নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা থেকে আগত চিত্রশিল্পী দীপংকর বৈরাগী বর্তমানে ঢাকা নেভী অ্যাংকরেজ স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমির প্রশিক্ষক। তিনি খুলনা আর্ট কলেজে পড়াকালীন সময়ে চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাসের ছোট ভাইয়ের সহপাঠী ছিলেন। খুলনা আর্ট কলেজ থেকে বেরিয়ে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলায় গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে ঢাকায় কর্মজীবন শুরু করেন। পূজা উপলক্ষে ছুটিতে খুলনায় এসে তিনি চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করেন। শিল্পচর্চা নিয়ে আলাপচারিতার সময় দীপংকর বৈরাগী প্রস্তাব দেন“দাদা, আগামীকাল সকালবেলা চলুন সেনহাটি যাই, কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের পৈতৃক ভিটা থেকে ঘুরে আসি।”খুলনা দৌলতপুর সেনহাটি কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের জন্ম ১৮৩৪ মৃত্যু ১৩ই জানুয়ারি ১৯০৭ সাল।এসময় বর্ণমালা হ্যান্ডরাইটিং একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ধনঞ্জয় রায়ও খুলনা আর্ট একাডেমিতে উপস্থিত হন। তিনজন মিলে সিদ্ধান্ত নেন সকাল ৯টায় কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের পৈতৃক ভিটা পরিদর্শনে যাবেন। দৌলতপুর নদী পার হয়ে তারা ভ্যানে রওনা দেন। পথে যেতে যেতে কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার সম্পর্কে আলোচনা করতে করতে পৌঁছান কৃষ্ণচন্দ্র ইনস্টিটিউটের সামনে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন, প্রতিষ্ঠানটি তালাবদ্ধ।স্থানীয়রা জানান, সামনেই শিববাড়ি মন্দিরের সামনে কবির সমাধি রয়েছে, আর মন্দিরের পিছনে রয়েছে কবির পৈতৃক ভিটা। তবে সেখানে পৌঁছে তারা কবি সম্পর্কে তেমন তথ্য সংগ্রহ করতে পারেননি। জানা যায়, কবির পুরোনো বাড়িটি সংস্কার করে বর্তমানে সেখানে নতুন বাড়ি নির্মিত হয়েছে। একটি দেয়ালের সামান্য অংশই কেবল পুরোনো দিনের সাক্ষী। আরও তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তারা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তাদের খোঁজ নিতে চেষ্টা করেন। তখন সবাই পরামর্শ দেন কুন্ডুপাড়ার কাঞ্চন দত্তের সঙ্গে দেখা করতে।ঠিক তখনই ইনস্টিটিউটের সামনে দেখা হয় সেনহাটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক ইংরেজি শিক্ষক (২০০৭ সালে অবসরপ্রাপ্ত) জগদীশ চন্দ্র দাশের সঙ্গে। তিনি তাদের কাঞ্চন দত্তের বাড়ি পর্যন্ত একটি অটোতে তুলে দেন এবং আন্তরিকভাবে বলেন, “আপনারা একটি মোবাইল নাম্বার দিয়ে যান, আমি কিছু তথ্য পেলে জানাবো।” এ সময় চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস তাকে নিজের ভিজিটিং কার্ড তুলে দেন।অবশেষে তারা কাঞ্চন দত্তের বাড়ি পৌঁছান। বাড়িটি ছিল সবুজে ঘেরা, শান্ত পরিবেশে ভরা। কাঞ্চন দত্তের সহধর্মিণী আন্তরিকভাবে অতিথিদের বসার জন্য অনুরোধ করেন, যদিও তারা বাইরের পরিবেশ ঘুরে দেখতে ব্যস্ত ছিলেন। মিলন বিশ্বাস মন্তব্য করেন, “বর্তমানে বৃক্ষ যেভাবে নিধন হচ্ছে, এই বাড়িটি দেখে মনে হচ্ছে তারা সমাজ ও পরিবেশবান্ধব জীবনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।”পরে কাঞ্চন দত্ত স্বয়ং তাদের সামনে আসেন। আলাপচারিতায় তিনি জানান, বাড়িটি তার দাদু তৈরি করেছিলেন। দাদু সরকারি চাকরিতে ছিলেন (নায়েব পদে), কলকাতা থেকে কয়লা এনে মাটি কেটে এই ভিটাটি গড়ে তুলেছিলেন। পরে তার বাবা বিনয় ভূষণ দত্ত দৌলতপুর বীণাপাণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে এখানে জীবন কাটান। বর্তমানে ৭৪ বছর বয়সী কাঞ্চন দত্ত এই ঘরেই বসবাস করছেন।তিনি আরও জানান, কর্মজীবনে তিনি খুলনার জুট মিলে দুইটি ইঞ্জিনের দায়িত্ব পালন করতেন। আলাপে এক পর্যায়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে জানান, তার একমাত্র সন্তান ডিপ্লোমা শেষ করলেও এখনও কোনো চাকরি পায়নি। এই কথা শুনে তিনজনই ব্যথিত হন। দীপংকর বৈরাগী প্রতিশ্রুতি দেন ছেলের জন্য চেষ্টা করবেন, আর ধনঞ্জয় রায় আশ্বাস দেন হতাশ হবেন না, নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তা একটা ব্যবস্থা করবেন।” তিনজনই নিজেদের ভিজিটিং কার্ড কাঞ্চন দত্তকে দেন।পরে তারা পুনরায় কবি কৃষ্ণচন্দ্র ইনস্টিটিউটে ফিরে আসেন। স্থানীয় এক দোকানদারের সহায়তায় যোগাযোগ হয় ইনস্টিটিউটের দায়িত্বপ্রাপ্ত শেখ মোহাম্মদ আলী মিন্টুর সঙ্গে, যিনি প্রাক্তন মেম্বার ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। তিনি আন্তরিকভাবে এসে তাদের ইনস্টিটিউটের ভেতরে প্রবেশ করান।কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেখানে কবির একটি ছবি আর কয়েকটি আসবাব ছাড়া প্রায় কিছুই সংরক্ষিত ছিল না। তিনি জানান, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট কে বা কারা ইনস্টিটিউট থেকে মূল্যবান বইপত্র ও তথ্য লুটপাট করে নিয়ে যায়। তবুও তিনি আশা প্রকাশ করেন শিগগিরই এখানে নতুনভাবে উদ্যোগ নেওয়া হবে।অবশেষে সবাই মিলে কবির ছবির সামনে একটি স্মৃতিময় ছবি তোলেন ২ অক্টোবর ২০২৫-এ। দিনশেষে দুইজন ভালো মানুষের সঙ্গে সময় কাটিয়ে আনন্দে তারা খুলনার উদ্দেশ্যে ফিরে আসেন।চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস শেষে বলেন“কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের সংরক্ষিত কোনো তথ্য কারো কাছে থাকলে দয়া করে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক খুলনা আর্ট একাডেমি 01716570062