীরা শাড়ী কিনতে না পেরে জাল পরিধান করছে এমনটা বুঝাতে ছবিটা পত্রিকায় দেন! সম্ভাবত এনায়েত উল্লাহ খানের "হলিডে" সাপ্তাহিকে ছবিটা প্রথম ছাপা হয়!
স্মর্তব্য, তখন এদেশে নাইলন সূতা আমদানি হতো না বিদেশ থেকে নাইলন জাল আসতো। মূল্য পড়তো বাংলাদেশের ততকালীন তিনশো টাকা! তখন একটা শাড়ীর মূল্য ছিলো ৩ টা, মধ্যবিত্তরা ৫/৭ টাকার শাড়ী পরতেন! যে পরিবার তিন টাকার শাড়ী কিনতে পারে না তারা নাইলনের জাল কিভাবে কিনলো এবং "বাসন্তী" আব্রু বাঁচাতে নাইলনের জাল পরিধান করলো পরিবারের মাছ ধরা রুটিরুজি বন্ধ রেখে?
এমনি বৃহৎ শক্তি থেকে দেশীয় ষড়যন্ত্রের শিকার ছিলো বাংলাদেশ তার জন্ম লগ্ন থেকে! বাসন্তীর ছবি দেশবিদেশি পত্রিকায় ছাপা হয়েছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা কে অকার্যকর করার জন্য! বাংলাদেশের সরকার গুলো বার-বার জনগণের রোষে উৎখাত হয়েছে তা বিষয় না কিন্তু "স্বাধীনতা" যে কোন দেশের গর্বের বিষয়! বিশ্বের বৃহৎ শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বৃটিশ শাসনে ছিলো, ৪ ঠা জুলাই ১৭৭৬ সালে স্বাধীনতা পেয়েছে, জাতির জনক জর্জ ওয়াশিংটন!
ক্যাপশনের বাসন্তী এখনও বেঁচে আছেন। তাকে নিয়ে একটা মোহড়া সাজানো হয়েছিলো অন্য বাড়ী থেকে নাইল জাল এনে তা তার চাচা স্বীকার করেছিলেন!