মোঃ রায়হান পারভেজ নয়ন
ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় বেওয়ারিশ কুকুরের বেপরোয়া চলাচল এখন জনদুর্ভোগের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো দুর্ঘটনার খবর আসছে। বিশেষ করে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক
উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ব্যবসায়ীরা দিনের বেলায় দোকান সামলালেও গভীর রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার সময় কুকুরের ভয়ে আতঙ্কে থাকেন। ইতোমধ্যেই একাধিক ব্যবসায়ী কুকুরের তাড়া খেয়ে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। কারও মাথায় আঘাত লেগেছে, আবার কেউ হাত-পা ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ কারণে অনেক ব্যবসায়ী অন্ধকার হওয়ার আগেই বাজার ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
ডিমলা বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন,
রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরতে গেলে অন্তত ১০-১২টা কুকুর রাস্তা ঘিরে ধরে। কয়েকদিন আগে আমাদের এক সহকর্মী কুকুরের তাড়া খেয়ে বাইক থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন। এরপর থেকে আমরা সবাই আতঙ্কে থাকি।
শিক্ষার্থীরাও ঝুঁকিতে
ডিমলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরাও একই পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন। সকালে স্কুলে যাওয়া কিংবা কোচিং থেকে ফেরার সময় পথ আটকাচ্ছে দলবদ্ধ কুকুর। একাধিক শিক্ষার্থী কুকুরের কামড়ে আহত হয়ে ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছে। ফলে অভিভাবকরা সন্তানদের একা বাইরে যেতে দিতে ভয় পাচ্ছেন।
ভ্যাকসিনের সংকট
এদিকে কুকুরের কামড়ে আহতদের জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়, সেটিতেও দেখা দিয়েছে সংকট। স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে আহতরা সঠিক সময়ে ভ্যাকসিন না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন।
ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন কর্মকর্তা বলেন,
আমরা চেষ্টা করি যেন কুকুরের কামড়ে আসা প্রত্যেক রোগী ভ্যাকসিন পায়। কিন্তু সরবরাহ সংকটের কারণে অনেক সময় চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। বিষয়টি আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
জনমনে ক্ষোভ ও দাবি
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ বলছেন, কুকুরের উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ইতোমধ্যেই ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও পথচারীরা প্রতিদিন আতঙ্ক নিয়ে চলাফেরা করছেন। সাধারণ মানুষ মনে করছেন, প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদ দপ্তর যৌথভাবে দ্রুত উদ্যোগ না নিলে এ সমস্যা আরও ভয়াবহ রূপ নেবে।
স্থানীয় একজন শিক্ষক আব্দুলাহ আল বাবলু বলেন,
শিশুরা এখন আর নিশ্চিন্তে খেলতে পারে না। স্কুলে যেতেও ভয়ে থাকে। এটা শুধু স্বাস্থ্য ঝুঁকি নয়, মানসিক ভয়েরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ
ডিমলা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান, শিগগিরই কুকুর নিয়ন্ত্রণ ও টিকাদান কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে স্থানীয়দের সচেতনতাও জরুরি।
সচেতন মহল বলছে, মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে অবিলম্বে বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কোনো আহত ব্যক্তি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হন।
তবে বেশি ভাগ ক্ষেত্রে রাতে কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছে যা নিয়ে অসম্ভব চিন্তিত বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা।